দুই দলই হেরেছিল নিজেদের প্রথম দুইটি ম্যাচ। বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে তাই জয়ের বিকল্প ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশ- দুই দলের সামনেই। তাদের লড়াইটাও হলো সমানে সমান। যেখানে শেষপর্যন্ত গতকাল শুক্রবার ৩ রানের ব্যবধানে হেরে গেল বাংলাদেশ। শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে জিতে সেমির আশা টিকে রইলো ওয়েস্ট ইন্ডিজের। তবে বিদায়ঘণ্টা বাজেনি বাংলাদেশের। কাগজে-কলমে এখনও রয়েছে সম্ভাবনা।
নায়ক হতে পারলেন না লিটন, ৬ বলে দরকার ১৩ রান। মাহমুদউল্লাহ আর লিটন দাসের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন দেখছিল বাংলাদেশ। শেষ চার ওভারে তাদের দরকার ছিল ৩৩ রান। ১৭তম ওভারে মাত্র ৩ রান দিয়ে ম্যাচে উত্তেজনা ফেরান ডোয়াইন ব্রাভো। পরের ওভারে রবি রামপল দেন ৮ রান। তাতে শেষ ১২ বলে ২২ রান দরকার তাদের। ১৯তম ওভারে ব্রাভোর প্রথম বলে মাহমুদউল্লাহ ছক্কা মেরে ব্যবধান কমান। হাফ সেঞ্চুরি ও দলকে জিতিয়ে নায়ক হতে পারতেন লিটন। কিন্তু ওই ভারের শেষ বলে জেসন হোল্ডারকে লং অনে ক্যাচ দেন ৪৪ রান করে। ৪৩ বলে সাজানো ছিল তার এই ইনিংস। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৪০ রানের জুটি গড়েছিলেন লিটন।
আবারো সুইপ করে আউট মুশফিক: ভালো খেলতে খেলতে কী যেন হয়ে যায় মুশফিকুর রহিমের। সুইপ করতে গিয়ে অনেকবার আউট হয়েছেন তিনি। তা থেকে শিক্ষা নিতে পারেননি। ডানহাতি ব্যাটসম্যান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও সুইপ করতে গিয়ে স্টাম্প ছাড়লেন এবং বোল্ড। রবি রামপলের কাছে থামল তার ৭ বলে ৮ রানের ইনিংস। লিটন দাসের সঙ্গে তার জুটি ছিল ৩০ রানের।
লিটনের ব্যাটে জয়ের স্বপ্ন:টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একের পর এক ব্যাটিং ব্যর্থতা আর মিস ফিল্ডিংয়ে আলোচিত ছিলেন লিটন দাস। তারপরও তার ওপর থেকে আস্থা হারাননি নির্বাচকরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিশ্বকাপে টিকে থাকার লড়াইয়ে তার ব্যাট কথা বলছে। এই আসরে নিজের সেরা রান করলেন। আগের পাঁচ ম্যাচে তার সর্বোচ্চ রান ছিল ২৯, প্রথম রাউন্ডে পাপুয়া নিউ গিনির বিপক্ষে।
গেইলের ক্যাচ হলেন সৌম্য: ভালোই খেলছিলেন সৌম্য সরকার। লিটন দাসের সঙ্গে জুটিতে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু জুটি ৩১ রানের বেশি হলো না। আকিল হোসেনের বলে পয়েন্টে নিচু ক্যাচ দেন ক্রিস গেইলকে। ১৩ বলে ১৭ রান করেন আউট হন সৌম্য।
সৌম্য-লিটনের ব্যাটে আশার আলো: ২৯ রানে ২ ওপেনারের বিদায়ের পর সৌম্য সরকার ও লিটন দাস জুটি গড়েছেন। বাংলাদেশ তাদের ব্যাটে আশার আলো দেখছে। ১০ ওভারে স্কোর ২ উইকেটে ৫৫ রান।
