করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনে মারাত্মক প্রভাব পরেছে দেশের বৃহত্তম ভাসমান ঝালকাঠির ভীমরুলির পেযারার হাটে। কৃষকরা বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে আসলেও ক্রেতার অভাবে পানির দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এর ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতির সন্মুখিন হচ্ছেন তারা। জেলার ব্রান্ডিং এ পণ্যটি সুস্বাদু হওয়ায় সারা দেশে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে প্রচুর। তবে এ বছর লকডাউনের কারণে পর্যটক এবং পাইকার কম আসায় পেয়ারার দাম অর্ধেকে নেমে এসেছে। থাইল্যান্ডের ফ্লটিং মার্কেট কিম্বা কেরালার ব্যাক ওয়াটার ডিপের মত ঝালকাঠির পেয়ারা, আমড়া, লেবু কিম্বা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শাক-সব্জী ক্রয়-বিক্রয়কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম ভীমরুলীর ভাসমান হাট। সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের ভীমরুলী নদীর উপর গড়ে ওঠা এ হাট সারা বছরই থাকে ক্রেতা-বিক্রেতায় সরগরম। পেয়ারা, আমড়া, লেবু ছাড়াও বারো মাস নিজেদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বেচা-কেনা করেন এই অঞ্চলের কমপক্ষে ২০টি গ্রামের কৃষকরা। পেয়ারার মৌসুমকে কেন্দ্র করে আষাঢ় থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত বাজারটি থাকে ব্যাপক সরগরম। এ সময় ক্রেতা-বিক্রেতা ছাড়াও দেশী-বিদেশী অসংখ্য পর্যটকে ঠাসা থাকে পেযারহাট এবং আশে-পাশের এলাকা। কিন্তু এবছর করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের প্রভাব পড়েছে এই হাটের ওপর। পাইকার না আসায় উৎপাদিত পেয়ারা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। বরিশাল বিভাগের ঝালকাঠি সদর, বানারিপাড়া ও পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি উপজেলার চারটি ইউনিয়ন জুড়ে রয়েছে প্রায় তিনশ বছরের পুরানো বিশাল সুমিষ্ট দেশী পেয়ারা বাগান। চাষীরা ছোট-ছোট নৌকায় করে বাগান থেকে পেয়ারা সংগ্রহ করে হাটে নিয়ে আসেন, আর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকাররা তা কিনে ট্রলার কিম্বা ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন মোকামে নিয়ে যায়। এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের প্রভাবে পাইকার ও পর্যটক কোনটারই তেমন দেখা মিলছেনা। কৃত্তিপাশাএলাকার পেয়ারা চাষি রবি সিকদার জানান, গত বছর এই সময়ে প্রতিমণ পেয়ারা ৪’শ থেকে ৫’শ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ বছর লকডাউনের কারণে তেমন পাইকার ও পর্যটক না আসায় ২’শ টাকা দরে প্রতিমণ পেয়ারা বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে লেবার খরচ দিয়ে কৃষকের তেমন একটা লাভ থাকছেনা। ভিমরুলীর ভাসমান বাজারে পেয়ারা কিনতে আসা পাইকার নির্মল বড়াল বলেন, প্রতিবছর ঝালকাঠির পেয়ারার বেশ চাহিদা থাকলেও এবার লকডাউনের কারণে দেশের বিভিন্ন বাজার ও মোকামে ক্রেতা সমাগম কম থাকায় বিক্রির পরিমান অনেকটাই কমে গেছে। এ কারণে আমার বেশি পেয়ারা কিনতে পারছিনা। জেলার কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ঝালকাঠিতে এবছর ৮শ হেক্টর জমিতে পেয়ারা আবাদ করা হয়েছে যা থেকে ৯ হাজার ৬শ মেট্রিক টন পেয়ারা উৎপাদিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী বলেন, পেয়ারা ও শীতলপাটি এ জেলার ব্যান্ডিং পণ্য। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনে জেলার এ পণ্যটি পরিবহনে যাতে কোনো ধরনের সমস্যার সৃষ্টি না হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে।