একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. কামাল হোসেন
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘আমি যে রাজনীতি শুরু করেছিলাম জনগণের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে, নীতিভিত্তিক রাজনীতি। আমি এদিক-ওদিক ভাঙন ধরিয়ে ক্ষমতায় যাবো সেরকম রাজনীতি আমি জীবনেও করিনি। একান্ত সাক্ষাৎকারে গণফোরাম সভাপতি, আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞ কামাল হোসেন এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন: সালমান তারেক শাকিল। ছবি তুলেছেন: নাসিরুল ইসলাম। নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে সাক্ষাৎকারটি দৈনিক খবরপত্রের পাঠকদের জন্য পত্রস্থ করা হলো।-বার্তা সম্পাদক
সম্প্রতি বেইলি রোডে সবুজঘেরা বাসভবনের বসার ঘরে নিজের ব্যক্তিগত কার্যক্রম, সাম্প্রতিক রাজনীতি, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ নানা প্রসঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কামাল হোসেন। আলাপে বঙ্গবন্ধু সরকারের এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান আগামী দিনে তার রাজনৈতিক কর্মকা-ের ধরন নিয়েও। নিজের প্রতিষ্ঠিত সংগঠন গণফোরামে দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা সৃষ্টি, বিরোধী দলগুলোতে ভাঙন, আর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলটির রাজনৈতিক বিষয়গুলোও উঠে আসে তার জবাবে।
দীর্ঘ আলোচনায় কামাল হোসেন তার চলমান ব্যস্ততা নিয়েও জিজ্ঞাসা কে বলেছেন অকপটে। বার্ধক্যজনিত কারণে স্বল্প সময়ের জন্য মতিঝিলে আইন পেশার চেম্বারে গেলেও দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটে বাসভবনে। ১৯৩৭ সালের ২০ এপ্রিল কলকাতায় জন্ম নেওয়া প্রবীণ এই রাজনীতিক অবসরে বই পড়েন, সাক্ষাৎপ্রার্থীদের পরামর্শ ও মতামত দেন। নিত্যদিনের খাবার-দাবার গ্রহণ করলেও নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করতে হয় কামাল হোসেনকে। পুরোটা সময় সঙ্গে থাকেন স্ত্রী ড. হামিদা হোসেন। সাক্ষাৎকারে সাম্প্রতিক প্রসঙ্গগুলো প্রশ্নোত্তরে নিচে উল্লেখ করা হলো:
জিজ্ঞাসা: ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আপনার নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। সম্প্রতি প্রেস ক্লাবে আপনি বলেছেন, মানুষের মাঝে একটা ঐক্য হচ্ছে। সামনে দুই বছর পর দ্বাদশ নির্বাচন আসছে। আপনার কী মনে হয়,একাদশ নির্বাচনে যেভাবে আপনারা ঐক্যফ্রন্ট গড়েছিলেন, সামনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আপনার এমন কিছু করার কি কোনও চিন্তাভাবনা আছে?
কামাল হোসেন: আমার তো সবসময় চিন্তাভাবনা এটাই। নতুন চিন্তা নাই। আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে অর্থপূর্ণভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারি। তাহলে আমাদের পক্ষে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
জিজ্ঞাসা: : কিন্তু সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছেÍদলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। আবার আপনারা বলছেনÍদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে তা সুষ্ঠু হবে না। সমাধান কী?
কামাল হোসেন: আমরা যেভাবে চাই, সেভাবে হতে হলে জনমত সৃষ্টি করার জন্য কাজ করে যেতে হবে। একটা অর্থপূর্ণ আন্দোলন যদি জেগে ওঠে, তাহলে অনেক কিছু আদায় করা যাবে।
জিজ্ঞাসা: গতবার বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ছিল। পরে আপনাদের সঙ্গে ঐক্য হলো। এখনও সেই জামায়াত আছে বিএনপির সঙ্গে জোটভুক্ত। এ নিয়ে আপনার উপলব্ধি কী?