নাঈম বোল্ড: পাওয়ার প্লের মধ্যে উইকেট হারালেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। পঞ্চম ওভারে সাকিব আল হাসান (৯) আন্দ্রে রাসেলের শিকার হন। পরের বলে হোল্ডার বোল্ড করেন মোহাম্মদ নাঈমকে। ১৯ বলে দুই চারে ১৭ রান করেন তিনি। ৬ ওভারে ২ উইকেটে ২৯ রান বাংলাদেশের। একই স্কোর ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও।
ওপেনিংয়ে নেমে ব্যর্থ সাকিব: লিটন দাস বাজে ফর্মে। তাই ওপেনিংয়ে মোহাম্মদ নাঈমের সঙ্গে নামলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু নতুন পজিশনে হতাশ করলেন তিনি। পঞ্চম ওভারে আন্দ্রে রাসেলের তৃতীয় বলে মাত্র ৯ রান করে হোল্ডারের ক্যাচ হন সাকিব, বল খেলেন ১২টি।
নাঈমকে নিয়ে সাকিবের উদ্বোধনী জুটি: ছিলেন লিটন দাস, মোহাম্মদ নাঈমও। বাংলাদেশ দল লক্ষ্যে নেমেই অবাক করল। কারণ ওপেনিংয়ে নাঈমকে সঙ্গে করে নেমেছেন সাকিব আল হাসান। ক্যারিয়ারে প্রথমবার এই পজিশনে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ১৪৩ রান: ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাওয়ার প্লেতে চেপে ধরেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ৬ ওভারে ২ উইকেটে ২৯ রান করে ক্যারিবিয়ানরা। রানের গতি ঠিকমতো বাড়ছিল না। অন্যদিকে ৬২ রানে ৪ উইকেট হারায় তারা। দুইবার জীবন পাওয়া রোস্টন চেজকে নিয়ে ম্যাচ পাল্টে দেন নিকোলাস পুরান। ৫৭ রানের ঝড়ো জুটি গড়েন তারা দুজন। পঞ্চম উইকেটের এই জুটির দুই ব্যাটসম্যানকে পর পর ফেরান শরিফুল ইসলাম। চেজ ৩৯ ও পুরান ৪০ রান করেন।
ক্যারিবিয়ানদের সীমিত রানে আটকে দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু মোস্তাফিজুর রহমান ইনিংসের শেষ ওভারে বল করতে নামলে তিন ছয় হজম করেন জেসন হোল্ডার ও কিয়েরন পোলার্ডের কাছে। ওই ওভারে ১৯ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। চার ওভারে বাঁহাতি পেসার দিলেন ৪৩ রান, পেয়েছেন ২ উইকেট। বাংলাদেশের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন শরিফুল ও মেহেদী হাসান।
মোস্তাফিজের দ্বিতীয় উইকেট: মোস্তাফিজুর রহমান ইনিংসের শেষ ওভার করতে আসেন। প্রথম বলেই ডোয়াইন ব্রাভোকে (১) ডিপ কভারে সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানান। তারপর জেসন হোল্ডার টানা দুটি ছয় মারেন। শেষ বলে একটি ছয় পেটান কিয়েরন পোলার্ড। ওই ওভারে ১৯ রান দেন মোস্তাফিজ।
টানা দুটি বলে শরিফুলের আঘাত: নিজের চতুর্থ ওভারে শরিফুল ইসলাম ভাঙলেন বিপদজনক হয়ে ওঠা নিকোলাস পুরান ও রোস্টন চেজের জুটি। ১৯তম ওভারে প্রথম দুই বলে তাদের ফেরান। ২২ বলে ১ চার ও ৪ ছয়ে ৪০ রান করে মোহাম্মদ নাঈমকে ক্যাচ দেন পুরান। ভাঙে ৫৭ রানের জুটি। পরের বলে চেজকে বোল্ড করেন শরিফুল। ৪৬ বলে ৩৯ রান করেন উইন্ডিজ ব্যাটসম্যান। তৃতীয় উইকেট পেতে পারতেন শরিফুল। কিন্তু জেসন হোল্ডারের সহজ ক্যাচ ডিপ কভারে ছেড়ে দেন আফিফ হোসেন।
