পড়ালেখা শেষ করে রাজধানী ঢাকায় একটি প্রাইভেট কোম্পানীতে কয়েক বছর চাকরি করেছেন তিনি। যা বেতন পান তাতে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। সংসারে টানাপোড়েন লেগেই থাকে। তাই চাকরি ছেড়ে এলাকায় এসে ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেন। শ্রমিকদের বেতন দিয়ে হিসাব করে মাস শেষে খুব বেশি টাকা থাকে না। তখন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো কিভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায়। এমন চিন্তা থেকে পাহাড়ে দুই একর জায়গা লিজ নিয়ে ২০১৮ সালে ফলের বাগান শুরু করেন তিনি। এক বছর পরই গাছে ফল আসা শুরু হয়। গল্পটি হচ্ছে চট্টগ্রাম জেলার মিরসরাইয়ে মালটা চাষে স্বাবলম্বী হওয়া আকবর হোসেন জীবন নামে এক যুবকের। তিনি উপজেলার খিলমুরারী এলাকার মনির আহমেদ মাস্টারের পুত্র। পাহাড়ের বুকে গড়ে তুলেছেন ‘ফিউচার এগ্রো হোমস’ নামে সমন্বিত ফলের বাগান। যা প্রেরণা যোগাচ্ছে বেকার যুবকদের। দৃঢ় মনোবল আর কঠোর পরিশ্রমের কারণে আকবর এখন সফল উদ্যোক্তা। তাঁর বাগানে ফরমালিনমুক্ত সুস্বাদু ফল যাচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। সরেজমিনে ‘ফিউচার এগ্রো হোমস’ এ গিয়ে দেখা গেছে, পাহাড়ের ঢালুতে গাছের মধ্যে থোকায় থোকায় ঝুলছে মালটা। বাগানে আরো রয়েছে পাকা আধা পাকা পেঁপে ও পেয়ারা আরো রয়েছে লিচু ও ড্রাগন ফলের গাছ। আকবর হোসেন জানান, পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরি, ছোটখাটো ব্যবসা কিছুতেই আমার মন বসছে না। এরপর ওমান যাওয়ার জন্য দ্রত পাসপোর্ট বানিয়েছি, মেডিকেল করে রিপোর্ট পাঠিয়েছি কিন্তু ভিসা না হওয়ার কারণে যেতে পারিনি। মন স্থির করলাম দেশে কিছু একটা করা প্রয়োজন। তখনই ২০১৮ সালে বাড়ির পূর্বপাশে পাহাড়ে দুই একর জায়গা লীজ নিয়ে বিভিন্ন ফলের চারা রোপন করলাম। ২৫০ পিস বারি-১ ও বাউ-৩ গ্রীণ মাল্টা, ১শ’ পিস পেয়ারা, ২শ’ পিস রেডলেডি, ফাষ্টলেডি পেঁপে, থাই পেয়ারা, ১শ’ পিস লেবু, কিছু চায়না-৩ লিচু চারা রোপণ করেছি। এক বছর পরই গাছে ফলন এসেছে। চলতি বছর পেয়ারা বিক্রি করেছি ৭০ হাজার টাকার এবং বছর মাল্টা বিক্রি শুরু করেছি। এই পর্যন্ত প্রায় ১ লক্ষ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেছি এবং গাছে যে পরিমাণ মাল্টা রয়েছে আরো প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবো বলে আশাবাদী। আমার বাগানের ফলে কোন ধরনের মেডিসিন ও ফরমালিন ব্যবহার করা হয় না। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে আগামী বছর তাহলে আমি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। তিনি আরো জানান, আমি ইউটিউব চ্যানেলে দেখে দেখে সব শিখেছি। কিভাবে চারা রোপণ করতে হবে, কিভাবে পরিচর্চা করতে হবে। সহযোগিতার জন্য উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করলে তারা সার্বিক সহযোগিতা করবেন আশা প্রকাশ করেন। এই পর্যন্ত তার বাগানে প্রায় ১১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আগামীতে আমার আরো পরিকল্পনা রয়েছে। এই বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, পাহাড়ী অঞ্চল হওয়ায় কিছুটা পানির সংকট রয়েছে সেই কারণে ফলন ও তুলনা মূলক কম হয়েছে। তবে আমি সরেজমিনে কয়েকবার পরিশদর্শন করে কৃষক আকবর হোসেন জীবনকে পরামর্শ ও সহযোগিতা আশ্বাস দিয়ে এসেছি। এই উদ্যেক্তা ধারাবাহিকতা বজায় রাখলে ভবিষ্যৎতে আরো ফলন বাড়বে বলে আশা করছি।