গোপালগঞ্জে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দে সদ্য নির্মিত মাটির রাস্তার উপর দিয়ে চলছে নৌকা। ওই রাস্তার নির্মাণ কাজ শেষ না করেই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে। নিম্ন জলাভূমি বেষ্টিত কোটালীপাড়া উপজেলার পিঞ্জুরী ইউনিয়নের নব নির্মিত ৩ টি কাঁচা রাস্তার উচ্চতা কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন ৩টি প্রকল্পের পিআইসিগন। আর এ কারণে রাস্তাগুলো তলিয়ে গেছে। রাস্তা গুলোর দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারছে না। এগুলো মানুষের কোন কাজেই আসছে না। ফলে বিল এলাকার মানুষের নতুন দুর্ভোগের জন্ম দিয়েছে এসব রাস্তা। কোটালীপাড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস জানিয়েছে, ৮৫ লাখ ৪৫ হাজার ৭ শ’ ৫৯ টাকা ব্যায়ে পিঞ্জুরী ইউনিয়নের তারাইল পাথুড়িয়া স্লুইচ গেট থেকে রঞ্জনের বাড়ি হয়ে সোনাখালি পর্যন্ত ২ হাজার ২ শ’ ৫০মিটার মাটির রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প গ্রহন করা হয়। ২৩ লাখ ৮৮ হাজার ৯ শ’ ৪ টাকা ব্যায়ে ওই ইউনিয়নে বাহির শিমুল গ্রামের নৃপেনের বাড়ি হতে রজ্জব শেখের বাড়ি হয়ে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ পর্যন্ত ৭শ’ ৮৫ মিটার রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প গ্রহন করা হয়। এছাড়া প্রায় ৪৪ লাখ টাকা ব্যয়ে মালেক মাস্টারের বাড়ি হইতে পূর্ণবতী পর্যন্ত ১ হাজার ১ শ’ মিটার রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প গ্রহন করে ওই অফিস। পিঞ্জুরী ইউপি চেয়ারম্যান আবু ছাইদ সিকদার ২টি ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের মেম্বর শেফালী মন্ডল ১ টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। কোটালীপাড়া উপজেলার তারাইল গ্রামের নির্মল মজুমদার(৬০) বলেন, পাথুড়িয়া স্লুইচ গেট থেকে রঞ্জনের বাড়ি পর্যন্ত ২ শ’ মিটার রাস্তার ইট উত্তোলন করে খালে ফেলে দেয়া হয়েছে। বালু দিয়ে রাস্তার আংশিক কাজ করা হয়েছে। রঞ্জনের বাড়ির পর থেকে সোনাখালি পর্যন্ত নির্মিত ২ হাজার মিটার রাস্তার অধিকাংশ জায়গা পানির নীচে চলে গেছে। এখানে নৌকা চলাচল করছে। এ রাস্তা আমাদের কোন কাজে আসছেনা। রাস্তা আমাদের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। খাল খনের মাটি খাল পাড়ে রাখা হয়েছে। এ মাটিকেই রাস্তা দাবি করেছে রাস্তা নির্মাণকারীরা। তারাইল গ্রামের অনন্ত কুমার বাইন(৬২) বলেন, রাস্তা নির্মাণের জন্য আমরা জমি দিয়েছি। পোল্ট্রি সেড ভেঙ্গেছি। পুকুর ও ঘেরের জায়গা দিয়েছি। ৬ নং ওয়ার্ড মেম্বর নির্মল বিশ^াসের অনুরোধে এসব দিয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাস্তা হয়নি। দ্রুত রাস্তার কাজ সমাপ্ত করে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। একই গ্রামের মিলন বাইন(৩৮) বলেন, এই রাস্তায় প্রায় ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। এ টাকার মাটি কেটে পাহার সমান রাস্তা বনানো যায়। কিন্তু এ রাস্তার হাইট অনেক কম হয়েছে। তাই সামান্য বর্ষায় রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। রাস্তা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য ও পিঞ্জুরীর ৬নং ওয়ার্ড মেম্বর নির্মল বিশ^াস বলেন, তারইল সোনাখালি প্রকল্প এলাকাটি নিচু ও বিলবেষ্টিত। রাস্তার কাজ শুরুর পর পানি এসে যায়। তাই কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। পানি চলে গেলে শুস্ক মৌসুমে আমরা বাকী কাজ করে দেব। বাহির শিমুল গ্রামের রজ্জ শেখ(৬৫) বলেন, বাহির শিমুল গ্রামের ৭ শ’৮৫ মিটার রাস্তার সধ্যে মধ্যে ২ শ’ মিটারের কাজ হয়নি। এমনকি ওই সড়কের অন্তত ৫০ মিটার জায়গা তলিয়ে গেছে। এছাড়া সড়কের একটি অংশের ইট তুলে ফেলা হয়েছে। পিঞ্জুরী ইউপির ২ নং ওয়ার্ড মেম্বর পনিরুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, মালেক মাস্টারের বাড়ির রাস্তার কাজ শেষ না করেই চুড়ান্ত বিল উত্তোলন করে দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আবু ছাইদ সিকদার। এ রাস্তাগুলোর অনেক অংশ ডুবে গেছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও পিঞ্জুরী ইউপির সংরক্ষিত মহিলা আসনের মেম্বর শেফালী মন্ডল বলেন, চেয়ারম্যান আবু ছাইদ আমাকে নামে মাত্র প্রকল্প সভাপতি করেছেন। সব কাজ করেছেন চেয়ারম্যান। টাকাও চেয়ারম্যান নিয়েছেন। এ বিষয়ে আমি আর কিছুই জানিনা। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও পিঞ্জুরী ইউপি চেয়ারম্যান আবু ছাইদ সিকদার সব কাজ সমাপ্ত হয়েছে দাবি করে বলেন, আমরা কাজের চুড়ান্ত বিল তুলে নিয়েছি। বিল এলাকার ওই কাজে রাস্তার উচ্চতা ধরা হয়েছে ৭ ফুট। নতুন নির্মিত মাটির রাস্তার উচ্চতা ৭ ফুটের বেশি করা হয়েছে। বিলে সাধারণত ১০ থেকে ১২ ফুট পানি হয়। তাই রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। বাহিরশিমুল গ্রামের ৫০ মিটার প্রকল্প-পরিচালক কমিয়ে দিয়েছে। বাহিরশিমুল গ্রামের ওই প্রকল্পে আমরা অতিরিক্ত ২ লাখ ঘনফুট বেশি বালু লেগেছে। এছাড়া মালেক মাস্টারের বাড়ির রাস্তার কাজও ভাল হয়েছে। প্রতিপক্ষরা আমরা বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে। কোটালীপাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুর রহমান এ ব্যাপারে গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। তবে বিষয়টি সম্পর্কে তার দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলীর কাছ থেকে জেনে পরে জানাতে পারবেন বলে গণমাধ্যম কর্মীদের জানান।