জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সহ-সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা মোস্তাফিজুর রহমান রুমীকে সোমবার রাতে আটকের অভিযোগ করে বিএনপি। তবে এখন পর্যন্ত তাদের কোন হদিস পাওয়া যাচ্ছে না জানিয়ে তাদের সন্ধান দাবি করেছে দলটি। মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়েজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও দপ্তরের চলতি দায়িত্বে থাকা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেন, এই ঘটনার পরপরই গতরাতে বিএনপি মহাসচিব এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তাদের সন্ধান দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তু এখনও তাদের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এ ধরনের লোমহর্ষক কর্মকা- একমাত্র কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদী সরকার দ্বারাই সংঘটিত হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে তাদেরকে জনসম্মুখে হাজির এবং নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবী জানাচ্ছি। প্রিন্স বলেন, মধ্যরাতের ভোটের পর আওয়ামী সংগঠনগুলো এখন বেপরোয়া, মনুষ্যত্বহীন, লাগামহীন, উদ্ধত এক মূর্তিমান আতঙ্ক। এদের কারনে বাংলাদেশে এখন ঘাতক ও মৃত্যুরই সহাবস্থান। দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর জানমাল এখন নিরাপত্তাহীন। স্বাধীনতা শুধু ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের। আওয়ামী রাজনীতির যাঁতাকলে প্রতিনিয়ত নিষ্পেষিত হচ্ছে গণতন্ত্রকামী মানুষ, ভিন্নমতের মানুষ এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষের মানুষ।
তিনি বলেন, মধ্যরাতের ভোটের সরকারের প্রভাবেই সমাজে অপরাধপ্রবণতা বিশ্বের সকল দৃষ্টান্তকে হার মানিয়েছে। বাংলাদেশ এখন কর্তৃত্ববাদী ভয়াবহ দুঃশাসনের আগুনে জ¦লছে। আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী এখন রক্তের হোলি খেলায় মত্ত।
ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদকসহ ৩ নেতা গ্রেফতার: রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলসহ তিন নেতাকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। গ্রেফতার অপর দুই ছাত্রদল নেতা হচ্ছেন সহ-সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সদস্য সচিব প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান রুমি। গত সোমবার (২৩ আগস্ট) দিনগত রাত ১০টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে ডিএমপির তেজগাঁও গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল। রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) উত্তরের যুগ্ম-কমিশনার হারুন-অর-রশীদ। তিনি বলেন, ‘রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। দুটি মামলা করে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ ও একটি মামলার বাদী পুলিশ। ওই ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
এর আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতারা গত ১৭ আগস্ট সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য চন্দ্রিমা উদ্যানের সামনে জড়ো হলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশের লাঠিপেটা, কাঁদানেগ্যাস ও রাবার বুলেটে ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও সদস্য সচিব আমিনুল হকসহ ১৮-২০ আহত হন। অন্যদিকে এ ঘটনায় ১০-১৫ জন পুলিশ সদস্যও আহত হন বলে জানায় পুলিশ। ওই ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় ১৭ আগস্ট রাতেই তিনটি মামলা দায়ের করা হয় বলে জানান শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানে আলম মুন্সী।
তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ দুটি এবং পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।’ মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, তাদের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে তাদের ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আর পুলিশের মামলাটি করা হয়েছে সরকারি কাজে বাধা ও মারধরের অভিযোগে। এর মধ্যে পুলিশের করা মামলায় বিএনপির ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানসহ ১৫৫ জনকে এবং মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের মামলায় অজ্ঞাতসংখ্যক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান ওসি জানে আলম মুন্সী।