পিতা-মাতা সন্তানের জন্য শ্রেষ্ঠ নেয়ামত। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে পিতা-মাতার খেদমতের কথা জোরালোভাবে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
আর আমি তার পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মতো তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধরেছে। তার দুধ ছাড়ানোর সময় হলো দু’বছর। নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। অবশেষে আমারই কাছে ফিরে আসতে হবে। আরো ইরশাদ করেন-
আর আমি বনি ইসরাইলের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো উপাসনা করবে না, পিতা-মাতা, আত্মীয়স্বজন, এতিম ও দীন-দরিদ্র্যের সাথে সদ্ব্যবহার করবে (সূরা আল-বাকারা-৮৩)। আরো ইরশাদ করেন- তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করো। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদের ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদের ধমক দিও না এবং তাদের সাথে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বলো (সূরা বনি ইসরাইল-২৩)। আরো ইরশাদ করেন, আর আমি মানুষকে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশ দিয়েছি (সূরা আনকাবুত-৮)। মহানবী সা: বলেছেন, তার নাক ধুলামিশ্রিত হোক, তার নাক ধুলামিশ্রিত হোক, তার নাক ধুলামিশ্রিত হোক তথা ধ্বংস হোক। জনৈক সাহাবি প্রশ্ন করেন, কাকে বলছেন হে আল্লাহর রাসূল?
রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, যে ব্যক্তি পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেয়ে জান্নাতে যেতে পারেনি। অর্থাৎ নিজেকে জান্নাতে যাওয়ার যোগ্য করতে পারেনি (মুসলিম, মিশকাত হাদিস নং-৪৯১২)।
অন্যত্র বলেন : আল্লাহ তায়ালা পিতা-মাতার সাথে অসৎ আচরণ করা হারাম করেছেন (সহিহ বুখারি, মিশকাত হাদিস নং-৪৯১৫)। আরো ইরশাদ করেন, রবের সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টির ওপর নির্ভরশীল, আর রবের অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টির ওপর নির্ভরশীল (তিরমিজি)। আরো ইরশাদ করেন, খোটাদানকারী, পিতা মাতার সাথে দুর্ব্যবহারকারী এবং মদ্যপায়ী জান্নাতে প্রবেশ করবে না (নাসায়ি, দারেমি)।
হজরত আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক সাহাবি মহানবী সা:কে প্রশ্ন করেন- হে আল্লাহর রাসূল! আমার সদাচরণ পাওয়ার যোগ্য কে? রাসূল সা: বলেন তোমার মা। সাহাবি আবার প্রশ্ন করেন তারপর কে? রাসূল সা: বলেন তোমার মা। সাহাবি আবার প্রশ্ন করেন তারপর কে? রাসূল সা: এবারও বলেন তোমার মা। সাহাবি আবার প্রশ্ন করেন তারপর কে? রাসূল সা: বলেন তোমার পিতা।
মৃত পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের করণীয়: জীবিত পিতা-মাতার প্রতি যেমন সন্তানের অনেক হক ও করণীয় রয়েছে, তেমনি মৃত পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের অনেক হক ও করণীয় রয়েছে। যেমন- হজরত আবু উয়াসদ সাঈদী রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একদা রাসূলুল্লাহ সা:-এর দরবারে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় বনুসালামা গোত্রের জনৈক ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতার ইন্তেকালের পর তাদের প্রতি আমার কোনো হক অবশিষ্ট আছে কি? রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, হ্যাঁ আছে। ১. তুমি তাদের জন্য দোয়া করবে। ২. তাদের জন্য ইস্তেগফার তথা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে। ৩. তাদের কৃত ওসিয়ত ও অঙ্গীকার পূরণ করবে। ৪. পিতা-মাতার সাথে সম্পর্কিত আত্মীয়দের সাথে সদাচরণ করবে। ৫. পিতা-মাতার বন্ধুবান্ধবদের সম্মান করবে ও সুসম্পর্ক বজায় রাখবে (সুনানে আবু দাউদ, মিশকাত পৃ-৪২০, হাদিস নং-৪৯৩৬)।
মহানবী সা: বলেছেন, যে ব্যক্তির পিতা-মাতা উভয় অথবা একজন মৃত্যুবরণ করেছে, জীবদ্দশা সে তাদের সাথে ভালো আচরণ করেনি, সে যেন সদা তাদের জন্য দোয়া করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে তাকে (সদাচরণকারী হিসেবে লিপিবদ্ধ করা হবে (বায়হাকি, মিশকাত- হাদিস নং ৪৯৪২)। পিতা-মাতার জন্য দোয়ার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, (পিতা-মাতার জন্য এভাবে দোয়া করবে) হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম করুন, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন পালন করেছেন (সূরা বনি ইসরাইল-২৪)। হজরত নূহ আ: বলেছেন, হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যারা মুমিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করে তাদেরকে এবং মুমিন পুরুষ ও মুমিনা নারীদেরকে ক্ষমা করুন এবং জালেমদের কেবল ধ্বংসই বৃদ্ধি করুন (সূরা নূহ-২৮)। হজরত ইবরাহিম আ: দোয়া করেছেন- হে আমাদের রব আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং মুমিনদেরকে বিচার দিবসে ক্ষমা করে দিন। লেখক: প্রধান ফকিহ, আল জামেয়াতুল ফালাহিয়া কামিল মাদরাসা, ফেনী।