কামাল হোসেন: জামায়াতের পক্ষে আমি কখনোই ছিলাম না। এটা আমি পাবলিকলি বলেছি। এটা নিয়ে এখনও আমি আগের অবস্থানেই আছি।
জিজ্ঞাসা: ঐক্যফ্রন্টের রাজনৈতিক প্রাপ্তিটা আসলে কী? একদিকে জামায়াতও থেকে গেলো, আবার ঐক্যফ্রন্টও আছে।
কামাল হোসেন: না, না, ঐক্যফ্রন্টে থাকবে না। ওদের নিয়ে তো ঐক্যফ্রন্ট নাই।
জিজ্ঞাসা: সামনে কি এখান থেকে বের হয়ে ‘বৃহত্তর ঐক্য’ বা ভিন্ন কোনও কিছু করার পরিকল্পনা আছে?
কামাল হোসেন: সেই চেষ্টা তো আমার সবসময় থাকে। এ নিয়ে ব্যক্তিগত চিন্তা সারা জীবন করে আসছি।
জিজ্ঞাসা: বিএনপি কি যোগাযোগ করছে এখন? সামনের দিনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে?
কামাল হোসেন: না। এখনও করছে না।
জিজ্ঞাসা : দেশে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ অনুষ্ঠানের বিষয়ে আপনার কী মনোভাব?
কামাল হোসেন: জনগণের মধ্যে যদি জাগরণ সৃষ্টি হয়, জনগণ আরও ঐক্যবদ্ধ হয়, জোরালোভাবে আন্দোলনের দিকে যেতে শুরু করে, তখন একটা অবস্থান তৈরি হতে পারে।
জিজ্ঞাসা : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয় নিয়ে তো আপনি কথা বলেছিলেন যে তার জামিন প্রাপ্য। এখন তার খোঁজ-খবর কি আপনি জানেন, তিনি কী অবস্থায় আছেন?
কামাল হোসেন: পত্রপত্রিকায় যতটুকু দেখি আরকি।
জিজ্ঞাসা : তার বিষয়ে আপনার কী চিন্তা?
কামাল হোসেন: আমি সবসময় বলি যে অপজিশনে যারা থাকে, তাদের অন্তত সব সুযোগ থাকা উচিতÍতাদের বক্তব্য রাখার এবং তাদের মুক্তির ব্যাপারে চেষ্টা করার। আইনানুগভাবে তাদের হয়রানি না করা উচিত।
জিজ্ঞাসা : আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একাধিকবার সংবাদমাধ্যমে বলেছেন যে ‘খালেদা জিয়াকে সরকার যে ক্ষমতাবলে মুক্তি দিয়েছে, তা দ্বিতীয়বার অ্যাপ্লিকেবল না। একই আইন দুইবার ব্যবহার হয় না।’ সেক্ষেত্রে বিদেশে যাওয়ার জন্য সরকার যে ছাড়টা দেবেÍসেটা সরকারের নাই। প্রয়োজনে আবার কারাগারে গেলে সরকার বিবেচনা করবে, এমন বক্তব্যও এসেছে। আপনার কী মত?
কামাল হোসেন: এইটা সরকার খামোখা বলে আরকি। সরকারের সব ক্ষমতাই আছে।
জিজ্ঞাসা : খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দেওয়ার ব্যাপারে আপনার কী মত?
কামাল হোসেন: অবশ্যই উচিত। এই বয়সে এভাবে আর কত। (খালেদা জিয়ার) বয়স অলরেডি ৭৫ হয়ে গেছে।
জিজ্ঞাসা : আপনার নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সাবেক সেক্রেটারি ড. রেজা কিবরিয়া নতুন দল গঠন করেছেন। এ বিষয়ে আপনি কিছু জানেন?