পুরান ঝড় তুলেছেন: নিকোলাস পুরান ম্যাচ ঘুরিয়ে দিলেন। আন্দ্রে রাসেল আউট হলে ১৩তম ওভারের শেষ বলে ক্রিজে নামেন তিনি। ২৯ বলে ৫০ রান যোগ করেছে রোস্টন চেজের সঙ্গে তার জুটি। ১৮ ওভার শেষে স্কোর ৪ উইকেটে ১১৯ রান।
চেজকে দ্বিতীয়বার জীবন দিলেন মেহেদী:সপ্তম ওভারে রোস্টন চেজকে একবার জীবন দেন মেহেদী হাসান। ওইবার তিনি ছিলেন বোলার। ফিরতি ক্যাচ ধরতে পারেননি। ৯ রানে তখন খেলছিলেন চেজ। উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানের ক্যাচ আবারো ফেললেন মেহেদী। সাকিব আল হাসানের ওভারে মিডউইকেটে ক্যাচ ছাড়েন তিনি। ১৪তম ওভারে দ্বিতীয়বার মেহেদী হাত ফসকে বেঁচে গেলেন চেজ, ২৭ রানে।
পা দিয়ে রাসেলকে রান আউট করলেন তাসকিন: আন্দ্রে রাসেলকে পা দিয়ে রান আউট করলেন তাসকিন আহমেদ। নন স্ট্রাইকে কিয়েরন পোলার্ডের জায়গায় নেমেই আউট ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার। চেজের স্ট্রেট ড্রাইভে বল তাসকিনের পায়ে লেগে স্টাম্পে আঘাত করে। তখন লাইনের বাইরে ছিলেন রাসেল। কোনো বল না খেলেই আউট তিনি।
রিটায়ার্ড আউট পোলার্ড: ১৬ বলে ৮ রান করে রিটায়ার্ড আউট হয়েছেন উইন্ডিজ অধিনায়ক কিয়েরন পোলার্ড। তাসকিন আহমেদের বলে সিঙ্গেল নিয়ে অসুস্থতায় মাঠ ছাড়েন তিনি।
সাকিবের আঁটসাঁট বোলিং: সাকিব আল হাসান দশম ওভারে বল হাতে নিলেন। যথেষ্ট ফিট ছিলেন না তিনি। ইনিংসের চতুর্থ ওভার শেষে পায়ের ব্যথা নিয়ে মাঠ ছাড়েন বাঁহাতি স্পিনার। অবশ্য কিছুক্ষণ পর মাঠে ফিরে আসেন। নিজের প্রথম ওভারে মাত্র ৪ রান দেন সাকিব।
চেজকে জীবন দেওয়া মেহেদী ফেরালেন হেটমায়ারকে: প্রথম ২ ওভারে ৭ রান খরচায় ১ উইকেট নেওয়া মেহেদী হাসান তার তৃতীয় ওভারে ফেরালেন শিমরন হেটমায়ারকে। সপ্তম ওভারের চতুর্থ বলে তাকে ৯ রানে লং অফে সৌম্য সরকারের ক্যাচ বানান এই স্পিনার। আগের বলে চেজের ফিরতি ক্যাচ ধরতে পারেননি মেহেদী। হাত ফসকে যায় বল।
পাওয়ার প্লেতে দারুণ বাংলাদেশ: বিধ্বংসী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাওয়ার প্লেতে বোতলবন্দি করে রেখেছে বাংলাদেশ। ১৮ রানে তাদের ২ উইকেট নেয়। ৬ ওভার শেষে ২৯ রান ক্যারিবিয়ানদের।
বোল্ড গেইল: বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না ক্রিস গেইল। মাত্র ৪ রান করে বিদায় নিলেন তিনি। মেহেদী হাসান তার দ্বিতীয় ওভারে বল হাতে নিয়ে পান সাফল্য। দারুণ লেন্থের বল ভেঙে দেয় উইন্ডিজ ওপেনারের স্টাম্প। ১৮ রানে ক্যারিবিয়ানদের ২ উইকেটের পতন হলো।
