দেশের বিভিন্ন স্থানে শীতপ্রবাহ শুরু হয়েছে। যদিও পরিপূর্ণ শীতকাল এখনো আসেনি। শীতের মৌসুম আসার আগেই আমরা শীতের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। আমরা অনেকেই নিজেদের সাধ্যানুযায়ী হরেক রকমের শীতবস্ত্র ক্রয় করছি। অনেক দামি দামি কম্বল, স্যুয়েটার, হাত মোজা, পা মোজা, ভিআইপি কোট, স্টাইলিশ ক্যাপ, ইত্যাদি শীতবস্ত্রাদি। আমরা কি একটু লক্ষ করেছি, আমাদের পাশের বাড়িতে অবস্থিত অসহায় প্রতিবেশীদের প্রতি? একটিবার কি খোঁজ-খবর নিয়েছি যে, কিভাবে তারা শীতকাল অতিবাহিত করবে? আমরা কি একনজর দৃষ্টি দিয়ে দেখেছি শীতে কাঁপতে থাকা ওই অনাথ শিশুটির প্রতি, যে কি না একটি শীতবস্ত্রের আশায় হন্যে হয়ে ঘুরছে শহরের অলিতে-গলিতে। আমরা কি রেল স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শীতের রজনীতে জড়সড় হয়ে শুয়ে থাকা হতদরিদ্রের কাঁপুনি উপলব্ধি করেছি?
আমরা কি গভীর দৃষ্টিতে লক্ষ করে দেখেছি, বস্তির ওই অসহায় বাচ্চাগুলোর প্রতি, যারা একটি কাঁথা বা কম্বল নিয়ে কয়েকজনে টানাটানি করছে? আমাদের চারিদিকে এমন অসংখ্য অসহায় প্রতিবেশী, অনাথ শিশু, হতদরিদ্র, নিন্ম শ্রেণীর মানুষের শীতের মৌসুম এভাবেই অতিবাহিত হয়। আমাদের উচিত প্রত্যেকের সাধ্যানুযায়ী তাদের পাশে দাঁড়ানো। পাশে দাঁড়ানোটা হতে পারে অর্থ দিয়ে না হয় শীতবস্ত্র দিয়ে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা প্রকাশ্য দান-সদকা করো, তবে তা কতই না উত্তম আর যদি গোপনে ফকির-মিসকিনকে দান করে দাও, তবে আরো বেশি উত্তম। আর তিনি তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (সূরা বাকারা-২৭১)
অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি তোমাদের যা কিছু অর্থসম্পদ দিয়েছি তা থেকে তোমরা (আল্লাহর পথে) ব্যয় করো তোমাদের মৃত্যু আসার আগেই (মৃত্যু এসে গেলে সে বলবে), হে আমার রব, তুমি যদি আমাকে আরো কিছু কালের অবকাশ দিতে তাহলে আমি তোমার পথে দান করতাম এবং (এভাবেই) তোমার নেক বান্দাদের দলে শামিল হয়ে যেতাম।’ ( সূরা মুনাফিকুন-১০) রাসূল সা: বলেন, ‘কিয়ামত দিবসে সাত শ্রেণীর মানুষ আরশের নিচে ছায়া লাভ করবে, তাদের মধ্যে একশ্রেণী হচ্ছে ‘এক ব্যক্তি এত গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত কী দান করে বাম হাত জানতেই পারে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)
মহানবী সা: আরো বলেন, ‘খেজুরের একটি অংশ দান করে হলেও তোমরা জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করো।’ (বুখারি ও মুসলিম) তবে হ্যাঁ… একটি কথা আমাদের খুব ভালোভাবে মনে রাখতে হবে। আমাদের এসব ভালো কাজগুলো একমাত্র আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির জন্য হতে হবে, রিয়া বা লোক দেখানোর জন্য নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মতো যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না।
অতএব, এ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মতো যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অতঃপর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিলো।’ (সূরা বাকারা-২৬৪)
রাসূল সা: বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যে উপকার করে খোঁটা দেয়।’ (সুনান নাসায়ি-৫৬৮৮)
তাই আসুন! আমাদের প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুযায়ী দানের হাতকে স¤প্রসারিত করি। হতে পারে আমরা নতুন বস্তু কিনে দিতে সক্ষম না কিন্তু আমাদের বাড়ি অতিরিক্ত শীতবস্ত্র রয়েছে যেগুলোর প্রয়োজন নেই, সেই অতিরিক্ত বস্ত্রগুলো অসহায় মানুষকে দিয়ে সাহায্য করতে পারি।