কামাল হোসেন: হ্যাঁ হ্যাঁ, তিনি তো আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন।
জিজ্ঞাসা : আপনার জীবদ্দশাতেই আপনার গড়া পার্টি আলাদা হয়ে গেছে? এটা মিটমাট করেননি কেন?
কামাল হোসেন: মিটমাট করার তো অবশ্যই চেষ্টা করেছি। আমি তো সবসময় ঐক্যের কথা বলি। কিন্তু মানুষ আলাদাভাবে কিছু করতে চেয়েছে। এটা আসলে আমাদের বৈশিষ্ট্য, আমাদের আইডেনটিটি। মানুষ ধৈর্যহারা হয়। তাদের আগ্রহ যে তারা আলাদা করলে হয়তো ভালো কিছু হবে।
জিজ্ঞাসা : বিরোধী দলগুলোতে ভাঙন আর ভাঙন। এর কারণ কী?
কামাল হোসেন: ওই যে বললাম, সবাই মনে করে যে কিছু করতে পারবে। সবাই কিছু করতে চায়। এজন্য কেউ না কেউ ভাবে ‘আমরা আলাদাভাবে কিছু করবো’। ওদের সঙ্গে তো আর পারা যাচ্ছে না।
জিজ্ঞাসা : গণফোরামের রেজিস্ট্রেশনের কী হবে? দলের রেজিস্ট্রেশন তো আপনার নামে। আপনার নেতৃত্ব যারা ছেড়ে গেছে, তো তারাও গণফোরামের নামেই চলছে। সেই ক্ষেত্রে উভয় অংশ কীভাবে চিহ্নিত হবে?
কামাল হোসেন: দেখা যাক। এ বিষয়ে আমাদের পার্টির সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
জিজ্ঞাসা : আপনার দলের বিশেষ কাউন্সিল আগামী ৪ ডিসেম্বর। দলের সেক্রেটারি কি নতুন কেউ হচ্ছেন?
কামাল হোসেন: না, এরকম বিষয়ে তো আলোচনা করেই করতে হবে। আমি এককভাবে তো করতে পারবো না, সবার মতামতের ভিত্তিতে হবে।
জিজ্ঞাসা : সিনিয়র নেতারা সবাই চলে গেলেন। আপনাকে ব্যথিত করেনি? মোস্তফা মোহসীন মন্টু, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ। জীবনের এই প্রান্তে এসে পার্টির ভাঙন দেখে আপনার খারাপ লাগে না?
কামাল হোসেন: না, খারাপ লাগার কী আছে। সবাই নিজেরা নিজেদের মতো করছে। আমি যে রাজনীতি শুরু করেছিলাম জনগণের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে, নীতিভিত্তিক রাজনীতি। তোমরা যত দিন চাও আমি আছি। আমি এদিক-ওদিক ভাঙন ধরিয়ে ক্ষমতায় যাবো, সেরকম রাজনীতি জীবনেও করিনি।
জিজ্ঞাসা : আপনার শারীরিক যে অবস্থা, সামনের দিনে যদি পলিটিক্যালি মুভমেন্ট করতে হয়, আপনি কি পারবেন?
কামাল হোসেন: ওই ধরনের মনে হয় পারবো না। হয়তো একটা-দুইটায় যেতে পারবো। আর লিখিত বক্তব্য রাখতে পারবো।
জিজ্ঞাসা : দাবি আদায়ের মধ্য দিয়ে নির্বাচনের জন্য বৃহত্তর ঐক্য কি হবে আসলে? আপনার কি মনে হয়? নেতৃত্ব কি বিএনপি দিতে পারবে?
কামাল হোসেন: হওয়া উচিত।
জিজ্ঞাসা : ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কী? আপনি ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা হলেন, সংলাপে গেলেন, ইলেকশনে গেলেন, ইলেকশনের দিন সকালবেলা বললেন যে ভোট সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে না। এখনও বিএনপির সঙ্গেই আছেন। আপনার উপলব্ধি কী? আপনার জোটের অন্যতম এই শরিককে নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? তারা বা তাদের প্র্যাক্টিসটা কেমন?