গেইল জীবন পেলেও আউট লুইস: মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম বলে ক্রিস গেইল রান আউট থেকে বেঁচে গেলেও ওই ওভারে ভাঙল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ১২ রানের উদ্বোধনী জুটি। ওই ওভারের শেষ বলে স্কয়ার লেগে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ হন এভিন লুইস। ৯ বলে ১ চারে ৬ রান করেন তিনি।
গেইলকে রান আউটের সুযোগ নষ্ট বাংলাদেশের: তৃতীয় ওভারেই বড় উইকেট ফেলে দিতে পারত বাংলাদেশ। মোস্তাফিজুর রহমানের প্রথম বলে পয়েন্টে বল পাঠিয়ে দৌড় দেন ক্রিস গেইল। কিন্তু তাকে ফিরে যেতে বলেন এভিন লুইস। ততক্ষণে পয়েন্ট থেকে সাকিব আল হাসান বল থ্রো করেন কিপিং প্রান্তের স্টাম্পের দিকে। মিস করেন তিনি, স্টাম্পে লাগলেই আউট হয়ে যেতেন গেইল। বড় বাঁচা বেঁচে গেলেন উইন্ডিজ ওপেনার।
মেহেদীর আঁটসাঁট বোলিং: ক্রিস গেইল ও এভিন লুইসের উদ্বোধনী জুটি প্রথম ওভারে মাত্র ৪ রান করেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শুরুর আঁটসাঁট ওভার করেছেন বাংলাদেশের স্পিনার মেহেদী হাসান। চতুর্থ বলে লুইসের বিরুদ্ধে জোরালো এলবিডব্লিউর আবেদন করেন তিনি। আম্পায়ার তাতে সাড়া দেননি।
টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ: সুপার টুয়েলভে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচ খেলতে শারজায় মুখোমুখ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশ। এই ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ অধিনায়ক বললেন, ‘আমরা প্রথমে ফিল্ডিং করব। পরিসংখ্যানের দিকে আমাদের তাকাতে হবে। তাদের ব্যাটিং অর্ডারের গভীরতা অনেক, তাই আমরা চেষ্টা করব একটা মোটামুটি সংগ্রহের মধ্যে তাদের আটকে দিতে এবং সেটা সফলভাবে তাড়া করতে। নুরুল হাসান খেলছে না। সৌম্য সরকার এসেছে। নাসুম আহমেদও নেই এবং তাসকিন এসেছে।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক কিয়েরন পোলার্ড বলেন, ‘এটা হচ্ছে (বাঁচা-মরার লড়াই)। এটাই বাস্তবতা। আমরা নিজেদের দোষারোপ করছি, আর কাউকে নয়। এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার দায়িত্ব তাই আমাদের। দুটি পরিবর্তন। লেন্ডল সিমন্স নেই, রোস্টন চেজের অভিষেক হচ্ছে। হেইডেন ওয়ালশ নেই এবং জেসন হোল্ডার এসেছে।’ ক্রিস গেইল ওপেনিং করবেন বলে জানান পোলার্ড।
বাংলাদেশ: মোহাম্মদ নাঈম, লিটন দাস (উইকেটকিপার), সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, সৌম্য সরকার, মেহেদী হাসান, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ক্রিস গেইল, এভিন লুইস, রোস্টন চেজ, নিকোলাস পুরান (উইকেটকিপার), শিমরন হেটমায়ার, কিয়েরন পোলার্ড (অধিনায়ক), আন্দ্রে রাসেল, জেসন হোল্ডার, ডোয়াইন ব্রাভো, আকিল হোসেন, রবি রামপল।