মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

আজরাইল ও মৃত্যু

ফাতিমা আজিজা :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১

মৃত্যুর পঞ্চম ধাপের শুরুতে আজরাইল আ: প্রবেশ করবেন। এই স্তরে মানুষ পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পারবে সেকি জান্নাতি না জাহান্নামি। সে তার আমলের ফলাফল দেখবে এবং তার পরিণতি সম্পর্কে জানতে পারবে। ‘শপথ সেই ফেরেশতাদের যারা নির্মমভাবে (রূহ) টেনে বের করে’ (সূরা নাজিয়াত-১)।
জাহান্নামে একদল ফেরেশতা থাকবে যারা আগুনের কাফন প্রস্তুত করে এবং খুব নির্দয়ভাবে পাপী ব্যক্তির রূহ কবজ করে। আরেকটি আয়াতে এই কঠিন পরিস্থিতির চিত্র বর্ণিত হয়েছে- ‘ফেরেশতারা যখন তাদের মুখমণ্ডল এবং পৃষ্ঠদেশে আঘাত করতে করতে তাদের প্রাণ হরণ করবে তখন তাদের কী দশা হবে’ (সূরা মোহাম্মদ-২৭)।
এই ধাপের পর শুরু হবে ষষ্ঠ ধাপ! এই ধাপে মানুষের রূহ প্রস্তুত হয়ে তারাক্বির ওপর সম্ভাব্য সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে যাবে এবং রূহ বের হওয়ার জন্য ও আজরাইল আ:-এর কাছে আত্মসমর্পণের জন্য নাকে-মুখে অবস্থান করবে। বান্দা যদি পাপীষ্ঠ হয় তখন আজরাইল তাকে বলবে; হে নিকৃষ্ট আত্মা! তুই আগুন ও জাহান্নামের এবং ক্রোধান্বিত ও প্রতিশোধপরায়ণ রবের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আয়। তখন তার অভ্যন্তরীণ চেহারা কালো হয়ে যাবে এবং চিৎকার করে বলবে, ‘হে আমার রব! আমাকে পুনরায় পাঠান যাতে আমি সৎকাজ করি, যা আমি আগে করিনি’ (সূরা মুমিনুন)। কারণ আমি নেক কাজ করতে পারিনি। তখন সে শুনতে পাবে, ‘বলো তোমরা যে মৃত্যু হতে পলায়ন করো সেই মৃত্যুর সাথে তোমাদের সাক্ষাৎ হবেই। অতঃপর তোমরা উপস্থিত হবে অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা আল্লাহর কাছে এবং তোমাদের জানিয়ে দেয়া হবে যা তোমরা করতে’ (সূরা জুমুআ-৮)। সাহাবিরা বলেন, আমরা কেন মৃত্যুকে ভয় পাই? রাসূল সা: উত্তর দিলেন, ‘কারণ তোমরা দুনিয়াকে আবাদ করেছ আর আখিরাতকে বরবাদ করেছ। যে মৃত্যুকে বেশি স্মরণ করবে সে আখিরাতের জন্য বেশি প্রস্তুত থাকবে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা দুনিয়ার ভোগবিলাস বিনষ্টকারী জিনিস, মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করো’ (তিরমিজি-২৩০৭)।
মৃত্যু হচ্ছে মানুষের জন্য পরীক্ষা। আল কুরআনে এসেছে- ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য; কে তোমাদের মধ্যে কর্মে সর্বোত্তম? আর তিনি পরাক্রমশালী, বড় ক্ষমাশীল’ (সূরা মুলক-২)। আত্মা একটি এমন অদৃশ্যমান বস্তু যে, যে দেহের সাথে তার সম্পর্ক বহাল থাকে, তাকে জীবিত বলা হয়। আর যে দেহ থেকে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় তাকে মৃত্যুর শিকার হতে হয়। জীবনের পর রয়েছে মৃত্যু। আল্ল‍াহ তায়ালা ক্ষণস্থায়ী এই জীবনের ব্যবস্থা এই জন্য করেছেন, যাতে তিনি পরীক্ষা করতে পারেন যে, এই জীবনের সদ্ব্যবহার কে করে? যে এ জীবনকে ঈমান ও আনুগত্যের কাজে ব্যবহার করবে, তার জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান এবং যে এর অন্যথা করবে, তার জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।
ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণ করা মুসলমানদের কর্তব্য। কারণ আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন- ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করো এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না’ (সূরা ইমরান-১০২)।
ইসলামের যাবতীয় বিধান মেনে চলা, তার ওয়াজিব কাজগুলো সম্পূর্ণভাবে পালন করা এবং যত নিষিদ্ধ বস্তু আছে, তার ধারে-কাছেও না যাওয়া। কেউ কেউ বলেছেন, এই আয়াত নাজিল হলে সাহাবিরা বড়ই বিচলিত হয়ে পড়েন। তাই মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্ল‍াহকে ওইভাবেই ভয় করো যেভাবে স্বীয় সাধ্যমতো তাঁকে ভয় করা উচিত।’ এই আয়াত নাজিল করেন। (ফাতহুল কাদির)।
মৃত্যুকে অধিক স্মরণকারী সবচেয়ে বেশি বুদ্ধিমান।