কামাল হোসেন: প্র্যাক্টিসটা সুষ্ঠু হওয়া উচিত। কিন্তু সেটা তো সময়ে সময়ে দেখলাম হয়নি।
জিজ্ঞাসা : সামনে কী আশা করেন তাদের কাছে?
কামাল হোসেন: সবসময় আমি আশাবাদী। তাদের কাছে আমার প্রত্যাশা যে শিক্ষা গ্রহণ করবে, সুষ্ঠুভাবে ঐক্য গঠন করবে, ঐক্যবদ্ধ হবে।
জিজ্ঞাসা : আপনি কি এই ব্যাপারে কোনও আহ্বান রাখবেন?
কামাল হোসেন: ঐক্য ছাড়া কোনও বিকল্প নাই। জনগণকে যদি একমঞ্চে আনা যায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
জিজ্ঞাসা : গতবার আপনি ইলেকশনে গেলেন না। এটা নিয়ে বিএনপির ক্ষোভ আছে। আপনি ইলেকশনে গেলেন না কেন? আপনি নিজে ইলেকশন করলেন না, অথচ আপনি ঐক্যফ্রন্টের মূল নেতা।
কামাল হোসেন: সেটা এর আগে বলেছি যে আমি রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে চাই। আমি রাজনীতিতে বক্তব্য রাখবো, উৎসাহী করবো, কিন্তু অ্যাক্টিভ রাজনীতি করার আর আমার বয়স নাই। আর কত সময় বাঁচবো। এখন আমি চাই যেন মানুষকে বুদ্ধি-পরামর্শ দিতে পারি, সাহায্য করতে পারি, উচিত কথা বলতে পারি। কিন্তু অ্যাক্টিভ রাজনীতি এটা আমার এখন পারারও কথা না, করারও কথা না।
জিজ্ঞাসা : বড় পার্টি হিসেবে আপনার কি মনে হয় বিএনপি সামনের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম?
কামাল হোসেন: দেখা যাক (অট্টহাসি), সেটা তো বলা মুশকিল।
জিজ্ঞাসা : আপনার অভিজ্ঞতা দিয়ে কী বোঝেন? তাদের যে দলের নেতা লন্ডনে। তাদের মূল নেতা অসুস্থ এবং কারাবন্দি। তো এ পরিস্থিতিতে লিডারশিপ দিতে পারবে?
কামাল হোসেন: (এ পর্যায়ে তিনি অব দ্য রেকর্ডে কথা বলেন)।
জিজ্ঞাসা : কিন্তু সেই ক্ষেত্রে আপনি কি সমাধান দেখছেন?
কামাল হোসেন: সমাধান হলো অর্থপূর্ণ ঐক্য। যারা যারা মাঠে আছেন, দক্ষ আপসহীন নীতিবান, এদের নিয়ে ঐক্য হওয়া উচিত। এটা হওয়া উচিত এই কারণে যে এটা না হলে তো আর বিকল্প কোনও পন্থা নেই।
জিজ্ঞাসা : যদি গতবারের মতোই অবস্থা হয়, তাহলে আমাদের শাসনতান্ত্রিক পরিস্থিতি কোন জায়গায় যেতে পারে বলে আপনার মনে হয়? বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘সরকার বাকশাল করার চেষ্টা করছে বা বাকশাল নাম না দিয়ে চেষ্টা করছে।’ আপনার কি এমন মনে হয়?
কামাল হোসেন: সরকার তো এরূপ চেষ্টা করছে আরকি। আমাদের যেটা করা উচিত যে প্রকৃত অর্থে যারা গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা চায়, তাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করা জরুরি এবং অবশ্যই করা উচিত।
জিজ্ঞাসা : ব্রিটিশ শাসন দেখলেন, ভারত পরিস্থিতি দেখলেন, পাকিস্তানের শাসন দেখলেন, বাংলাদেশ দেখলেন ৫০ বছর। দেশের ভবিষ্যৎ কোনদিকে?
