গতকাল রোববার বাজে ফিল্ডিংয়ের কারণে শ্রীলঙ্কার কাছে বাংলাদেশ হারলো । প্রথম রাউন্ডের গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার টুয়েলভে শ্রীলঙ্কা, আর অন্য গ্রুপের রানার্স আপ হয়ে মূল পর্বে বাংলাদেশ। উপমহাদেশীয় দুই প্রতিপক্ষ গতকাল রোববার মুখোমুখি হয়েছিল। শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংএ ছিল বাংলাদেশ। টস জেতার পর ফিল্ডিং নেওয়া প্রসঙ্গে লঙ্কা অধিনায়ক দাসুন শানাকা বললেন, ‘আইপিএলের পর উইকেট কিছুটা মন্থর। প্রস্তুতি ম্যাচ ও তিনটি ম্যাচ জিতে দলের পরিবেশ সত্যিই ভালো। মাহিশ ঠিকশানা ফিট নয়। তার জায়গায় এসেছে বিনুরা ফার্নান্ডো।’ ব্যাটিং পেয়ে খুশি মাহমুদউল্লাহ, ‘আমরা ব্যাটিং করতে চেয়েছিলাম। কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। আশা করি এটা ব্যাট করার জন্য ভালো। প্রথম হারের পর স্বস্তি এসেছে দলে। ছেলেরা শিথিল আছে। আমাদের একটি পরিবর্তন। তাসকিন খেলছে না।’ প্রতিপক্ষ চেনা, শারজার উইকেট দেখেও অনেকটা চেনা চেনা ঠেকছে। বাংলাদেশ কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর কাছে ঢাকার পিচ মনে হচ্ছে। তাতে স্বাভাবিকভাবে প্রত্যাশা থাকবে ঘরের মাঠে বাংলাদেশ যে পারফরম্যান্স করে, সেটাই যেন করে তারা। এক্ষেত্রে বল হাতে স্পিনার সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। আজ সফল হলে মূল পর্বে দ্বিতীয় জয়ের দেখা পাবে বাংলাদেশ। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছিল তারা।
শ্রীলঙ্কা ১৮.৫ ওভারে ১৭২/৫ (আসালানকা ৮০* ও শানাকা ১* ;ভানুকা ৫৩, হাসারাঙ্গা ৬, আভিষ্কা ০, নিশানকা ২৪, কুশল ১) বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৭১/৪ ( মাহমুদউল্লাহ ১০* ও মুশফিক ৫৭*; আফিফ ৭, নাঈম ৬২, সাকিব ১০, লিটন ১৬)
অবশেষে অস্বস্তিকর জুটি ভাঙলেন নাসুম আহমেদ। ৫২ বলে ৮৬ রানের জুটি ভাঙলেন ভানুকা রাজাপাকসাকে বোল্ড করে। ৩১ বলে ৩ চার ও ৩ ছয়ে ৫৩ রান করেন লঙ্কান ব্যাটসম্যান। ততক্ষণে দলও পৌঁছে গেছে জয়ের খুব কাছাকাছি। একই ওভারের পঞ্চম বলে আসালানকা ৪ মেরে দলকে জেতান ৫ উইকেটে।
লিটনের দেওয়া জীবনে ভানুকা-আসালানকার দাপট: ১৫ রানে ভানুকা রাজাপাকসা আর ৬৩ রানে চারিথ আসালানকা জীবন পেয়েছেন লিটন দাস ক্যাচ ফেলায়। এই সুযোগ নষ্ট করেনি শ্রীলঙ্কার দুই ব্যাটসম্যান। এছাড়া সাইফউদ্দিনের ১৬তম ওভারে ভানুকা দুটি করে ছয় ও চার মেরে ২২ রান তুলে ম্যাচ বের করে নিয়েছেন। ১৮তম ওভারে ২৮ বলে ফিফটি করেন তিনি।
আসালানকার ফিফটি আর ক্যাচ মিসে অস্বস্তিতে বাংলাদেশ: চারিথ আসালানকা ফিফটি আর লিটন দাস ক্যাচ মিসের পর আবার অস্বস্তিতে বাংলাদেশ। ১৩তম ওভারের প্রথম বলে আফিফ হোসেনের বলে ছক্কা মারেন ভানুকা রাজাপাকসা। দুই বল পরে স্কয়ার লেগে লিটনের হাত ফসকে চার হয় তার, ১৫ রানে জীবন পান তিনি। পঞ্চম বলে ফিফটিতে পৌঁছান আসালানকা। ৩২ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। বিপদজনক হয়ে ওঠা আসালানকাকে ১৫তম ওভারে ৬৩ রানে জীবন দেন লিটন। কভারে উড়ে আসা বল হাতে নিতে পারেননি।
