পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে চিকিৎসা অন্যতম। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত মৌলিক অধিকারের গুরুত্বপূর্ণ এই চিকিৎসা সেবা হতে বঞ্চিত হচ্ছে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার লোকজন। সদরে অবস্থিত একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নানা সংকটে জর্জরিত। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক। অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানের অভাবে ব্যবহার করা যাচ্ছে না আধুনিক যন্ত্রাপাতি। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে হাসপাতালের কার্যক্রম। বিকল্প ভাল প্রাইভেট হাসপাতাল না থাকায় চরম বিপাকে পড়ছে রোগীরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যায় উন্নতি করণের লক্ষ?্যে পুরাতন ভবনের পাশাপাশি নতুন আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়। পুরাতন ভবনটি ৩০ শয্যার। তবে প্রয়োজনীয় জনবল, যন্ত্রপাতিসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের অভাবে শুরু হয়নি ২০ শয্যা ভবনটির সেবা কার্যক্রম কার্যক্রম। হাসপাতালটি বর্তমানে ৫০ শয্যার হলেও জনবল রয়েছে ২০ শয্যারও কম। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন চিকিৎসক সংকট ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনুপস্থিতিসহ নানা সমস্যায় ব্যাহত হচ্ছে সদর হাসপাতালের কার্যক্রম। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় অনেক রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি না করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল বা অন?্য কোনো বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাচ্ছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে নেই কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, রেডিওলজিস্ট সহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিভাগে নেই কোন চিকিৎসক। ১৯ পদের বিপরীতে মাত্র ৭ জন ডাক্তার কর্মরত। এর মধ্যে দুইজন প্রশিক্ষণে আছেন। টেকনিশিয়ান না থাকায় করা যাচ্ছে না আলট্রাসোনোগ্রাম ও উন্নতমানের পরীক্ষা, এক্সরে মেশিনসহ অন্যান্য আধুনিক যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের অভিযোগের অন্ত নেই। উপস্থিত অনেকেই জানান চিকিৎসকরা নিয়মিত রোগীও দেখেন না। জরুরি ও জটিল রোগেও ম্যাডিকেল এ্যাসিসট্যান্ট, নার্সেরা চালায় চিকিৎসা সেবা। চিকিৎসক যা কয়েকজন আছে তারাও অধিকাংশ সময় বিভিন্ন কোম্পানির মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের সাথে সময় কাটান। রোগীদের সময় দেননা বললেই চলে। মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের দৌরাত্ম্য এখানে চরম। চিকিৎসা নিতে আসা কাজল শেখ নামে একজন বলেন, ‘আমি একটা সমস্যা নিয়ে সদর হসাপাতালে এলাম। এসে দেখি ডাক্তার নেই। কয়েক ঘন্টা ধরে বসে আছি এখানে।’ আরেক রোগী রহিমা বলেন, ‘সহালে আইছি বাজান। দুপুর অইছে। অহনও ডাক্তারসাবের লগে কথা কইতে পারলামনা। আমি রোগী মানুষ, আল্লায় জানে কহন ডাক্তার দেহাইতে পারুম।’ ভর্তি হওয়া রোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানকার খাবারের মানও ভালো নয়। প্রতিদিন একই ধরণের খাবার দেওয়া হয়। খাদ্য তালিকায় প্রায় প্রতিদিনই পাঙ্গাস মাছ দিয়ে ঝুল আর পাতলা ডাল থাকে। যা অনেক রোগীই খেতে চায়না। হাসপাতালের এ করুণ দশা সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হাসান বলেন, করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব ও অন্যান্য রোগ বৃদ্ধির কারণে উপজেলা সদরের অনেক ডাক্তার জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মরত। সমন্বয় করে যথাসম্ভব রোগীদের সেবা প্রদানে আমি সবসময় সচেষ্ট। সিভিল সার্জন ডা. নুরুল ইসলাম বলেন, সারাদেশেই রোগী অনুপাতে ডা. সংকট রয়েছে। তবে বেলাবতে চিকিৎসা সেবা তেমন খারাপ নয়। সকল অভিযোগ আমি খতিয়ে দেখব।