শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০২:৩৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::

হীড-এর ছোঁয়ায় স্বাবলম্বী রাহেলার পরিবার

কামাল ইয়াসীন ব্যুরো চীফ রাজশাহী :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩ আগস্ট, ২০২১

সিলেটের ফেন্সুগঞ্জ উপজেলার ঘিলাছড়া ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রামের নাম “আশিঘর”। গ্রামটি চা-বাগানের সবুজ সমারোহে ভরপুর। সেখানে প্রায় ২৫০টি পরিবারের বসবাস। চা-বাগানসহ কৃষিকাজে ব্যস্ত সবাই। শিক্ষার আলো তেমন ভাবে না পৌছলেও সেই অবহেলিত গ্রামে আর্তমানবতার সেবাই নিয়োজিত বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা “হীড বাংলাদেশ” ভাটেরা শাখা পরপর দু-দুটি সমিতি গঠন করে সুবিধা বঞ্চিতদের মাঝে সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে আসছে।
১) ফাল্গুণী মহিলা সমিতি (জাগরন) ২) বৈশাখী মহিলা সমিতি (বুনিয়াদ)। সেই গ্রামেরই এক হতভাগিনী রাহেলা বেগম। সাংসারিক জীবনে স¦াবলম্বী হওয়ার আশায় স্বপ্নের বাসা বাঁধে রাহেলা। স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বামীকে সৌদি-আরব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। শুধু তাই নয়, ২০১৫ইং শেষের দিকে সহায় সম্বল বিক্রি করে স¦ামীকে সৌদি-আরব পাঠায়। নতুন ভাবে বিপাকে পড়ে যায় পরিবারটি । অভাবগ্রস্ত হলে এমনিতেই পাশ থেকে সবাই দুরে থাকার চেষ্টা। এলাকায় সহযোগীতার মনোভাব নেই কারো মাঝে কিন্তু এদিকে রাহেলা অভাবগ্রস্ত হলেও অন্যের কাছে হাত পাতার মন মানষিকতা বা অভ্যাস ছিল না। কঠোর পরিশ্রমের মাঝে তার ধ্যান ধারনায় একই স্বপ্ন, যে কোন ভাবেই হোক বৈধ পথে স¦াবলম্বী তাকে হতেই হবে। ্গরু-ছাগল পালনের পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল তার। ঐ মূহুর্তে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর সামর্থ ছিল না। হঠাৎ একদিন ছাগল খাওয়ানোর উদ্দেশ্যে ঘাস কাঁটতে যায় রাহেলা। লক্ষ্য করে বেশ কিছু সদস্য পাশবই হাতে নিয়ে কিস্তি নিয়ে যায়। আস্তে আস্তে সমিতির কাছে উপস্থিত হয় রাহেলা। লক্ষ্য করে হীড বাংলাদেশ, ভাটেরা শাখার ক্রেডিট অফিসার মমতা রানী সিনহ্ াসদস্যদের উদ্দেশ্যে উন্নয়ন ও শিক্ষামূলক আলোচনা করে। মনোযোগ দিয়ে আলোচনা শোনে, খুব ভয়ে ভয়ে সমিতির সদস্য হওয়ার কথা সভানেত্রীর কাছে প্রকাশ করে। রাহেলা অভাবগ্রস্ত হওয়ায় সভানেত্রী যেন তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে। বিষয়টি ক্রেডিট অফিসার লক্ষ্য করে এবং রাহেলাকে ডেকে কাছে বসতে বলে। সরলতার হিমেল হাওয়ায় ভরা রাহেলার মুখে ”হাসি”। মমতা রানী সিনহ্ াজানত “যে হাসিতে বাঁশি বাজে নিশ্চয় সে হাসি নিরাপদ”। রাহেলার আচার-আচরন ও ব্যবহারে মনের দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে ক্রেডিট অফিসার। ঐদিনের মতো রাহেলাকে ফিরিয়ে দিল মমতা। ভাবনার বিষয় রাহেলাকে সদস্য হিসেবে ভর্তি নেওয়া যাবে কি না ? সকলকে নিয়ে ভর্তির বিষয়ে আলোচনা করে, সদস্যদের অধিকাংশই রাহেলার ভর্তি বিষয়ে অসম্মতি কিন্তু মমতার চাকুরীর বয়স ২১ বছরের উর্দ্ধে। বাস্তব অভিজ্ঞতায় পিছিয়ে ছিলনা মমতা। শেষ পর্যন্ত নিজ উদ্দ্যোগে ভর্তি নেয় রাহেলাকে। সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী গাভীপালন প্রকল্পে ১ম দফায় আসল ২০০০০/= (বিশ হাজার) টাকা ঋণ প্রদান করে। ভর্তি নিয়ে সদস্যেদের অসম্মতি ছিল বুঝতে বাকি ছিল না রাহেলার। মমতা রানী সিনহ্রা মানবতার কাছে মনের দিক দিয়ে পরাজিত হয়নি রাহেলা। স্বামীও