সিজার না করেই কুড়িগ্রাম মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে আগত প্রসূতি মায়েদের অফিস সময়ের দোহাই দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। পরে বেসরকারি ক্লিনিকে ওই একই রোগীর সিজার করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডাঃ মারুফা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রসববেদনা নিয়ে আগত প্রায় প্রতিটি রোগীকেই আলট্রা স্নো গ্রাম সহ অন্যান্য পরিক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থাপত্র লিখে হাতে ধরিয়ে দেয়া হয় স্বজনদের। পরে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরিক্ষা নিরীক্ষা শেষে রিপোর্ট হাতে নিয়ে জানিয়ে দেয়া হয় অফিস সময় শেষ। তবে শান্তনা স্বরূপ বলা হয় যদি রিস্ক নেন তাহলে ভর্তি রাখেন আগামীকাল করে দেয়া হবে। ফলে রোগীর সার্বিক পরিস্থিতি ও অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ বিবেচনায় রোগীকে তড়িঘড়ি করে ওই মেডিকেল অফিসারের নির্দেশিত বেসরকারী ক্লিনিকে নেয়া হয়। গত রোববার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে সদর উপজেলার দাসেরহাট এলাকা থেকে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের প্রাক্তন এক এফডব্লিউএ তার সন্তানসম্ভবা পুত্রবধূকে সাথে নিয়ে মাতৃসদনে উপস্থিত হন। তাকে আলট্রা স্নো গ্রাম ও অন্যান্য প্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষা করিয়ে আনতে উপদেশ দেন ডাঃ মারুফা। পরিক্ষা নিরীক্ষার পর দুপুর দেড়টার দিকে ডাঃ মারুফা জানিয়ে দেন অফিস সময় শেষ হয়েছে, আজকে অপারেশন হবেনা। তবে আপনি যদি রিস্ক নেন তাহলে ভর্তি রাখেন আগামীকাল করে দিব। পুত্রবধূকে নিয়ে আসা ওই এফডব্লিউএ জানান, পরে ডাঃ আপার উপদেশে আইডিয়াল ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি বিকেল ৪ টার দিকে সিজার করেন। এ ব্যাপারে ডাঃ মারুফা আক্তার জাহানকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। প্রসুতি মায়ের ডেলিভারি বা সিজার সংক্রান্ত ব্যাপারে অফিস সময় বাঁধা কিনা জানতে চাইলে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী পরিচালক মোদাব্বের হোসেন জানান , সিজার বা ডেলিভারির ক্ষেত্রে ২৪ ঘন্টাই সার্ভিস দিতে হবে। এ ব্যাপারে এডিসিসি ডাঃ নজরুল ইসলাম বলেন, জনগনের সেবায় ২৪ ঘন্টা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের সেবা কার্যক্রম চালু রয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক মীর রফিকুল ইসলাম জানান, ডেলিভারি পেশেন্ট এর বেলায় অফিস সময়ের বাধ্যবাধকতা নেই জানিয়ে বলেন, সীমান্ত জেলা কুড়িগ্রামে কোন চিকিৎসক আসতে চাননা । উল্লেখ্য ইতিপূর্বে, কুড়িগ্রাম মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার ডাঃ মারুফা গাইনী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পরিচয়ে বেসরকারি একটি ক্লিনিকে বিধিবহির্ভূত চেম্বার প্রাকটিস, সিজারিয়ান সেকশান সহ ডিএন্ডসি ও হিস্ট্রেকটমি অপারেশন করা সহ যাবতীয় অনিয়ম সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। এরই প্রেক্ষিতে পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক মীর রফিকুল ইসলাম ২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী পরিচালক, মোঃ মোদাব্বের হোসেনকে প্রধান এবং ডিস্ট্রিক্ট কনসালটেন্ট ডাঃ মনজুর রহমানকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।জানা গেছে, ৭৪ পৃষ্ঠা সম্বলিত তদন্ত প্রতিবেদন গত জুলাই মাসে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।