বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

রবিউস সানী মাসের করণীয় বর্জনীয়

মুফতী মনসূরুল হক দা.বা.
  • আপডেট সময় সোমবার, ৮ নভেম্বর, ২০২১

রবিউস সানী মাসে বিশেষ কোন আমল না থাকলেও আমাদের দেশের বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলের সাধারণ ধর্মভীরু লোকেরা নিজের ইলমের অভাব এবং হক্কানী আলেমদের সাথে সম্পর্ক না থাকার দুরুন এমন কিছু কাজ করে যা তাদের নজরে আমল মনে হলেও আসলে তা ঈমান বিধ্বংসী কাজ। অথচ আমলের চেয়ে ঈমানের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ, শুধু সহীহ ঈমান দ্বারাও জান্নাত লাভ হবে (যদিও তা প্রথম অবস্থায় না হোক), কিন্তু সহীহ ঈমান ব্যতীত হাজারো আমল একেবারেই মূল্যহীন। যথার্থ ঈমান ব্যতীত শুধু আমল দ্বারা নাজাত পাওয়ার কোন সুরত নেই। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বর্তমানে চরম ফিতনার যুগে অনেক মানুষ সকালে মু‘মিন থাকলেও বিকালে ঈমানহারা হচ্ছে, আবার কেউ বিকালে মু‘মিন থাকলেও সকালে নষ্ট করে ফেলেছে। কিন্তু মানুষের ঈমান-আক্বীদা সংরক্ষণের জন্য যথার্থ ব্যবস্থা সমাজে নেই। অথচ বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার দরুন এতদসম্পর্কিত অধিক সংখ্যক কিতাবপত্র রচনা ও আলোচনা-পর্যালোচনা অব্যাহত থাকা ছিল একান্ত জরুরী। তাই এই মাসে যে কাজের দ্বারা মানুষ তার ঈমানের ক্ষতি করছে তা উল্লেখ করে যথার্থ আমলের সুরত যা কুরআন হাদীস দ্বারা প্রমাণিত উল্লেখ করবো ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সুন্নত তরীকায় পুরো যিন্দেগী চলার তৌফিক দান করেন, আমীন।
ফাতিহা ইয়াযদাহম: ফাতিহা বলতে বোঝানো হয়, কোন মৃতের জন্য দু‘আ করা, ঈসালে সওয়াব করা। ইয়াযদাহম ফার্সি শব্দটির অর্থ একাদশ। ৫৬১ হিজরী মুতাবিক ১১৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ রবিউস সানী তারিখে বড়পীর শায়খ আবদুল কাদির জিলানী রহ. ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যু উপলক্ষে রবিউস সানীর ১১ তারিখে যে মৃত্যুবার্ষিকী পালন, উরস ও ফাতিহাখানী করা হয় তাকে বলা হয় ফাতিহা ইয়াযদহম।
ইসলামে জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন ও উরস করা শরী‘আত সমর্থিত অনুষ্ঠান নয়। তবে তিনি অনেক উঁচু দরের অলী ও বুযুর্গ ছিলেন। তাই এই নির্দিষ্ট তারিখের অনুসরণ না করে অন্য যে কোন দিন তাঁর জন্য দু‘আ করলে এবং জায়িয তরীকায় তাঁর জন্য ঈসালে সওয়াব করলে তাঁর রূহানী ফয়েজ ও বরকত লাভের ওসীলা হবে এবং তা সওয়াবের কাজ হবে। নি¤েœ সংক্ষিপ্তভাবে এর বিবরণ দেয়া হলোঃ
কবর যিয়ারত: হাদীস শরীফে কবর যিয়ারতের নির্দেশ ও ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। বিশেষ করে সন্তানের জন্য প্রতি শুক্রবার পিতা-মাতার কবর যিয়ারতের অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং সম্ভব হলে এটা করা উচিত। প্রতি শুক্রবার সম্ভব না হলে যখনই সুযোগ হয়, তখনই পিতা-মাতা ও অন্য মুরুব্বিদের কবর যিয়ারত করবে। এতে আখেরাতের কথা স্মরণ হয় এবং পরকালের প্রস্তুতি গ্রহণ করা সহজ হয়। কবরে মাইয়্যিতকে দাফন করার পরও কবর যিয়ারত করা যায় এবং একাকী বা সম্মিলিত ভাবে দু’আ করা যায়। কবর যিয়ারতের নিয়ম এই যে, সম্ভব হলে মুর্দার পায়ের দিক দিয়ে কবরের পশ্চিম পার্শ্ব দিয়ে গিয়ে পূর্বমুখী হয়ে অর্থাৎ মুর্দার চেহারামুখী হয়ে দাঁড়াবে। প্রথমে কবরবাসীদের সালাম করবে। এরপর সম্ভব হলে সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াত করবে বা কমপক্ষে সূরা ফাতিহা একবার, সূরা ইখলাস তিনবার এবং দরূদ শরীফ এগার বার পড়ে মুর্দার জন্য সাওয়াব রেসানী করবে। যদি ঐ অবস্থায় পূর্বমুখী হয়ে দু’আ করে, তাহলে হাত তুলবে না। আর যদি কিবলামুখী হয়ে দু’আ করে তাহলে হাত তুলতে পারে। এরপর আদবের সাথে কবরস্থান থেকে চলে আসবে এবং কবরবাসীদের থেকে নসীহত হাসিল করবে।
