বিশেষ সাক্ষাৎকারে আবদুস সালাম
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে যাওয়ার চিন্তা করছে বিএনপি। কিন্তু আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র ঢাকাতেই আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছে বারবার। তবে এখন দলের অঙ্গ-সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। রাজধানীতে আন্দোলনে গড়ে তুলতে অনেকটা ভরসা রাখছে আবদুস সালামের ওপরে। এজন্য নগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে তাকে দক্ষিণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে সক্রিয় তিনি। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি, আন্দোলন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং কমিটি গঠনসহ নানা বিষয়ে বাংলাদেশ জার্নালের সঙ্গে কথা হয় আবদুস সালামের। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন কিরণ শেখ। বাংলাদেশ জার্নালের সৌজন্যে দৈনিক খবরপত্রের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি পত্রস্থ করা হলো।-বার্তা সম্পাদক
বাংলাদেশ জার্নাল: ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপিকে নিয়ে আপনার কর্মপরিকল্পনা কি?
আবদুস সালাম: এখন শুধু নগর বিএনপি নয়, সারাদেশে পরিকল্পনা একটাই। সেটা হচ্ছে- আজকে এই সরকারের অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নে দেশবাসী অতিষ্ট। সরকার বিভিন্ন পেশার মানুষদের দমন-পীড়নের নামে যে নতুন নতুন আইন তারা করছে। সেই আইনে কারণে সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক এবং সমাজের কোন স্তরের মানুষ আজকে এই সরকারের অত্যাচার থেকে রেহাই পাচ্ছে না। সেটার কারণ একটাই, এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। তাই জনগণের প্রতি তাদের আস্থা নেই। আর জনগণও এই সরকারকে বিশ্বাস করে না। এধরণের একটা অবস্থায়ই দেশ চলছে। এর মধ্যেই বর্তমান সরকারের প্রধান আগামী নির্বাচন সম্পর্কে তার দলের প্রস্তুতির ঘোষণা দিয়েছেন। তখন আমরা সঙ্কিত। যখন বিরোধী দলকে কোন রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না এবং সভা-সমাবেশ করারও সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। তখন সরকার গত নির্বাচনের মতো যেনতেনভাবে একটা নির্বাচন দেখিয়ে তাদের সময়কাল বাড়ানোর ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, এখন আমাদের একটাই কথা, এই সরকারের অধীনে আমরা কেউ নিরাপদ না। কোন মানুষ যেমন নিরাপদ না, তেমনি গণতন্ত্রও নিরাপদ না। মানুষের ভোটাধিকার নিরাপদ না। বিচারবিভাগ নিরাপদ না এবং শিক্ষাঙ্গনও নিরাপদ না। অর্থ্যাৎ সমস্ত রাষ্ট্র ব্যবস্থা এই সরকারের অধীনে নিরাপদ না। তাদের ইচ্ছা মতো সংবিধানকে তারা পরিবর্তন করেছে। তাদের ইচ্ছা মতো সাংবাদিকদের কলম বন্ধ করার জন্য নতুন আইন পাশ করেছেন। তাদের ইচ্ছা মতো সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে লুটপাট চলছে। এর বিরুদ্ধে যাতে কেউ কথা বলতে না পারে- সেটার জন্য তারা আইন পাশ করেছে। অর্থ্যাৎ এই সরকার যেহুতু জনবিচ্ছিন্ন, তাই জনগণকে বাদ দিয়েই তাদের আগামী নির্বাচনটা কিভাবে পার করা যায়, সেটার জন্য এখনই পরিকল্পনা করছে। কিন্তু আমাদের পরিস্কার কথা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনভাবেই এই সরকার পার দিতে পারবে না। এজন্য দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন পেশার মানুষসহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে সেটাকে প্রতিহত করা হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল: আগামী নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে হলে তা প্রতিরোধ করার কথা আপনারা বলছেন। কিন্তু একাদশ নির্বাচনে আপনারা দলীয় সরকারের অধীনেই অংশগ্রহণ করেছিলেন, এবার কেনো প্রতিরোধ করার কথা বলছেন?
