অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জন্য ১ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনা খাতে ব্যয় ধরা হয় ৪১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা। বাকি অর্থ অন্যান্য খাতে ব্যয় হবে। এর আগে ২০২০-২১ সালের সংশোধিত বাজেটে ১ হাজার ৭৯৬ কোটি বরাদ্দ দেয়া হয়। সম্প্রতি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে অতিরিক্ত অর্থ চেয়ে চিঠি লিখেছেন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। তবে অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বাজেট প্রণয়নের সময় নির্বাচনী ব্যয় খাতে কমিশনই ৮৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল। পরে তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই ৪১৪ কোটি টাকা চূড়ান্ত করা হয়। এখন তারা বলছে দেড় হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। এমনিতেই মহামারীর প্রভাবে সরকারের রাজস্ব আয় কম। আবার এ মহামারী কতদিন চলবে তাও কারো জানা নেই। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ খরচের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন বিধিনিষেধ দেয়া আছে। এ অবস্থায় বরাদ্দের তিন গুণ অর্থ অতিরিক্ত দেয়া সম্ভব নয়। অর্থসচিব সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন বিভাগটির কর্মকর্তারা।
নভেল করোনাভাইরাসজনিত নানা বিধিনিষেধ ও মহামারীর কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৮০০টি স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। চলতি অর্থবছর ওইসব নির্বাচনের পাশাপাশি জাতীয় সংসদের শূন্য আসনের উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন, উপজেলা-জেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ ও উপনির্বাচনসহ প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নির্বাচনের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। এসব নির্বাচনের জন্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করেই বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৪১৪ কোটি টাকা। কিন্তু এখন কমিশন বলছে, এসব নির্বাচনের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয় হবে। তাই এ খাতে বরাদ্দের প্রায় তিন গুণ বা ১ হাজার ৮৯ লাখ টাকা অতিরিক্ত চেয়েছে কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে জাতীয় শূন্য আসনের উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ সাধারণ ও উপনির্বাচনসহ প্রায় ৪ হাজার ৪৭১টি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সিদ্ধান্ত থাকলেও কভিড-১৯-এর কারণে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৮০০টি স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। এগুলোও এ বছর অনুষ্ঠিত হবে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বিশেষ কার্যক্রম নির্বাচন খাতে ৮৬৪ কোটি ৮৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকা প্রাক্কলিত বাজেট বরাদ্দের চাহিদা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনী ব্যয় খাতে ৪১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৪১ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু গত অর্থবছরে অনুষ্ঠিত না হওয়া নির্বাচনসহ চলতি অর্থবছরে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সাধারণ ও উপনির্বাচন পরিচালনা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যয় বাবদ ১ হাজার ৫০৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। তাই বরাদ্দকৃত ৪১৪ কোটি ৪৭ লাখ ৪১ হাজার টাকার চেয়ে অতিরিক্ত ১ হাজার ১৭ কোটি ৩৮ হাজার টাকা প্রয়োজন।
কমিশন থেকে পাঠানো চিঠিসহ অন্য কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে মোট ৪ হাজার ৩০০টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ৫০০ ইউনিয়নের নির্বাচন হবে ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) পদ্ধতিতে। বাকি ৩ হাজার ৮০০ ইউনিয়নের নির্বাচন হবে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে ব্যালট পেপারের তুলনায় ইভিএমে নির্বাচনী ব্যয় তুলনামূলক বেশি। প্রতিটি ইউনিয়নে ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এ হিসেবে ৫০০টি ইউনিয়নের নির্বাচনে ব্যয় হবে ১৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। প্রতিটি ইউনিয়নে ব্যালট পেপারে নির্বাচনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। সে অনুযায়ী ৩ হাজার ৮০০টি ইউনিয়নের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা।
চলতি অর্থবছরে দুটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ইভিএমের মাধ্যমে দুটি সিটি করপোরেশনে নির্বাচনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। জাতীয় সংসদের ১৫টি শূন্য আসনে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ইভিএমের মাধ্যমে প্রতিটি শূন্য আসনে নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫০ টাকা। এ হিসেবে ১৫টি আসনে নির্বাচনী ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি ৬৭ লাখ ৫ হাজার ৭৫০ টাকা। প্রতিটি উপজেলায় ইভিএমের মাধ্যমে নির্বাচনের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরে ৪০টি উপজেলা নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১ কোটি ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া এ বছর ৬৪টি জেলা পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ইভিএমের মাধ্যমে প্রতিটি জেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে ৬৪টি জেলা পরিষদ নির্বাচনে ব্যয় হবে ২০ কোটি ২৬ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এছাড়া এ বছর ৫০টি পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইভিএমের মাধ্যমে প্রতিটি পৌরসভা নির্বাচনে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। সে হিসেবে ৫০টি পৌরসভা নির্বাচনে ব্যয় হবে ৮৫ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, চলতি অর্থবছরেই প্রায় সাড়ে চার হাজার নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। এসব নির্বাচন অনুষ্ঠানে আমরা ব্যয় যেটি পাঠিয়েছি সেটিই প্রয়োজন। এ খরচের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যয়ও ধরা হয়েছে। আশা করছি অর্থ বিভাগ আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী অর্থ দেবে। কারণ আমাদের ব্যয়টি যথাযথই আছে। এছাড়া সময় অনুযায়ী নির্বাচনও সম্পন্ন করতে হবে।