আজকাল অধিকাংশ শিশুর সময় কাটে স্মার্টফোন নিয়ে অথবা টিভি দেখে। কারণ শিশু যখন কোনো কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকে তখন মায়েরা তার কাজটি ভালোভাবে করতে পারেন। বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে এখন শিশুদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মাটফোন। আমরা প্রায়ই দেখি, অভিভাবকেরা বাচ্চাকে শান্ত রাখার জন্য তার হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাব ধরিয়ে দেন। গান, কার্টুন বা মজার ভিডিও চালিয়ে দিয়ে তাকে শান্ত রাখার চেষ্ট করেন। কিন্তু প্রযুক্তির কারণে যে শিশুদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেদিকে খেয়াল রাখছে না অনেকেই। এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রযুক্তি থেকে শিশুদের দূরে রাখার জন্য নানান ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছেন অভিভাবকরা।
আপনার, আমার প্রায় সবার বাসাতেই আজকাল দেখা যায় স্মার্টফোন হাতে দিয়ে শিশুদের শান্ত রাখা, খাওয়ানো, এমনকি বর্ণমালা শেখানোর কাজটিও করা হচ্ছে। এতে শিশুর যে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে তা আমরা খেয়াল রাখি না। এর ফলে স্মার্টফোনের ওপর শিশুর নির্ভরতা বাড়ছে। আর এই নির্ভরশীলতাই আমাদের অজান্তে শিশুদের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনছে। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সন্তানকে স্মার্টফোন দেওয়ার অর্থ হলো, তাদের হাতে এক বোতল মদ কিংবা এক গ্রাম কোকেন তুলে দেওয়া। কারণ, স্মার্টফোনের আসক্তি মাদকাসক্তির মতোই বিপজ্জনক। দুই মিনিট স্থায়ী একটি মোবাইল কল শিশুদের মস্তিষ্কের হাইপার অ্যাক্টিভিটি সৃষ্টি করে, যা কিনা পরবর্তী এক ঘণ্টা পর্যন্ত তাদের মস্তিষ্কে বিরাজ করে। হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেড়ে যায় দ্বিগুণ, ব্যবহারকারীর স্নায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, রক্তের চাপ বেড়ে যায়, দেহ ধীরে ধীরে ক্লান্ত ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে এমনকি নিয়মিত ঘুমেরও ব্যাঘাত ঘটায়। গবেষণা থেকে আরও বেরিয়ে এসেছে যে মোবাইল ফোন ব্যবহার শিশুদের শ্রবণক্ষমতাও হ্রাস করে দেয়। স্ক্রিনের রেডিয়েশন শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মোবাইল ফোন শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশকেও ব্যাহত করে। সারা পৃথিবীতে এখন শিশুরা প্রায় বেশির ভাগ সময়েই মোবাইল ফোন নিয়ে খেলা করে। এ প্রসঙ্গে সানি’স স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন ডেভিড কার্পেন্টার বলেছেন, ‘শিগগিরই আমরা হয়তো একটি মহামারি রোগের শিকার হতে পারি এবং সেটি হবে মস্তিষ্কের ক্যানসার।’ যা হোক, অতি স্মার্ট বানাতে গিয়ে আদরের সোনামণির জীবন ও ভবিষ্যৎ ধ্বংসের দিকে ধাবিত করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই আমাদের মনে রাখতে হবে স্মার্টফোন থাকলেই স্মার্ট হয় না, প্রযুক্তির অভিশাপ থেকে নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখাই হলো প্রকৃত স্মার্টনেস।