কবর পাকা করা: কবরকে পাকা করা বা কবরের উপর গম্বুজ তৈরী করা শরী’আতের দৃষ্টিতে নিষেধ ও গুনাহের কাজ। সুতরাং কঠোরভাবে এর থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। তবে গোরস্থানের চতুঃপার্শ্বে দেয়াল দিয়ে ঘিরে দেয়া যায় বা কবরের চার পাশে বাঁশের বেড়া দিয়ে কবরকে হেফাজত করা যায় এবং হেফাজত করা কর্তব্যও। যাতে গরু-ছাগল কবরের উপর চলাচল করে বা পেশাব-পায়খানা করে কবরের বেহুরমতী করতে না পারে।
ঈসালে সাওয়াবের তরীকা: মুর্দা পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য সাওয়াব রেসানী করা তাদের হক এবং এটা জীবিতদের কর্তব্য। জীবিতগণ মুর্দা পিতা-মাতা ও আত্মীয়দের ব্যাপারে যতটুকু করবে, তারা মৃত্যুর পর তাদের জীবিত আত্মীয়দের থেকে সেরূপ আচরণ পাবে। কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা’আলা পিতা-মাতার জন্য আল্লাহর দরবারে কিভাবে দু’আ করতে হবে, তার শব্দগুলোও শিখিয়েছেন এবং দু’আ করার নির্দেশ দিয়েছেন; আর তা কবুল করার ওয়াদাও করেছেন। সুতরাং পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনের জন্য ঈসালে সাওয়াব বা সাওয়াব রেসানী করা খুবই দরকার। হাদীস শরীফে এসেছে, ‘মানুষকে যখন কবরে দাফন করা হয়, তখন তার অবস্থা ডুবন্ত মানুষের ন্যায় হয়ে যায়। নদীতে বা সাগরে যদি জাহাজ তলিয়ে যায়, তখন মানুষ যেমন দিশেহারা হয়ে চতুর্দিকে হাত মারতে থাকে এই ধারণায় যে, হাতে কোন কিছু আসে কি-না। যে আঁকড়ে ধরে সে জানে বাঁচাতে পারে। মুর্দারও সেই অবস্থাই হয় এবং সে জিবিতদের সাওয়াব রেসানীর অপেক্ষা করতে থাকে। তখন তার আপনজন, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধব যদি কিছু সাওয়াব রেসানী করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা সেটাকে বহুগুণ বৃদ্ধি করে তাদের খেদমতে জীবিতদের পক্ষ থেকে হাদিয়া হিসেবে পৌঁছে দেন’। (বাইহাকী, শুআবুল ঈমান হা নং- ৭৫২৭)
এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বহু হাদীস বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং অনেকে না জানার কারণে সাওয়াব রেসানী অস্বীকার করে থাকে। এটা ভুল বরং সাওয়াব রেসানী সহীহ ও সুন্নত। তবে সাওয়াব রেসানীর পদ্ধতি শরী’আত সম্মত হওয়া উচিত। নতুবা অনেক ক্ষেত্রে সাওয়াব রেসানী বাতিল বলে গণ্য হয় এবং মুর্দার কোন ফায়দা হয় না। এজন্য উচিত-মুর্দার নিজস্ব বা আপন লোকজন বন্ধু-বান্ধবগণ সম্পূর্ণ আল্লাহর ওয়াস্তে পূর্ণ কুরআন শরীফ বা এর অংশ বিশেষ তিলাওয়াত করে বখশে দিবে। বখশে দেয়ার জন্য আলাদা কোন মৌলবী সাহেবকে ডেকে আনা বা বলা জরুরী নয়; বরং প্রত্যেকে যদি তিলাওয়াতের আগে বা পরে নিয়ত করে নেয় যে, আমি যে তিলাওয়াত করছি হে আল্লাহ! এর সাওয়াব অমুক পাবে, তাহলে তিলাওয়াতের সাথে সাথে সেই মুর্দা বা যিন্দা যার নিয়ত করা হবে, তার আমলনামায় সাওয়াব পৌঁছে যাবে। নতুন করে সাওয়াব পৌঁছানোর দরকার নেই। বরং আত্মীয়-স্বজন কুরআন তিলাওয়াত করে ও সত্তর হাজার বার কালিমায়ে তাইয়্যিবা পড়ে সাওয়াব রেসানী করবে। তাছাড়া নিজেদের পয়সা থেকে সাওয়াব পৌঁছানো নিয়তে কিছু দান-খয়রাত করবে। যে কোন দিন সহজে সম্ভব হয় গরীব-মিসকীনদেরকে খানা খাওয়াবে এবং সারা বছর বরং সারা জীবন, যখন যেভাবে ও যতটুকু সম্ভব হয়, সাওয়াব রেসানী করবে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পর তাদের জন্য দু’আ করবে। এটাই সহীহ পদ্ধতি।
সাওয়াব রেসানীর ভুল পদ্ধতিসমূহ:সাওয়াব রেসানীর নামে বর্তমানে মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার যে প্রথা চালু হয়েছে, শরী’আতে এর কোন ভিত্তি নেই। জন্মবার্ষিকী ও মৃত্যুবার্ষিকী এসব ইয়াহুদী, খৃষ্টান ও হিন্দুদের সংস্কৃতি। মূর্খতার দরুন এসব বিদ’আত ও বদ রসম মুসলমানগণ ভাল কাজ মনে করে চালু করে দিয়েছেন, অথচ এগুলো মারাত্মক গুনাহ। অনেকের এ ধরনের গুনাহ থেকে তওবা নসীব হয় না। সুতরাং এগুলো অবশ্যই ত্যাগ করা কর্তব্য। সারা বছর বাপ-মায়ের জন্য সাওয়াব রেসানী করতে থাকবে। একদিন যদি একটু বেশী করতে মনে চায় তা করবে, কিন্তু সেটা ঠিক মৃত্যুর তারিখে করবে না। অন্য যে কোন দিন করবে এবং জরুরী মনে করবে না। লেখক: শাইখুল হাদীস ও প্রধান মুফতি, জায়ি’আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা, মোহাম্মদপুর, ঢাকা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com