প্রথম শ্রেণির সীতাকুণ্ড পৌরসভায় দীর্ঘ ১ যুগেও হয়নি সঠিক ও পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। দীর্ঘ দিন ধরে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের ডাষ্টবিনের ময়লা-আবর্জনা ড্রাম ট্রাকে তুলে নিয়ে ফেলা হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পন্থিছিলা (কসাইখানা) ও উত্তর বাজার অংশে। আর এসব ময়লা পঁচে তীব্র দূর্গন্ধের সৃষ্টিসহ ক্ষতিকর জীবাণু ও এডিস মশার উৎপাত বাড়ছে, সাথে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপও। এমন অপরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় পৌর বাসীর ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড পৌরসভা অংশ। বাস, ট্রাক, সিএনজি কিংবা মোটর সাইকেল যেকোন যানবাহন সীতাকুণ্ডে পন্থিছিলা ও উত্তর বাজার অংশ অতিক্রমকালে যাত্রীদের পোহাতে হয় তীব্র দূর্গন্ধ। সেই সাথে প্রতিদিন পঁচা গন্ধ সহ্য করতে হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, কৃষকসহ পথচারীদের। সীতাকুণ্ডের এই দুই অংশে ফেলা ময়লা আবর্জনা থেকে সৃষ্ট দূর্গন্ধ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আশেপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে এই পঁচা দূর্গন্ধ। এসব ময়লা-আবর্জনার দূষণে এলাকাবাসী নানা জটিল রোগে ভুগছে। বিশাল স্তুপ ধারণ করা ময়লা আবর্জনা পাশ্ববর্তী কৃষি জমির উর্বরতা নষ্ট করাসহ ছড়া ও খালের পানিতে মিশে বর্ষার পানিতে বাড়ি ঘরের পুকুরে ঢুকে পরিবেশ বিনষ্ট করছে। অন্যদিকে ময়লা আবর্জনার ফলে কৃষি জমিতে কাজ করার সময় পঁচা দূর্গন্ধ নাকে নিয়ে নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে কৃষক। স্থানীয়রা জানান, সীতাকু-ের পন্থিছিলা কসাইখানা নামক স্থানটি এখন অভিশাপ। এখানকার বাসিন্দাদের নিয়মিত এ গন্ধ সহ্য করতে হচ্ছে। এতো তীব্র গন্ধ যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পন্থিছিলা ও শেখ পাড়ার কয়েকজন কৃষক একুশে পত্রিকাকে বলেন, প্রত্যেহ আমরা জমিতে কাজ করতে যাই। যেখানে ময়লা ফেলা হয় সেখানেই আমাদের কৃষি জমি। সারাদিন কাজ করতে হয় বলে সারাদিনই এ গন্ধ সহ্য করতে হয়। আমরা অনেকেই এখন হাঁপানি, এ্যাজমাসহ নানা জটিল রোগে ভুগছি। পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের বাসিন্দারা বলেন, যুবাইদিয়া ইসলামিয়া মহিলা আলিম মাদ্রাসার প্রবেশ মুখে এবং হাজেরা হ্যাভেন গার্ডেনের পূর্ব পাশে যে ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে তা পথচারী ও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির কারণ। মাদ্রাসা, স্কুলে যাতায়াতকালে ছাত্রছাত্রীদের তীব্র পঁচা দূর্গন্ধ পোহাতে হয়। ময়লা আবর্জনার স্তূপের কারণে ফুটপাতে হাঁটাও কষ্টকর। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা একুশে পত্রিকাকে বলেন, আমরা যখন মাদ্রাসায় যায় তখন এই পঁচা গন্ধ নাকে নিয়ে যেতে হয়। একটি মাদ্রাসার সড়কের মুখে এ ধরণের ময়লার স্তুপ করা দুঃখজনক। পৌরসভাকে আধুনিক ও পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এ বিষয়ে পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা ৫নং ওয়ার্ড নলুয়া পাড়া ও ১নং ওয়ার্ডের পাহাড়ের পাদদেশে সর্বমোট দুটি জায়গা নির্ধারণ করেছি ডাম্পিং স্টেশনের জন্য। মেয়র মহোদয়ের মাধ্যমে ডিসি’র নিকট এ বিষয়ে আবেদন করা হবে। জায়গাটি পেলে অতি শীঘ্রই বর্জ্য স্থানান্তর করে বর্তমান জনদূর্ভোগ লাগব করতে পারবো বলে আশা করছি। পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মফিজুর রহমান একুশে পত্রিকাকে বলেন, যে দুটি স্থানে পৌরসভা ময়লা ফেলছে সেই দুটি স্থানে বাজারের ইজারাদাররা ও এগ্রো প্রতিষ্ঠান সিপি হ্যাচারীও তাদের আবর্জনা ফেলছে। ফলে পৌরসভার ময়লার সঙ্গে স্তুপ বড় হচ্ছে। আমাদের পৌরসভা থেকে স্থায়ী ডাম্পিং করার জন্য প্রস্তুুতি চলছে। আশা করি খুব শীঘ্রই হয়ে যাবে। সীতাকু- পৌরসভার মেয়র মুক্তিযোদ্ধা বদিউল আলম একুশে পত্রিকাকে বলেন, আগের মেয়রের মৌখিক নির্দেশে পৌরসভার ময়লা আবর্জনা মহাসড়কের পাশে ফেলা হচ্ছে। পৌরসভার নিজস্ব কোনো জায়গা নেই ডাম্পিং স্টেশন করার জন্য। আমরা মন্ত্রণালয়ে কাছে চিঠি দিয়েছি, মন্ত্রণালয় থেকে যদি বরাদ্দ পাওয়া যায়, তাহলে পাহাড়ের পাদদেশে বা জনবসতি নেই এমন কোনো জায়গায় ডাম্পিং স্টেশন করা হবে। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য পৌরবাসীকে পরামর্শ দেন তিনি।