রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৫ অপরাহ্ন

মোরেলগঞ্জে আমন ধানের চারার সংকটে কৃষকেরা দিশেহারা

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৯ আগস্ট, ২০২১

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে আমন চাষাবাদের মওসুম শেষ পর্যায় পৌঁছালেও ধানের চারা অতি বর্ষণে পানিতে তলিয়ে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে আমন চারার চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে মোরেলগঞ্জে অধিকাংশ কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছে। চারা সঙ্কটের কারণে এবার এ অঞ্চলে অনেক জমি অনাবাদি থাকবে বলে কৃষকরা আশংকা প্রকাশ করেছেন। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিতে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নসহ পৌরশহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে উপজেলার ১০ হাজার মানুষ। ভেসে যায় পুকুর-ঘের। অবিরাম বৃষ্টিতে ফসলি জমি, বীজতলা, আমন ধান, সবজি, পানসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। পানি নিষ্কাশনের পর দৃশ্যমান হতে থাকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় আমনের বীজতলা। বীজতলা পচে ও নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন করে দেখা দিয়েছে বীজ সংকট। ১৫০ হেক্টর আমন বীজতলা নষ্ট এতে চাষিদের প্রায় ২ কোটি টাকার রোপা আমন মৌসুমের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। টানা বর্ষণে বহরবুনিয়া, হোগলাবুনিয়া, পঞ্চকরণ, তেলিগাতি, বারইখালী, বলইবুনিয়া, মোরেলগঞ্জ সদর, নিশানবাড়িয়া ও জিউধরায় ভারী বর্ষণে অতিরিক্ত পানিতে ৮ হাজার মৎস্য ঘের পানির নিচে তলিয়ে গেছে মৎস্য ঘেরের ভেরি ধসে গিয়ে বেড়িয়ে গেছে বাগদা, গলদা, বিভিন্ন প্রজাতির সাদামাছ। এতে ঘের ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়ে পড়েছে।এতে চাষিদের প্রায় ৬ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। বিস্তীর্ণ এলাকার বিল ও মাঠ ঘাট বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে গেছে। এতে করে কৃষকের স্বপ্ন চলতি আমন মৌসুমের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। বীজ ধানও মিলছেনা। ধান রোপন করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহীন রয়েছে কৃষকরা। তবে স্থানীয় কৃষি অফিসের মাধ্যমে তাদেরকে হতাশ না হওয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। এলাকাবাসির সাথে কথা বলে জানা গেছে বেশিরভাগ জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইজ গেটগুলো অকেজো থাকায় ঠিকমতো পানি নিস্কাশন হচ্ছে না। অর্ধ শতাধিক জলমহলের ইজারা গ্রহিতারা যত্রতত্র নেট পাটা দিয়ে মাছ ধরার কারণে বিল খালের পানি নিস্কাশন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিল ও খালের খাস জমিতে বহু মানুষ ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করছে এবং চলাচলের জন্য ছোট ছোট রাস্তা নির্মাণ করায় পানি আটকে জলাবদ্ধতার চরম সৃষ্টি হয়েছে। এখনও মোরেলগঞ্জের অধিকাংশ জায়গায় বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে রয়েছে।স্থানীয়দের অভিযোগ বহরবুনিয়া, হোগলাবুনিয়া, পঞ্চকরণ, তেলিগাতি, বারইখালী, বলইবুনিয়া, মোরেলগঞ্জ সদর, নিশানবাড়িয়া ও জিউধরায় জিউধরা, বহরবুনিয়া বটার খাল, ডেনাতলা, উত্তর ফুলহাতা মাঝের খাল, নোনা খাল, শনিরজোর, কাজি মার্কেটের খাল, ঘষিয়াখালী কবিরাজবাড়ি খালসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে সরকারি রেকর্ডীও খালগুলোতে বাঁধ সৃষ্টি করায় পানি চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে। এ বাঁধগুলো অতি দ্রুত অপসারণ করে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।এলাকার বিলের পানি নিস্কাশন বাঁধাগ্রস্ত হওয়ায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ফলে এলাকার হাজার হাজার পরিবার চরম দুর্ভোগের পড়েছে। শত শত মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে গিয়ে চাষীরা পড়েছেন ক্ষতির মুখে। মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়নের ফুলহাতা গ্রামের কৃষক রাকিব হাসান জানান, ৬ বিঘা জমির বীজতলা সবই নষ্ট হয়ে গেছে। আমাদের এলাকায় মাছ এবং এক ফসলী আমন ছাড়া তেমন কিছুই হয়না। নতুন করে চাষের জন্য অনেক জায়গায় ঘুরেও একমুঠো বীজ পাইনি। এই ক্ষতি কিভাবে পুশিয়ে উঠবো তাই ভেবে পাচ্ছি না। মোরেলগঞ্জ উপজেলার ভাই ভাই স্টোরের স্বত্তাধীকারী বীজ ধানের ডিলার সুখদেব হালদার জানান,আমাদের এ বছর চাহিদা ছিলো দশ টনের মত। কিন্তু আমরা বরাদ্দ পেয়েছি মাত্র সাড়ে তিন টন বীজ ধান। সম্প্রতি বৃষ্টিতে বীজধান নষ্ট হয়ে যাওয়াতে আমাদের কাছে অনেক কৃষক এসেছেন। কিন্তু আমরা কাউকে বীজ দিতে পারছি না। মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এম এমদাদুল হক জানান, বৃষ্টির পানিতে বীজতলাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে উপজেলা জুড়ে সকল কৃষকরা এখন হতাশায় রয়েছেন। নতুন করে চাষাবাদের জন্য বীজধান সংগ্রহসহ কৃষকদের দ্রুত সরকারি সহায়তার দাবী জানান তিনি। মোরেলগঞ্জ উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কৃষি অফিসার মোঃ সিফাত-আল-মারুফ বলেন, এ বছর মোরেলগঞ্জে ১৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপনের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়।২৭ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে বীজতলা নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি শাক সবজি ডুবে কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকদের জন্য বিভিন্ন প্রজাতির ধানের বীজ যাতে সংকট না পড়ে তার জন্য উর্ধতন কৃর্তপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকেদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। সরকারি বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিএডিসি (বীজ) এর বাগেরহাট কার্যালয়ের সহকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তা আকলিমা খাতুন বলেন, কৃষকদের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের ৫০ টন বীজ বরাদ্দ ছিল। আমরা ৫০ টনেরও কিছু বেশি বীজ এই মৌসুমে কৃষকদের সরবরাহ করেছি। কিন্তু এখন নতুন করে আর বরাদ্দের সুযোগ নেই। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ২৭ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে জেলায় এক হাজার ৫৮৮ হেক্টর রোপা আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। ৯৬০ হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে ৩৭৯ হেক্টর জমির। সাড়ে ১০ হেক্টর জমির পান বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২০ হাজার ২০৩ জন কৃষকের পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ তিন হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বীজতলা নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তালিকা তৈরি করে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে। সরকারী সহায়তা আসলে কৃষকদের দেওয়া হবে। পাশাপাশি ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমরা কৃষকদের নানা পরামর্শ দিচ্ছি। এছাড়া বীজ ধানের সংগ্রহের বিষয়ে আমরা কাজ করছি। এ বিষয়ে পাউবো বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য জানান, মোরেলগঞ্জ সহ উপকুলীয় এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি বড় প্রকল্প শীঘ্রই একনেকে উঠবে। এটি অনুমোদন পেলে নুতন নতুন সুøইজগেট নির্মাণ ও পুরনো স্লইসগেট সংস্কার করে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com