শ্রীলঙ্কাকে চেপে ধরেছে বাংলাদেশ: প্রথম ওভারে নাসুম আহমেদ উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল শ্রীলঙ্কা। সাকিব আল হাসান জোড়া আঘাত হানেন। তাতে হঠাৎ করে চাপে পড়েছে লঙ্কানরা, যা আরো বেড়েছে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ৬ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরলে।
সাকিবের জোড়া আঘাত: খুব অস্বস্তিতে ছিল বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসান ফেরালেন স্বস্তি। একপ্রান্তে চারিথ আসালানকা ঝড় তুলছিলেন। তার সঙ্গে সমানতালে ছোটার চেষ্টা ছিলেন পাথুম নিশানকা। নবম ওভারের প্রথম বলে তাকে ফিরিয়ে ৪৫ বলে ৬৯ রানের জুটি ভাঙলেন বাঁহাতি স্পিনার। ২১ বলে ২৪ রান করে সাকিবের কাছে বোল্ড হন নিশানকা। চতুর্থ বলে আভিষ্কা ফার্নান্ডো খালি হাতে ফিরেন বোল্ড হয়ে।
শুরুর ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াল শ্রীলঙ্কা: বল হাতেও কী দারুণ শুরু বাংলাদেশের। চতুর্থ বলেই ওপেনার কুশল পেরেরাকে ফেরান নাসুম আহমেদ। তারপরই ঘুরে দাঁড়ালো শ্রীলঙ্কা। চারিথ আসালানকা ও পাথুম নিশানকার জুটি ৩২ বলে ৫২ রান করে ফেলেছে। আসালানকা দুটি করে চার ও ছক্কা মেরেছেন। নিশানকাও মারেন একটি করে চার ও ছয়। তাতে পাওয়ার প্লেতে লঙ্কানদের রান ১ উইকেটে ৫৪। এই সময়ে বাংলাদেশ ১ উইকেটে ৪২ রান করেছিল।
নাসুম চতুর্থ বলেই উইকেট পেলেন: তাসকিন আহমেদের জায়গায় খেলতে এসেছেন নাসুম আহমেদ। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ। এমন উপলক্ষ স্মরণীয় করতে দেরি করলেন না বাংলাদেশি স্পিনার। ইনিংসের চতুর্থ বলেই উইকেট নিলেন। কুশল পেরেরাকে বোল্ড করেছেন তিনি। ১০০ কিলোমিটার গতির বল ফোর্থ স্টাম্প বরাবর রাখেন। তা থামাতে পারেননি কুশল। ১ রানে বোল্ড তিনি।
মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরির পর আফিফ আউট: আফিফ হোসেনকে নিয়ে বড় প্রত্যাশা। কিন্তু তা পূরণ করতে পারছেন না তিনি। প্রথম রাউন্ডে ১৮, ১ ও ২১ রান করেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৭ রান করে রান আউট হলেন লাহিরু কুমারার সরাসরি থ্রোতে।
হাফ সেঞ্চুরি করলেন মুশফিক: মুশফিকের হাফ সেঞ্চুরি। ৩২ বল খেলে চারটি ৪ ও দুটি ছয়ে ফিফটি করলেন তিনি। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে একটি সিঙ্গেল নিয়ে উদযাপন করেন মুশফিক।
দারুণ ইনিংস খেলে প্যাভিলিয়নে নাঈম: দারুণ আরেকটি ইনিংস উপহার দিয়ে বিদায় নিলেন মোহাম্মদ নাঈম। ওমানের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৬৪ রানের ইনিংস। পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে শূন্য হাতে ফিরলেও সুপার টুয়েলভেও হাসল তার ব্যাট। ৪৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেন। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৫১ বলে ৭৩ রানের জুটি গড়ে দলকে শক্ত সংগ্রহ এনে দিয়ে আউট তিনি। ১৭তম ওভারের প্রথম বলে বিনুরা ফার্নান্ডোকে ফিরতি ক্যাচ দেন। ৫২ বলে ৬ চারে ৬২ রান করেন নাঈম। উদ্বোধনী জুটিতে লিটন দাসের সঙ্গে ৪০ রান করেন তিনি।
চার মেরে হাফ সেঞ্চুরি নাঈমের: লিটন ও সাকিব দ্রুত ফিরে গেলেও মুশফিকুর রহিম উপযুক্ত সঙ্গ দিচ্ছেন মোহাম্মদ নাঈমকে। দুটি ছক্কা মেরেছেন তিনি। নাঈম চতুর্থ চার মেরে হাফ সেঞ্চুরি উদযাপন করেন ৪৪ বল খেলে। একই সঙ্গে দল একশ পার করেছে।
