শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে ১৯ গাইডলাইন
আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল খুলে দেওয়া হলেও সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখবে সরকার। রবিবার ৬ সেপ্টেম্বর রাতে একাত্তর টেলিভিশন আয়োজিত টকশো ‘একাত্তর জার্নাল’-এ অংশ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মণি এ তথ্য জানিয়েছেন। মিথিলা ফারজানার সঞ্চালনায় এদিনের আলোচনায় আরও অংশ নেন ডয়চে ভেলে-র বাংলাদেশ প্রতিনিধি হারুন উর রশীদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আকসাদুল আলম। অনুষ্ঠানে দীপু মণি বলেন, আন্তমন্ত্রণালয় সভায় অনেকগুলো সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর আগে কোভিড ১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আন্তমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিষ্ঠানগুলেতে স্বাভাবিক কার্যক্রমে যাওয়ার চেষ্টা করা হবে। শুরুতে স্কুলের সময় সীমিত হবে। প্রথম দিকে হয়তো চার ঘণ্টা দিয়ে শুরু করা হবে। পর্যায়ক্রমে সময়ের এই পরিসর আরও বাড়বে। তিনি বলেন, ২০২১ ও ২০২২ সালে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং প্রাথমিকের ক্ষেত্রে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা প্রতিদিনই ক্লাস করবে। এর বাইরে একেক দিন একেক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা একেক দিন ক্লাস করবে। সরকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখবে। প্রতিদিন প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি বাধ্যতামূলক প্রতিবেদন পাঠায় তার ব্যবস্থা করা হবে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনায় জনস্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণি কার্যক্রম চালু করতে প্রস্তুতি সংক্রান্ত সংশোধিত গাইডলাইন প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। গত রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) এই গাইডলাইন প্রকাশ করা হয়। এর আগে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর ১৯ দফা নির্দেশনা প্রকাশ করেছিল। ওই নির্দেশনা সংশোধন করে তা রবিবার প্রকাশ করা হয়। কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে গত বছর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। দেশের সকল মাধ্যমিক, স্কুল, কলেজ, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রস্তুত করার জন্য সংশোধিত গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে গাইডলাইন প্রকাশ সংক্রান্ত আদেশে। আদেশে বর্তমানে কোভিড সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আসতে শুরু করায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যথাযথভাবে পালন করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
১৯ দফা নির্দেশনা: ১) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখসহ অন্যান্য স্থানে কোডিড-১৯ অতিমারি সম্পর্কিত স্বাস্থ্যবিধি পালনে করণীয় বিষয়সমূহ ব্যানার বা অন্য কোনও উপায়ে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে।
২) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে সকল শিক্ষক, কর্মচারী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা ও তা পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করা। ৩) শিক্ষার্থীদের ভিড় এড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানের সবগুলো প্রবেশমুখ ব্যবহার করার ব্যবস্থা। আর যদি কেবল একটি প্রবেশমুখ থাকে সেক্ষেত্রে একাধিক প্রবেশমুখের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা। ৪) প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণি কার্যক্রমে স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা করা।
৫) প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিষ্ঠানে অবস্থান করবে এবং বাসা থেকে যাওয়া-আসা করবে সে বিষয়ে শিক্ষণীয় ও উদ্বুদ্ধকারী ব্রিফিং দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের ভিডিও প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা। ৬) প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে প্রস্তুত রাখা। ৭) প্রতিষ্ঠানের সব ভবনের কক্ষ, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ এবং আঙিনা যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করা। ৮) প্রতিষ্ঠানের সব ওয়াশরুম নিয়মিত ও সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখা এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা করা। ৯) প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী এবং অভিভাবক প্রবেশের সময় সরকারের দেওয়া স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালনের ব্যবস্থা করা। ১০) প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীর সঠিকভাবে মাস্ক (সম্ভব হলে কাপড়ের মাস্ক) পরিধান করার বিষয়টি নিশ্চিত করা। ১১) প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্থানে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দ্বারা হাত ধোয়ার এমন ব্যবস্থা করা যাতে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ঢোকার আগে সবাই সাবান দিয়ে হাত ধুতে পারে।
১২) শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করা। এক্ষেত্রে পারস্পারিক ৩ (তিন) ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করা। ১৩) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ, ড্রেন ও বাগান যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কোথাও পানি জমে না থাকে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা।
১৪) প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা নিরূপণ করা। ১৫) প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা। ১৬) স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করা হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ ও বাস্তবায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকবৃন্দের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করা।
১৭) প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত করা।
১৮) প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত মেরামত, বৈদ্যুতিক মেরামত এবং পানি সংযোগজনিত মেরামত সম্পন্ন করা। ১৯) প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে এতদসংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, গত বছর ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হলে ওই বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় সরাসরি শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সরকারের সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হবে।