রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
সরকারের কাছে রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছি : জামায়াত আমির মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীদের জন্য বিমানবন্দরে হবে স্পেশাল লাউঞ্জ: আসিফ নজরুল শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিয়ে আস্থা নেই বাইডেনের বিশ্বের ১৩০টিরও বেশি দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ চলছে রাষ্ট্রপতির সাথে সেনাপ্রধানের সৌজন্য সাক্ষাৎ গণঅভ্যুত্থান-বিপ্লবের মূল স্পিরিট ব্যাহতকারীদের সরানোর কথা বলেছি সড়কে ১৫ ঠিকাদারের রাজত্ব শ্রমিক অসন্তোষ দূর হলে আরও মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারবো : আহসান খান চৌধুরী শেখ হাসিনা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছেন: রিজভী শেরপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি: নারীসহ ৩ জনের মৃত্যু

বকশিশ দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামের রীতি

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১

আমাদের সমাজে কর্মচারীর কাজে খুশি হয়ে তাকে বকশিশ দেওয়ার প্রবণতা আছে। বিশেষ করে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, সেলুন ইত্যাদি জায়গায় এর প্রচলন বেশি। অনেকে গাড়ি ভাড়া করলে সেখানেও চালককে বকশিশ দেন। এভাবে ডেলিভারিম্যান পণ্য কিংবা খাবার ডেলিভারি দিতে এলেও অনেকে তাদের বকশিশ দেন। কারো কাজে খুশি হয়ে তাকে পারিশ্রমিকের বাইরে কিছু বকশিশ দিয়ে পুরস্কৃত করা নিন্দনীয় নয়। বিশেষ করে তাদের সামর্থ্যের বাইরে কোনো কাজ দিলে তাকে সহযোগিতা করা উচিত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘শোনো, তোমাদের দাসেরা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীন করেছেন। কারো ভাই যদি তার অধীনে থাকে, তাহলে সে যা খায়, তা থেকে যেন তাকে খেতে দেয় এবং সে যা পরিধান করে, তা থেকে যেন তাকে পরিধান করায় এবং তাদের সাধ্যাতীত কোনো কাজে যেন বাধ্য না করে। তোমরা যদি তাদের সামর্থ্যের বাইরে কোনো কাজ দাও, তবে তাদের সহযোগিতা করো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৫০) তাই তাদের দায়িত্বের অতিরিক্ত কোনো কাজ দিলে তাকে খুশি হয়ে কিছু সম্মান করাই যেতে পারে। কিন্তু তা এমন পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত নয় যে তার জন্য অন্যরা বকশিশ ছাড়া কাঙ্ক্ষিত সেবা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বকশিশ যেন শ্রমিকের প্রাপ্য। অনেক সময় অল্প বকশিশ পেলে তারা মন খারাপ করে এবং মালিকের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে। কিছু শ্রমিক এমনও আছে যে যদি সে জানতে পারে মালিক বকশিশ দেবে না, তাহলে মনোযোগসহকারে কাজ করে না বা কাজে ঢিলামি করে। অধিকারের বাইরে জোর করে বাড়তি অর্থ আদায়ের জন্য এমন লোভাতুর আচরণ করা নিঃসন্দেহে হারাম। হাকিম ইবনে হিজাম (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-এর কাছে (একবার সাহায্য) চাইলে তিনি আমাকে দান করলেন। আবার (সাহায্য) চাইলে আবারও তিনি আমাকে দান করলেন। পুনরায় (সাহায্য) চাইলে তিনি আমাকে দান করেন এবং বলেন, এ সমস্ত ধন-সম্পদ খুবই সুদৃশ্য ও সুস্বাদু (মনোমুগ্ধকর এবং চিত্তাকর্ষক)। তাই যে ব্যক্তি সেগুলো মনের প্রশান্তির সঙ্গে (নির্লোভ হয়ে) গ্রহণ করবে, সেগুলোতে তার জন্য বরকত দেওয়া হবে আর যে ব্যক্তি সেগুলো লোভাতুর অন্তরে গ্রহণ করবে, তার জন্য সেগুলোতে বরকত দেওয়া হবে না। আর সে ব্যক্তি তার মতো হবে, যে আহার করে কিন্তু পরিতৃপ্ত হতে পারে না। আর ওপরের (দাতা) হাত নিচের (গ্রহীতার) হাত থেকে উত্তম। (নাসায়ি, হাদিস : ২৫৩১) লোভাতুর লোকদের বকশিশ দেওয়ার কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। তারা যখন অধিকারের বেশি পেতে শুরু করে, তখন তাদের মনে লাঞ্ছনাদায়ক ভিক্ষাবৃত্তির প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। যেকোনো মূল্যে অন্যের সম্পদের প্রতি অন্যায় লোভ-লালসা বাড়ে। এ কারণে মালিক অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে অথচ কাউকে অযাচিতভাবে বিব্রত করা নিঃসন্দেহে উত্তম চরিত্র পরিপন্থী। অনেক সময় বকশিশ দেওয়া-নেওয়াকে কেন্দ্র করে মালিক-শ্রমিকের মাঝে মন-কষাকষি, নানা কটু মন্তব্য প্রয়োগ ও ঝগড়াও সৃষ্টি হয়, যা কোনোভাবে কাম্য নয়। যেমন হাসপাতালগুলোতে কর্মচারীদের বকশিশ না দিলে অনেক সময় সেবায় অবহেলার অভিযোগ ওঠে, যা বকশিশের সংজ্ঞাই পরিবর্তন করে দেয়।
কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিকের বাইরে কিছু প্রাপ্তির দাবি ছাড়া কিছু পেলে তাকে বকশিশ বলা যায়। তা দেওয়া ও নেওয়া জায়েজ। (আফকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ৬/১৮৫, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১০/৫৪৪) কিন্তু যদি এমন হয় যে পারিশ্রমিকের বাইরে কাজের বিনিময়ে কিছু প্রাপ্তির দাবি থাকে এবং তা নিয়ে রীতিমতো দর-কষাকষি করে, তা না হলে কাজে ঢিলেঢালা ভাব চলে আসে, তা আর বকশিশের পর্যায়ে থাকে না, বরং তা ঘুষের পর্যায়ে চলে যায়। এমনকি কারো প্রাপ্য অধিকারের বাইরে কিছু আদায় করার জন্য কর্মচারীকে বকশিশের নামে কিছু দেওয়াও ঘুষের নামান্তর, যা দেওয়া ও নেওয়া উভয়টি হারাম। রাসুল (সা.) ঘুষদাতা ও গ্রহীতাকে অভিসম্পাত করেছেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৫৮০) তাই আমাদের উচিত বকশিশ দেওয়ার ক্ষেত্রে ভালোভাবে চিন্তা করে যথার্থ ও নিঃস্বার্থ লোককে বকশিশ দেওয়া, যাতে তা ঘুষের পর্যায়ে না চলে যায়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com