১০ রান করে আউট সাকিব: পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে ব্যাটে-বলে দারুণ পারফর্ম করা সাকিব আল হাসান সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরতে পারলেন না। সপ্তম ওভারে চারিথ আসালানকাকে দুটি চার মেরেছিলেন। কিন্তু পরের ওভারে চামিকা করুণারতেœর বলে বোল্ড হন। ৭ বলে ১০ রান করেন সাকিব।
লিটন-লাহিরুর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় : লাহিরু কুমারার বল একটু বাঁয়ে সরে এসে ড্রাইভ করলেন লিটন দাস। মিড অফ দিয়ে বল যাওয়ার কথা। সেখানে মাথার উপর দিয়ে বল যেতে দিলেন না দাসুন শানাকা। শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক ধরে ফেললেন। আউট লিটন। হঠাৎ করে ক্যামেরা চলে গেল লিটন আর লাহিরুর দিকে। দুজনের তর্কাতর্কি। নাঈম লিটনের পেছন থেকে এসে ধাক্কা দেন লাহিরুকে। দুজনকে ছাড়াতে শেষ পর্যন্ত আম্পায়ারদের হস্তক্ষেপ করতে হয়। প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে ম্যাচ রেফারির রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত।
পাওয়ার প্লে শেষ করতে পারেননি লিটন: আশা জাগানিয়া শুরু হয়েছে বাংলাদেশের। টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে সুবিধা করতে পারছে না শ্রীলঙ্কা। মোহাম্মদ নাঈম ও লিটন দাসের উদ্বোধনী জুটি সতর্ক ছিলেন। পাওয়ার প্লের ৬ ওভার কোনো উইকেট না হারিয়ে শেষ করার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু লাহিরু কুমারার পঞ্চম বলে মিড অফে দাসুন শানাকাকে ক্যাচ দেন লিটন। ১৬ বলে ২ চারে ১৬ রান করেন তিনি। পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৪২ রান বাংলাদেশের।
স্বস্তি ফেরাচ্ছেন নাঈম-লিটন: স্বস্তি ফেরাচ্ছেন মোহাম্মদ নাঈম ও লিটন দাস। চার ওভার শেষে ২৯ রান যোগ হয়েছে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে। তৃতীয় ও চতুর্থ ওভারে একটি করে বাউন্ডারি মেরেছেন নাঈম। দুটি চার মেরেছেন লিটনও।
ধীর ব্যাটিংয়ে শুরু বাংলাদেশের: মোহাম্মদ নাঈম ও লিটন দাস আবারো উদ্বোধনী জুটিতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওভারে ২ রান করেছেন তারা। তৃতীয় বলে চামিকা করুণারতেœর স্কয়ারে পাঠিয়ে রানের খাতা খোলেন মোহাম্মদ নাঈম। পরের ওভারে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। বিনুরা ফার্নান্ডোর চতুর্থ বলে ফাইন লেগ দিয়ে চার মারেন লিটন। ২ ওভার শেষে রান ৯।
বাংলাদেশ স্কোয়াড: মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, লিটন দাস, মেহেদী হাসান, মোহাম্মদ নাঈম, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মুশফিকুর রহিম, মোস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ, নুরুল হাসান সোহান, সাকিব আল হাসান।
শ্রীলঙ্কা স্কোয়াড: দাসুন শানাকা (অধিনায়ক), চারিথ আসালানকা, দুষ্মন্ত চামিরা, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, বিনুরা ফার্নান্ডো, আভিষ্কা ফার্নান্ডো, চামিকা করুণারতেœ, লাহিরু কুমারা, পাথুম নিসানকা, কুশল পেরেরা, ভানুকা রাজাপাকসা।