এক আনসারি বলল, হে আল্ল‍াহর রাসূল! মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম কে? রাসূল সা: বলেন, স্বভাব-চরিত্রে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অধিক উত্তম। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান কে? তিনি বলেন, তাদের মধ্যে যারা মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তারাই সর্বাধিক বুদ্ধিমান’ (ইবনে মাজাহ-৪২৫৯)।
মৃত্যুকে স্মরণ করার মাধ্যমেই দুনিয়ার আকর্ষণ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। আর মৃত্যুকে স্মরণ হচ্ছে প্রকৃত সম্ভ্রম রক্ষা করা বা আল্ল‍াহর প্রতি লজ্জাশীল থাকা।
রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা আল্ল‍াহ তায়ালাকে যথাযথভাবে লজ্জা করো। আল্লাহ তায়ালাকে যথাযথভাবে লজ্জা করার অর্থ এই যে, তুমি তোমার মাথা এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা সংরক্ষণ করবে এবং পেট ও এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা হিফাজত করবে, মৃত্যুকে এবং এরপর পচে-গলে যাওয়ার কথা স্মরণ করবে। আর যে লোক পরকালের আশা করে, সে যেন দুনিয়াবি জাঁকজমক পরিহার করে। যে লোক এসব কাজ করতে পারে সে-ই আল্লাহকে যথাযথভাবে লজ্জা করে’ (তিরমিজি-২৪৫৮)।
এই হাদিসে তিনটি বিষয়ের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে- যার প্রথম হচ্ছে মস্তিষ্ক। মস্তিষ্ক হচ্ছে মানুষের চিন্তা-ভাবনার কেন্দ্রস্থল। মস্তিষ্ক সংরক্ষণ করার অর্থ কোনোরকম ঘৃণার ও পাপ কাজের কল্পনাকে মস্তিষ্কে জায়গা না দেয়া। ভালো-মন্দ যেকোনো কাজের চিন্তা প্রথমে মাথায় আসবে তারপর তা কাজে পরিণত হবে। গাড়ি যেমন ইঞ্জিন দিয়ে পরিচালিত হয় তেমন মানুষ মাথার বুদ্ধি-বিবেক দিয়ে মানুষের কাজ পরিচালিত হয়। দ্বিতীয়ত, পেট যা সে খাদ্য দিয়ে ভর্তি করে এবং মস্তিষ্ককে সচল করে তুলে। আর তাই খাদ্য হালাল হলেই মস্তিষ্ক হালাল বা পবিত্র চিন্তা করবে।
তৃতীয়ত, মৃত্যু বা পরকালের চিন্তা। একমাত্র মৃত্যুর চিন্তা দুনিয়ার চাকচিক্য থেকে মানুষের অন্তরকে হিফাজত করতে পারে। কারণ কোনোরকম মানচিত্র ছাড়া যখন কেউ উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে ঘুরে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করবে সে ভবঘুরে পথভ্রষ্ট পথিক হবে, তেমনি যদি পরকাল কারো জীবনের লক্ষ্য হয়ে থাকে তবে সে কখনো মিথ্যা মায়াজালে আকৃষ্ট হবে না। সর্বশেষ মৃত্যুকে স্মরণ করাই মূলত আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ ঈমানের সাথে লজ্জা রেখে চলার নামান্তর।
মৃত্যুর পরও যদি কেউ আমলনামায় সওয়াব বা পুণ্য যোগ করতে চায় তবে তাকে হাদিসের আলোকে তিনটি কাজ করে যেতে বলা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তি তার (মৃত্যুর) পর যা ছেড়ে যায় তন্মধ্যে সর্বোত্তম হলো তিনটি জিনিস- ১. নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করবে; ২. এমন সদকা, যার উপকার জারি থাকে, এর প্রতিদান তার কাছে পৌঁছতে থাকবে ও ৩. এমন ইলম, (যা সে প্রচার করেছে) তার মৃত্যুর পর সে অনুযায়ী আমল করা হবে’ (তারগিব ওয়াত তাহরিব-১১৩)।
ঈমানি মৃত্যুর সর্বোত্তম আমল বা নমুনা হচ্ছে মুখে কালেমা পাঠ করা। তাই যে কেউ ঈমানের সাথে মৃত্যু চাইবে সে সর্বদা কালেমা পড়তে থাকবে, তাহলে তার মৃত্যুর মুহূর্তে সে ঈমানের সাথে কালেমা পাঠ করতে সক্ষম হবে। রাসূলুল্ল‍াহ সা: বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুপথযাত্রীকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্ল‍াহ’ তালকিন করাও। কেননা, যে ব্যক্তির মৃত্যুর সময় শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’ (ফাজায়েলে আমল-৫৭)।
মৃত্যুযন্ত্রণা সবাইকেই ভোগ করতে হবে যদি তার প্রাণ থাকে। জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত মৃত্যু। আর তাই রাসূল সা: নিজেও এর থেকে মুক্ত থাকতে পারেননি। রাসূলুল্লাহ সা: যখন মৃত্যুর কষ্ট ভোগ করছিলেন, তখন ফাতেমা রা: বললেন, ‘হায়! আমার আব্বার কতই না কষ্ট হচ্ছে!’ রাসূলুল্ল‍াহ সা: বলেন, ‘আজকের পর তোমার পিতার আর কোনো কষ্ট থাকবে না। তোমার পিতার কাছে মৃত্যু নামক এমন এক বিষয় উপস্থিত হয়েছে, যা থেকে কিয়ামত পর্যন্ত কেউ রেহাই পাবে না’ (শামায়েলে তিরমিজি-৩০৫)। লেখক: ইসলামী গবেষক




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com