সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ অপরাহ্ন

অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে রোগিদের সেবায় দিন-রাত ছুটে চলা তাদের

ওবাইদুল আকবর রুবেল ফটিকছড়ি :
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৫ আগস্ট, ২০২১

কভিড-১৯ শুরু দিক থেকে করোনায় আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিরামহীন ছুটে চলেছেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির “গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ” সুন্দরপুর ইউনিয়ন শাখার সেচ্ছাসেবকরা। তাদের বিশ্রাম নেই। যখনই খবর আসে তখনই ছুটে চলেন। মুষল বৃষ্টি বা তীব্র রোদ- সবই তুচ্ছ। কারণ, ডাক এসেছে করোনায় মৃত ব্যক্তিকে শেষ বিদায় জানানোর। সে সাথে হটলাইনে ফোন পেয়ে তারা রোগীর বাসায় বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবাও পৌঁছে দিচ্ছেন। যাদের অবস্থা বেশি খারাপ, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করতে সহযোগিতা করছেন। স্বেচ্ছাসেবকরা জানান, করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের স্বজনেরা যখন লাশের পাশে আসেননি, তখন এই স্বেচ্ছাসেবীরা দাফন-কাফন ও সৎকারের কাজ করছেন। কোথাও দাফন-কাফন বা সৎকারের প্রয়োজন হলে তারা ছুটে গেছেন। এ পর্যন্ত সংগঠনটি ৭ জনের লাশ দাফন-কাফন ও সৎকারের কাজ সম্পন্ন করেছে। তাদের মধ্যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলে জানান সদস্যরা। এছাড়াও সর্বশেষ ৪৭ জন রোগীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদান করা হয়েছে। সংগঠনের সেচ্ছাসেবকরা আরও জানান, ফেসবুকে সংগঠনটির তৎপরতা দেখে বিভিন্ন মানুষ সহায়তার হাত বাড়ান। মানুষের আর্থিক সহযোগিতা দিয়েই সংগঠনের কার্যক্রম চলছে। সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক বেলাল আহমদ রেজা বলেন, আপনজন আপনজনের পাশে থাকে না এই করোনাকালে। কেউই আসতে চায় না জীবনের ভয়ে। কিন্তু একজন মানুষের দাফন করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হয় আমার। ভালোলাগা থেকেই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিয়েছি। দাফন-কাফন ও সৎকার টিমের সদস্য সচিব মো: জামশেদুল আলম বলেন, করোনা মহামারি যখন শুরু হয়েছিল তখন থেকেই আমাদের এই সংগঠন কাজ করে যাচ্ছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে অথবা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। একমাত্র আল্লাহর কাছ থেকে সওয়াব পাওয়ার জন্য এই কাজে নেমেছি। আমরা কোনো বিনিময় নেই না। অক্সিজেন সেবা প্রদান ও করোনা আক্রান্ত রোগি দাফন-কাফনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে সংগঠনের সমন্বয়কারী মাষ্টার আমান উল্লাহ আমান জানান, করোনার প্রভাব যখন বাড়তে তখন আমাদের উপজেলা সমন্বয় মাও:মাছঊদ কাদেরীর মাধ্যমে আমরা সুন্দরপুরে টিম রেডি করি। করোনার শুরু থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৭জন ব্যক্তির লাশ দাফন-কাফন করেছি তারমধ্যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। এছাড়াও আমরা ৪৩ জনকে সম্পুর্ণ বিনামূল্যে বাড়িতে গিয়ে অক্সিজেন সেবা প্রদান, ৫২০ জন অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে নগত অর্থ ও খাদ্য সহায়তা প্রদান, ৮ জন রোগিকে রক্তদানসহ সর্বশেষ কভিড-১৯ ভ্যাকসিন নিবন্ধন ক্যাম্পিং এর মাধ্যমে ২ হাজার ৫ জন বিনামূল্যে নিবন্ধন করে দেওয়া হয়েছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি একজন মানুষের শেষ বিদায়টা সম্মান ও ভালোবাসার সঙ্গে যেন হয়। সংগঠনের সূত্রে জানা যায়, “গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ সুন্দুরপুর ইউনিয়ন শাখা” করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই মাস্ক, স্যানিটাইজার বিতরণসহ সচেতনতামূলক কাজ করছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমানকে প্রধান সমন্বয়কারী করে গঠন করা হয়েছে ৯ সদস্যের দাফন-কাফন ও সৎকার টিম। এ কাজে যুক্ত হওয়া সহজ ছিল না। পরিবার থেকে অনেককে বাঁধার মুখে পড়তে হয়েছে। তবু নানা কৌশলে তারা যুক্ত থেকেছেন। আবার কোনো কোনো পরিবার তাদের কাজে উৎসাহও জুগিয়েছে। এসব কাজ করতে গিয়ে তারা মানুষের ভেতরের রূপটা দেখেছেন। এসব কাজে অনেকের কাছ থেকেই পিপিই, মাস্ক ও স্যানিটাইজার পেয়েছেন তারা। কেউ দিয়েছেন পরিবহন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার অর্থ।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com