ঠিক তারই মতো সাদা মনের মানুষ। স্বামী বেতন পাওয়ার পর নিজ খরচ রেখে অবশিষ্ট টাকা পাঠিয়ে দেয় রাহেলার কাছে। অন্যদের মতো রঙে ব্যস্ত না থেকে ঠিক-ঠাক মতো টাকা গুলি ব্যবহার করতো। রাহেলার প্রথম কাজ ছিল সঞ্চয়সহ হীড বাংলাদেশের মাসিক কিস্তি প্রদান। রাহেলার আচার-আচরন ও লেনদেনে ছিল ভিন্নতা। ১ম দফা ঋণ পরিশোধ, ২য় দফায় আবারও গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পে ২৫০০০/= (পঁচিশ হাজার) টাকা ঋণ গ্রহন করে নিয়মিতভাবে ঋণ পরিশোধ হয়, মাঝে কিছু সময় ঋণ মুক্ত অবস্থায় থেকে নিয়মিত সঞ্চয় প্রদান করে। এরই মাঝে তার স্বামী ২০২০ইং সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ০৬ মাসের ছুটিতে বাড়ি আসে। মার্চ মাসের ২৬ তারিখ থেকে দেশে নভেল করোনা ভাইরাস জনিত কারনে শুরু হয় লকডাউন। শত চেষ্টা করেও কর্ম ক্ষেত্রে যেতে ব্যর্থ রাহেলার স্বামী। আবারও রাহেলার সুখের সংসার বুঝি মোড় নিল অন্য দিকে। তবুও মনের দিক দিয়ে ভেঙ্গে পড়েনি সে। রাহেলা মূর্খ হলেও জানত “ঝড়” বেশি সময় থাকে না। এ ঝড়কে মোকাবেলা করাটাই রাহেলার জীবনে দ্বিতীয় এবং সর্বশেষ বড় পরীক্ষা। স্বামী-স্ত্রী উভয় মিলে সিদ্ধান্তের দ্বার প্রান্তে পৌছে। বিদেশ না গিয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে বাকি জীবনটা দেশেই কাটাবে। সিদ্ধান্তে অটল। বিপদ মুহুর্তে ঋণের শেষ আশ্রয়স্থল চিনতে ভুল করেনি তারা। রাহেলা ও তার স্বামী উভয়ে মিলে উপস্থিত হয় ”হীড বাংলাদেশ” ভাটেরা শাখায়, উপস্থাপন করে তাদের সমস্যার কথা। যেহেতু আচার-আচরন ও লেনদেনে ভাল সদস্য ছিল রাহেলা,তাই ভর্তি ও ঋণ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করল না শাখা ব্যবস্থাপক। কারন বিপদ গ্রস্ত সদস্যদের পুনঃ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে  LRL ( Livelihood Restoration Loan ) ঋণ প্রদানের সুযোগ তো আছেই।
রাহেলাকে খজখ ঋণ প্রদান করা হয় ৩৫০০০ (পঁয়ত্রিশ হাজার ) টাকা। ঋণের টাকা পেয়ে কিনে ফেলল চোখে না পড়ার মত হাড্ডি সার একটি গরু। গরু মোটাতাজাকরন পদ্ধতি অবলম্বন করে এবারে ঈদুল আযহা”য় বিক্রি হয় ৬৪০০০ (চৌষট্টি হাজার ) টাকায় ০৩ মাসের ব্যবধানে লাভ হলো ২৯০০০ (উনত্রিশ হাজার) টাকা, এখানেই ক্ষান্ত নয় আরো ০২ টি গরু বিক্রি করে যথাক্রমে ৭৩০০০ ও ৪০০০০ মোট ১৪৮০০০ (একলক্ষ আটচল্লিশ হাজার) টাকায় বিক্রি করে মোট লাভ করে বিরাশি হাজারের একটু বেশি। বাড়িতে আছে ০৩ টি গাভী, প্রতিদিন দুধ দেয় ৮/১০ কেজি, খরচ বাদে বাড়ি নিয়ে আসে ৫০০/৬০০ টাকা। এছাড়াও বর্তমানে তার বাড়ি আছে মোট ১৩ টি গরু। যেগুলোর বর্তমান আনুমানিক মুল্য ১০/১১ লক্ষ টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে ২০হাজার টাকা বর্তমানে ১০/১১ লক্ষ টাকায় রুপান্তরীত হওয়ায় হাসি-খুশিতে ভরপুর রাহেলার পরিবার। মাছে ভাতে বাঙ্গালী। কোন মতে তরকারী ভাত যোগান ছিল তার পরিবারের জন্যই যথেষ্ট। হীডের ছোয়ায়, চেষ্টা ও মানবতায় স্বাবলম্বী হয় রাহেলার পরিবার। এক পর্যায়ে রাহেলার পরিবার স্বাবলম্বীর ইতিহাস জানতে চাইলে, দু-চোখ দিয়ে অঝোরে জল ফেলে বলে ” স্যার আমার কিছুই না, সবই হীড বাংলাদেশের,সবই মমতা আপার অবদান। সৃষ্টিকর্তার দোয়ায় হীড বাংলাদেশের অছিলায় আমি এখন অন্ততঃ ০১ (এক) টাকাও অন্য কোথাও ঋণ করিনা। বরং পারলে আমি অন্যদের সহযোগীতা করি। তাই আমার মত অসহায় লাখো রাহেলার পাশে দাঁড়িয়ে স্বাবলম্বী করানোর জন্য হীড বাংলাদেশ সংস্থার সকলের প্রতি রইল শুভেচ্ছা ও শুভকামনা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com