আবদুস সালাম: গতবারের নির্বাচনের যাওয়ার পেছনে কিছু কারণ ছিলো। যেহুতু ২০১৪ সালের নির্বাচনে আমরা অংশগ্রহণ করি নাই। যৌক্তিক কারণেই আমরা যায়নি। কারণ আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে কোন লাভ হবে না। তখন দেশ-বিদেশে অনেকেই বলেছিলো, বিএনপি নির্বাচনে যেতে ভয় পায়। আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন স্বচ্ছ হবে না এবং জনগণ ভোট দিতে পারবে না। সরকারও বলেছিল, আমরা ভয়ে নির্বাচনে যায়নি বা যাচ্ছি না। তাই প্রমাণ (আওয়ামী লীগের অধীনে যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না) দেখতেই আমাদেরকে গত নির্বাচনে যেতে হয়েছে।
বাংলাদেশ জার্নাল: রাজধানীতে নগর বিএনপির বিগত কমিটিগুলো আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়েছে, নতুন কমিটিও কি সেই পথে হাঁটবে?
আবদুস সালাম: বিচ্ছিন্নভাবে দেখলে হবে না। ঢাকার শহরে ২০১৩-১৪ সালের আন্দোলন দেখেছেন, সেই আন্দোলনটা কি ছিলো? সেই আন্দোলনটা এমন ছিলো যে, তখন বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলতে বাধ্য হয়েছিলেন যে, এটা একটা নিয়মরক্ষার নির্বাচন, দরকার হলে আরেকটা নির্বাচন আমরা দেবো। তখন ঢাকার সাথে সারা বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন ছিলো। ব্যবসায়ীরা মালামাল চট্রগ্রামে পাঠাতে পাচ্ছিলেন না। তখন তারাও চাচ্ছিলেন এবং ধর্না দিচ্ছিলেন যে, এই সমস্যার সমাধান করা হোক। এই রকম আন্দোলন তো বাংলাদেশে হয়েছে।
তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন গতবারের মতো তো হবে না। বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। শুধু বিএনপি না, কোন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে যাবে না।
বাংলাদেশ জার্নাল: সরকার পতনে আপনারা একদফার আন্দোলনের কথা বলছেন, কবে নাগাদ রাজপথের নামছেন?
আবদুস সালাম: সময়ই বলে দেবে। আমরা সরকারকে এখনো বলছি যে, তাদের বোধোদয় হোক। কারণ এটা আন্দোলনের প্রশ্ন না। গণতন্ত্রের কথা আমরা বলছি। এদেশের জনগণ আন্দোলন করে এবং রক্ত দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করেছে। আজকে গণতন্ত্র নাই। আর গণতন্ত্র শুধু বিএনপির জন্য নয়, আওয়ামী লীগের জন্যও দরকার। এক সময় আওয়ামী লীগও ক্ষমতায় থাকবে না। তখন এই আওয়ামী লীগকেই গণতন্ত্রের জন্য আবার লড়াই করতে হবে। তাই আমরা পরিস্কারভাবে শেষবার বলছি, এখনো সময় আছে গণতন্ত্র ফ্রি করে দেন। কারণ যদি গণতন্ত্র না থাকে তাহলে সে দেশের স্বাধীনতা মূল্যহীন হয়ে দাঁড়ায়।
বাংলাদেশ জার্নাল: সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠিত হওয়া উচিত বলে মনে করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। এবিষয়ে আপনার মতামত কি?
আবদুস সালাম: নির্বাচন কমিশন এখন আমাদের কাছে কিছু না। কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সেটাই আমাদের প্রশ্ন। কারণ যদি দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকে তাহলে তার অধীনে শুধু নির্বাচন কমিশন কেনো- প্রশাসনের কোন অঙ্গই স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। তাই আগে নিশ্চিত হতে হবে, কোন সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল: আপনি বলছেন, নির্বাচন কমিশন কোন বিষয় না। বলছেন, নির্বাচনকালীন সরকারটাই মূল বিষয়, তাহলে বর্তমান সমস্যা সমাধানে যদি সরকার আপনাদেরকে আলোচনায় ডাকে আপনারা সাড়া দেবেন?
আবদুস সালাম: আমরা বলেছি, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন, বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বসেন। কিভাবে আপনারা ক্ষমতা ছাড়বেন, ক্ষমতা কার হাতে ছাড়বেন, কোন সরকার ক্ষমতায় থাকবে এবং কার অধীনে নির্বাচন হবে- এসবসহ সকল বিষয়ে আলোচনা হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল: ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়ে, কবে নাগাদ পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেয়া হবে?
আবদুস সালাম: কমিটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং চলছে। ইতিমধ্যে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে গণসংযোগ করা হচ্ছে এবং কমিটি নিয়ে বসা হচ্ছে। আর প্রথমে আমরা ওয়ার্ড কমিটি করবো, পরে থানা কমিটি এবং এরপরে মহানগর কমিটি করা হবে।