শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:২৮ অপরাহ্ন

বঙ্গবন্ধুর সময়োচিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে বঙ্গমাতার পরামর্শ আন্দোলনে গতির সঞ্চার করেছিল : প্রধানমন্ত্রী

বাসস :
  • আপডেট সময় রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংসার সামলাবার পাশাপাশি জাতির পিতার অনেক সময়োচিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে বঙ্গমাতার পরামর্শ আন্দোলন সংগ্রামে গতির সঞ্চার করেছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার সহচর হিসেবে বঙ্গমাতা এক হাতে যেমন সংসার সামলেছেন তেমনি অনেক সময়োচিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহযোগিতা করেছেন।’
তিনি গতকাল রোববার বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯১ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার মা একদিকে সংসার সামলেছেন অপরদিকে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো সঠিক সময়ে যাতে হয় তার ব্যবস্থা করেছেন। আন্দোলন সংগ্রামে এই দলকে বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ যেন সবমসয় সঠিক পথে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে যাতে চলতে পারে সেই নির্দেশনা দিয়েছেন।
সমস্ত তথ্য বাবার কাছে পৌঁছে দেয়া এবং জেলখানায় থাকা বাবার কাছ থেকে সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে এসে দলের নেতা-কর্মীদের কাছে পৌঁছে দেয়ার মত কাজগুলো তিনি গোপনে করেছেন। এভাবেই তিনি তাঁর পুরো জীবনটাকে উৎসর্গ করেন আমার বাবার যে আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করেন সেই আদর্শের কাছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু কখনও রাজনৈতিক নেতা হতে হবে, রাজনীতি করে কিছু পেতে হবে সে চিন্তা তাঁর (বঙ্গমাতার) ছিল না। কোন সম্পদের প্রতি ও তাঁর কোন আগ্রহ ছিল না। এভাবেই নিজের জীবনকে তিনি গড়ে তুলেছিলেন।
আর সবশেষে আপনারা দেখেছেন মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আমার মা খুনীদের কাছে নিজের জীবন ভিক্ষা চান নাই। তিনি নিজে জীবন দিয়ে গেছেন, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার সিঁড়িতে পড়ে থাকা মৃতদেহ দেখে সোজা বলে দিয়েছেন-‘তোমরা ওনাকে মেরেছ, আমাকেও মেরে ফেল।’ খুনীরা বলেছিল আমাদের সঙ্গে চলেন, ‘তোমাদের সঙ্গে আমি যাব না তোমরা এখানেই আমাকে খুন কর,’ খুনীদের বলে দেন তিনি।
‘ঘাতকের বন্দুক গর্জে উঠেছিল, সেখানেই আমার মা’কে তারা নির্মমভাবে হত্যা করে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, কতটা সাহস একটা মানুষের মনে থাকলে সে মানুষটা মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জীবন ভিক্ষা না নিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারেন। আজকে আমাদের দেশের নারী সমাজ যে একটা জায়গা খুঁজে পেয়েছে সেখানে আমি মনে করি আমার মা’য়ের এই কাহিনী শুনলে অনেকেই অনুপ্রেরণা পাবে। শক্তি ও সাহস পাবে দেশের জন্য, জাতির মঙ্গলে কাজ করতে।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব সায়েদুল ইসলাম স্বাগত ভাষণ দেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পদক বিজয়ীদের হাতে ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পদক-২০২১ তুলে দেন।
রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া, সমাজসেবা, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ, গবেষণা, কৃষি ও পল্লী উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য এ বছর পাঁচজন বাংলাদেশি নারীকে এই পদক প্রদান করা হয়েছে।
প্রথমবারের মত অন্তর্ভূক্ত ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব’ পদকটি এবার থেকে নারীদের জন্য ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক হিসেবে গণ্য হবে। পুরস্কার হিসেবে ১৮ ক্যারেট স্বর্ণের ৪০ গ্রাম ওজনের একটি পদক, ৪ লাখ টাকার চেক, সার্টিফিকেট এবং উত্তরীয় প্রদান করা হয়।
পুরস্কার বিজয়ীরা হচ্ছেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মমতাজ বেগম (মরনোত্তর), জয়াপতি (মরনোত্তর), মোসাম্মাৎ নুরুন্নাহার বেগম, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ জোবেদা খাতুন পারুল এবং নাদিরা জাহান (সুরমা জাহিদ)।
অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসন মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন। এছাড়া, পদক বিজয়ীদের পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ জোবেদা খাতুন পারুল নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।
নারীদের আর্থিক সাহায্য ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বঙ্গমাতার ৯১তম জন্ম বার্ষিকীতে দেশের সকল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত সুবিধাভোগীদের তালিকা অনুযায়ী ৬৪ জেলার ৪ হাজার অসচ্ছল নারীকে সেলাই মেশিন ও মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ২ হাজার নারীকে ২ হাজার টাকা করে মোট ৪০ লাখ নগদ টাকা ও সেলাই মেশিন বিতরণ কার্যক্রমও গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গমাতার জীবন ও কর্মের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়। ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন মহীয়সী নারী ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ৩ বছর বয়সে তিনি পিতা এবং ৫ বছর বয়সে মাতাকে হারিয়েছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর পিতা-মাতার কাছে লালিত পালিত হন এবং চাচাত ভাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে তার দাদা তাকে বিয়ে দেন। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী ফজিলাতুন নেছা মুজিব আমৃত্যু স্বামীর পাশে থেকে একজন যোগ্য ও বিশ্বস্থ সহচর হিসেবে দেশ ও জাতি গঠনে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com