টাঙ্গাইল জেলায় সবচেয়ে ঘনবসতি গ্রাম ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দী। এই গ্রামেই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান কৃষি মন্ত্রী ডা.মোঃ-আব্দুর রাজ্জাক( এমপি) এর শৈশব ও কৈশোর কেটেছে তার হাজারো স্মৃতি বিজড়িত এই গ্রাম। এই গ্রামে এখন বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত মডেল গ্রামের মধ্যে একটি মুশুদ্দী। মাথাপিছু জমি কম। তবে শিক্ষাদীক্ষায় এগিয়ে। চাকরির পেছনে না ছুটে বাপদাদার পেশায় আত্মনিয়োগ করায় আধুনিক কৃষির ছোঁয়ায় বদলে গেছে গ্রামের আর্থসামাজিক চিত্র। যান্ত্রিক কৃষিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামটি এখন বিষমুক্ত সবজি ভিলেজ হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছে। ১৯৮৪ সালের কৃষি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গ্রামের অর্ধেক অংশে সবজির আবাদ হতো। মুশুদ্দী মধ্যপাড়ার মিজানুর রহমান শিবলী জানান, বাপদাদার আমল থেকেই বাণিজ্যিক সবজির আবাদ হয়। কিন্তু বিষমুক্ত সবজির আবাদ এবারই প্রথম। জমিতে রাসায়নিক সারের বদলে জৈব ও কেঁচো সার দেয়া হচ্ছে। কীটনাশকের পরিবর্তে প্রাকৃতিকভাবে পোকামাকড় ও রোগবালাই দমন করা হচ্ছে। ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, ‘পরিবেশবান্ধব কৌশলে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্প’ এর আওতায় রবি ও খরিপ মৌসুমে গ্রামের ৫০০ কৃষককে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ, বিনামূল্যে উন্নত বীজ ও জৈব সার সরবরাহ করে ১০০ একরে নিরাপদ সবজির আবাদ করানো হয়েছে। মুশুদ্দী উত্তরপাড়ার আব্দুর রাজ্জাক জানান, একসময় সবজি চাষে রাসায়নিক সার ও মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ হতো। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের বিষয়টি গুরুত্ব পেতো না। এখন পরিবেশবান্ধব জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই দমন ব্যবস্থাপনার আওতায় রবি মৌসুমে করলা, চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, শসা, ঢ্যাঁড়শ, এবং খরিপ মৌসুমে পটোল, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা, পেঁপে, লাউ ও শাক আবাদ হচ্ছে। মুশুদ্দী কামারপাড়া গ্রামের সোহরাব আলী জানান, আগে বিষমুক্ত পদ্ধতির চাষবাস সম্পর্কে তাদের কোনো ধারনা ছিল না। এবার বিষের পরিবর্তে সেক্স ফেরোমন ও ইয়োলো ট্রাপ ব্যবহার এবং রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব ও কেঁচো সার ব্যবহারে জমিতে দ্বিগুণ ফলন পেয়েছেন। গ্রামের অধিকাংশ গৃহস্তের গরুর খামার থাকায় সবজি বাগানে অঢেল গোবর সার ব্যবহূত হচ্ছে। দুই দফা সবজি চাষের পর অনেকেই সাময়িক পতিত জমিতে উফসি রোপা আমন লাগানোয় জমি তিন ফসলিতে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু সবজির উৎপাদন দ্বিগুণ হলেও চাষিরা ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। তিনি বিষমুক্ত সবজি বিক্রির জন্য আলাদা বাজার স্থাপনের দাবি জানান। মুশুদ্দী খন্দকার পাড়ার কৃষক সোলায়মান ও উত্তরপাড়ার মুহাম্মদ আলী জানান, পাশ্ববর্তী মধুপুর উপজেলার কুড়াগাছা ইউনিয়ন থেকে এসআর এন্টারপ্রাইজ প্রতিবছর বিদেশে বিষমুক্ত সবজি রফতানি করে থাকেন। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের জন্য মুশুদ্দীর সবজিও বিদেশে রফতানির দাবি জানান তারা। ঝোপনা পূর্বপাড়ার মুকুল ও আয়নাল হক জানান, অর্থকরী ফসল, সবজি ও ডেইরি খামারের জন্য সরকার মুশুদ্দী গ্রামকে মডেল কৃষি গ্রাম হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। সবজি বিপণন, বাজারজাতকরন ও সংরক্ষণের জন্য এলাকায় একটি হিমাগার জরুরি। অপরদিকে বিষমুক্ত সবজি ও অর্থকরী ফসল চাষের প্রায়োগিক সুবিদার্থে প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির দাবি জানান চাষি আ. রাজ্জাক ও আয়নাল হক। ধনবাড়ী উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদনে মুশুদ্দি রোল মডেল। সবজির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের জন্য সহযোগিতা করা হবে। বিদেশে সবজি রপ্তানির বিষয়ে কৃষিমন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সবজি রপ্তানিকারক এবং এসআর এন্টারপ্রাইজের পরিচালক শাহাবুদ্দীন আহমেদ জানান, চার বছর ধরে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইতালিতে মধুপুরের বিষমুক্ত সবজি রপ্তানি করা হচ্ছে। ধনবাড়ী উপজেলার সবজির কোয়ালিটি যাচাইবাছাই হচ্ছে। মানসম্পন্ন বিবেচিত হলে বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।