বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের বেতন-ভাতায় প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে, যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দৈন্যতা ও দক্ষ মানবসম্পদের অভাবকেই ফুটিয়ে তুলছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। তিনি বলেন, ‘এমতাবস্থায় আমাদের অবশ্যই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করার প্রতি মনোযোগী হতে হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি- ডিসিসিআই’র যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনে ‘এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তরণ ও প্রস্তুতি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস। এই অনুষ্ঠানে
ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন ও অ্যাপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী সম্মানিত অতিথি হিসেবে যোগদান দেন।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, ‘আমাদের রফতানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ আলোচনা হলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হচ্ছে না। তবে সময় এসেছে বিষয়টিতে আরও বেশি করে মনোযোগী হওয়ার।’ তিনি বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মসংস্থানের কোনও বিকল্প নেই। তবে আরও বেশি হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হলে আমাদের অবশ্যই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে তৎপর হতে হবে।’ মঞ্জুর এলাহী জানান, চামড়া ও পাদুকা খাতে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ ৯০-এর দশকে একই সঙ্গে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ভিয়েতনাম প্রায় ১৬-১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফুটওয়্যার পণ্য রফতানি করে। এর বিপরীতে আমরা মাত্র ১ বিলিয়ন ডলারের ফুটওয়্যার পণ্য রফতানি করছি এবং শুধু যৌথ বিনিয়োগ ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই ভিয়েতনাম তা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও চামড়া ও ফুটওয়্যার খাতের উন্নয়ন ও যৌথ বিনিয়োগ আকর্ষণে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ করার জন্য সরকারের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি দেশের বিদ্যমান কর কাঠামো আধুনিকায়ন ও সংস্কারের ওপর জোর দেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতার পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।’ তিনি সরকারি ও বেসরকারি খাতের মধ্যকার সুসম্পর্কের উন্নয়নে জোরারোপ করেন এবং বিশেষ করে দেশের বেসরকারি খাতের সৃজনশীলতা আরও বেশি করে কাজে লাগাতে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেন।
মুখ্য সচিব বলেন, ‘দেশের বেসরকারি খাতের ওপর সরকারের আস্থা ও বিশ্বাস দুটোই অত্যন্ত বেশি এবং বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় স্বল্প সময়ে আমরা বিদ্যুৎ খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন করেছি, যার সুফল দেশের জনগণ ভোগ করছেন।’
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আজকের এ আলোচনার মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিত হবে, যার মাধ্যমে তা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ সম্ভব হবে।’ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘বৈশ্বিক অর্থনীতির মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ়করণে আমাদের বেসরকারি খাত অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাদের অবদান বজায় রেখেছে। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে রয়েছি। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হবে, যা আমাদের রফতানিকে ব্যাহত করতে পারে।’ এমতাবস্থায় তিনি পণ্য উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ়করণ, স্থানীয় বাজারের স¤প্রসারণ এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক নীতিমালার সংস্কার প্রভৃতির ওপর আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান। ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান। তিনি বলেন, ‘এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ পরবর্তীতে আমাদের রফতানি ধরে রাখতে হলে স্থানীয় বাজার সক্ষমতা বৃদ্ধি, পণ্য বহুমুখীকরণ, মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, সহায়ক নীতিমালা সংস্কার এবং তথ্য-প্রযুক্তি বিনিময় একান্ত অপরিহার্য।’