কামাল হোসেন: এই আশাবাদ আমি সবসময় করি যে তরুণ সমাজের মধ্যে একটা দৃঢ়তা আছে গণতন্ত্রের ব্যাপারে। অনেকেই এখনও গণতন্ত্র থেকে সরে যাননি। সাংবাদিকদের মধ্যে আছেন, শিক্ষকদের মধ্যে আছেন, লেখকদের মধ্যে আছেন, সমাজের নানান জায়গায় তাদের পাওয়া যায় এবং তাদের যদি জনমত যাচাই করা হয়, তাহলে তারা কিন্তু মৌলিক বিষয়গুলোর খুব কাছাকাছি আছে। আন্তরিকভাবে সবাই গণতন্ত্র চায়। আন্তরিকভাবে তারা বিশ্বাস করে যে দেশের সব ক্ষমতার মূল জনগণ। তো এটাকে কার্যকর করার জন্য আমি রাজনীতি করেছি তা বাস্তবে রূপান্তর করতে সর্বজনীনভাবে। প্রকৃত অর্থে যারা জনপ্রতিনিধি, তারা যেন সুষ্ঠুভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। এটা আমি এখনও মনে করি সবার এটাই লক্ষ্য হওয়া উচিত। আর তরুণ সমাজের প্রতি আমার বিশেষ একটা আহ্বান তাদের এগিয়ে আসতেই হবে। শুধু ছাত্র সমাজ তরুণ সমাজ না, তরুণ আইনজীবী, তরুণ শিক্ষাবিদ সবাইকে এক জায়গায় আসতে হবে, দেশকে রক্ষা করার জন্য। আমি অন্তর থেকে বিশ্বাস করি, আমরা যেকোনও দলই করি না কেন, সবাই রাজনৈতিকভাবে সচেতন। প্রয়োজন শুধু ঐক্যের। জনমত যাচাই করলে দেখবেন যে সবাই কিন্তু গণতন্ত্র চায়। দেশে গণতন্ত্র থাকুক।
জিজ্ঞাসা : সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারণে তো আপনি ও আপনার পরিবার কলকাতা থেকে বাংলাদেশে চলে আসেন। এখন সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি কেমন?
কামাল হোসেন: এখন ভয় লাগে। যখন কোথাও সাম্প্রদায়িক সংঘাত দেখি।
জিজ্ঞাসা : আপনার কী মনে হয়, এর পেছনে রাজনীতি বা সামাজিক প্রেক্ষাপট কতখানি অভিযুক্ত?
কামাল হোসেন: কিছুটা ভূমিকা রাখে। তো যারা রাখে আমি মনে করি তারা ভুল করে। তাদের ধারণা এটার কোনও বিকল্প নাই। কিন্তু আসলে এটা নিয়ে রাজনীতি করা উচিত না।
জিজ্ঞাসা : সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে রাজনীতি ব্রিটিশ আমলেও হয়েছে। ব্রিটিশরাই অলমোস্ট শুরু করেছে। পরিবেশের উন্নতি ঘটেছে কতটা?
কামাল হোসেন: সুস্থ চিন্তা করার একটা ট্র্যাডিশন আমাদের মধ্যে আছে। প্রকৃত অর্থে ক্ষমতার মালিক জনগণ এটা অন্তর থেকে বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করে। এই জিনিসগুলো থেকে আমি আশা করি, একটা প্রক্রিয়া গড়ে উঠবে। যাদের মধ্য দিয়ে জনগণ কাছাকাছি আসবে। এদের মধ্যে থেকে সেই নেতৃত্বই বেরিয়ে আসবে যারা আপসহীনভাবে এটাকে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে। এমন আশাবাদ ব্যক্ত করছি আরকি। এটা যে একেবারেই হবে সেই গ্যারান্টি দিচ্ছি না।