পৃথিবীতে যাহা কিছু আছে অর্ধেক নারী অর্ধেক তার নর। বর্তমানে নারী-পুরুষের কোন ভেদাভেদ নেই। প্রতিটি কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও এগিয়ে। সরকারি-বেসরকারি সব জায়গায় রয়েছে নারী কর্মচারী-কর্মকর্তারা। ক্ষেতে-খামারে, রাস্তা-ঘাটেও পুরুষদের সাথে কাজ করছে নারী শ্রমিকরা। এমনি এক দৃশ্য চোখে পড়লো দিনাজপুরে আমন ধানের মাঠে, পুরুষের সাথে তালমিলিয়ে আদিবাসী নারী শ্রমিকরাও ধান কাটছে। রবিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে দিনাজপুর জেলার বিরামপুর ও হাকিমপুর উপজেলার বিভিন্ন আমন ধান ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, আদিবাসী নারী শ্রমিকরা ৫ থেকে ৬ জনের একটি করে দল মাঠে ধান কাটছে। দুর থেকে বোঝার উপায় নেই এরা পুরুষ না নারী শ্রমিক। কাছে গিয়ে দেখা যায় এরা আদিবাসী নারী শ্রমিক। চলতি শীত মৌসুমে এখনও দিনে তেমন শীতের প্রভাব নেই। দুপুরে প্রচ- গরম, আর গরমে আদিবাসী নারীরা সারিবদ্ধ ভাবে আমন ক্ষেতে ধান কাটছে। তীব্র গরমে শরীর থেকে ঘাম ঝড়ছে, তবুও কাজের প্রতি নেই তাদের কোন অনীহা। হাতে ধান কাটার কাঁচি নিয়ে ধান কেটে যাচ্ছেন এই আদিবাসী নারীরা। তাদের কাজের গতি পুরুষের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। সকাল ৮ থেকে বিকেল ৪ থেকে ৫ টা পর্যন্ত চলে তাদের কাজ। কাজ শেষে দিন হাজিরা পান ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা। সংসারে স্বামীর পাশাপাশি তারাও উপার্জন করে। তাদের রোজগারে স্বামী, সংসার ও সন্তানেরা উপকৃত হচ্ছে। রোদ-বৃষ্টি, ঝড় আর প্রচ- শীতকে উপেক্ষা করে এই আদিবাসী নারী শ্রমিকরা মাঠেঘাটে কাজ করেন, কাজকে তারা ভালবাসে। আবার নারী শ্রমিকদের মধ্যে অনেক কলেজ পড়ুয়া আদিবাসী ছাত্রীরাও ধান কাটার কাজ করছেন। তারা একাজ করে নিজের লিখাপড়া খরচ যোগাড় করে পাশাপাশি পরিবারকেও আর্থিক সহযোগীতা করছেন। বিরামপুর উপজেলার বিজুল এলাকায় আমন ধানের মাঠে কথা হয় আদিবাসী নারী পূর্ণিমা পাহাড়ীর সাথে, তিনি বলেন, আমরা সকাল ৮ থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কাজ করি। তাতে টাকা পাই ৩০০ টাকা, এই টাকা দিয়ে স্বামীর অনেক উপকার হয়। সংসারের খরচ সহ ছেলে-মেয়েদের লিখাপড়া করায়। মালতী পাহাড়ী বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী দুই জনে কাজ করি। ধানের মৌসুম ছাড়াও বিভিন্ন রকম কাজ করি। সংসারে কোন অভাব হয় না। আমার দুই ছেলে আর এক মেয়ে, ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যায়। তাদের লিখাপড়া করিয়ে অনেক বড় করবো। লিজা হাসদা বলেন, সবাই মিলে এক সাথে আমরা কাজ করি। আমরা ৬ জন এক সাথে থাকি। যে কোন মাঠে ধান কাটি, গৃহস্থ কখনও খাবার দেয়, আবার কখনও দেয় না। সকালে কাজ শুরু করেছি বিকেল ৪ টা পর্যন্ত তা চলবে। কৃষক মতিউর রহমান বলেন, এবার আমি ১৫ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগিয়েছে। সব মাঠের ধান কাটার উপযুক্ত হয়েছে। প্রতি বছর আদিবাসী নারী শ্রমিক দিয়ে ধান কেটে নেয়। তবে তারা পুরুষ শ্রমিকদের তুলোনায় কোন অংশে কম নয়। পুরুষদের মতোই তারা কাজ করে থাকে। হাকিমপুর উপজেলা কৃষি অফিসার ড. মোছাঃ মমতাজ সুলতানা বলেন, চলতি আমন মৌসুমে এই উপজেলায় ৮ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। ১৪ থেকে ১৫ হেক্টর জমিতে ১৫% ধান কাটা হয়েছে। কৃষকরা তাদেন কাঙ্খিত ধান কাটা-মাড়াই শুরু করেছেন। মাঠে ধানের ফলন ভাল হয়েছে। আমরা শুরু থেকে কৃষকদের বিভিন্ন সেবা সহ সুপরামর্শ দিয়ে আসছি। এছাড়াও অনেক কৃষককে বিনামূল্যে সার ও বীজ প্রদান করা হয়েছে। বিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরিমল কুমার সরকার বলেন, পুরুষের পাশাপাশি বর্তমান নারীরাও এক সাথে কাজ করছেন। বিশেষ করে আদিবাসী নারী শ্রমিকরা কৃষি কাজে একটা বড় ভুমিকা পালন করে আসছে। বিরামপুর উপজেলায় অনেক আদিবাসী নারী শ্রমিকরা আছেন। তারা তাদের সংসারে মুল উপার্জন হিসেবে কাজ করে আসছেন। বিরামপুর উপজেলা চেয়ারম্যান খায়রুল আলম রাজু বলেন, নারী ক্ষমতায়ন, নারী এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেশ। বাংলাদেশ সরকার নারী শক্তিকে কাজে লাগচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন ক্ষমতাশীল স্থানে তাদের প্রাধান্য দিয়েছে। বিশেষ করে আদিবাসী নারীরা কৃষি কাজে পুরুষদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তারা মাঠে কাজ করছেন। তাদের ছোঁয়াতে সংসার সহ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।