জেলায় শীতের ভাপা পিঠা বিক্রি বেড়েছে। অগ্রাহায়ণের শেষে জেলা শহর ও বিভিন্ন উপজেলায় জমে উঠেছে ভাপা পিঠা বিক্রির ভ্রাম্যমাণ স্থানগুলো। সন্ধ্যার পর পর হিমেল হাওয়ায় ধোয়া উঠা গরম ভাপা পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় করে বিভিন্ন বয়সের নানা শেণী পেশার মানুষ। শহর ও শহরতলীর ফুটপাত, রাস্তার মোড়, হাট-বাজারগুলোতে এসময়ে ভাপা পিঠার পাশাপাশি অন্যান্য পিঠাও বিক্রি হয়। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত চলে পিঠা বিক্রি ও খাওয়ার পালা। নতুন চালের মন মাতানো গন্ধে ভরে উঠে চারপাশ।
পিঠা বিক্রেতারা জানান, নতুন খেজুরের গুড় ও নতুন চালের গুড়া দিয়ে ভাপা পিঠা বানানো হয়। গরম পানির তাপে (ভাপে) এ পিঠা তৈরি হয় বলে একে ভাপা পিঠা বলা হয়। এ পিঠাকে আরো সুস্বাধু ও মুখরোচক করতে নারকেল ও গুড় ব্যবহার করা হয়। পিঠা তৈরিতে একটি পাতিল ও ঢাকনা ব্যবহার করা হয়। জলন্ত চুলার উপর পাতিলে পানি দিয়ে ঢাকনার মাঝখানটা ছিদ্র করে পাত্রের মুখে দিতে হয়। এসময় ঢাকনার চারপাশে আটা, চালের গুড়ি ও কাপড় দিয়ে শক্ত করে মুড়ে দেওয়া হয়। যাতে করে গরম পানির ভাপ বের হতে না পারে।
তারা আরো জানান, পরে ছোট একটি গোল পাত্রের মধ্যে চালের গুড়া, নারকেল ও গুড় মিশিয়ে পাতলা কাপড়ের আবরণে ঢাকনার মুখে রাখা হয়। পানির হালকা গরম তাপে নিমিষেই সিদ্ধ হয়ে যায় নতুন চালের মজাদার ভাপা পিঠা। একটি পিঠা বানাতে ১ থেকে ২ মিনিট সময় লাগে। প্রতি পিস পিঠা মানভেদে ৫ থেকে ১০ টায় বিক্রি হয়। আবার কেউ কেউ পাতিলের মুখে পাতলা কাপড় বেঁধে দেন। পানি গরম হলে পাতিলের উপর রাখা কাপড়ে ছোট পাত্রে পিঠা দেয়া হয়। উপরে দিয়ে দেয়া হয় পাতিলের ঢাকনা। এ পদ্ধতিতে একসাথে অনেকগুলো পিঠা তৈরি করা যায়।
শহরের কালীবাড়ি রোডের মোড়, সদোর রোড, নতুন বাজার, যুগীর খোল, উকিল পাড়া, বাংলা স্কুল মোড়, বরিশাল দালানের সামনে, হাসপাতাল রোড, টাউন হলের সামনে, বাসস্ট্যান্ড, কালীনাথ রায়ের বাজার, সরকারি স্কুল মোড়ে দেখা যায় অস্থায়ী দোকানে ভাপা পিঠা বিক্রি। এছাড়া শহরতলীর পরানগঞ্জ, ইলিশা বাজার, লঞ্চঘাট, বাংলাবাজার, ভেদুরিয়া লঞ্চ ঘাট, শীবপুর, তুলাতুলী বাজার, গুইঙ্গার হাট, ভেলুমিয়া বাজার, চালতাতুলী, নবীপুরসহ বিভিন্ন উপজেলার বাজার হাটে দেখা মেলে ভপা পিঠার দোকান।
সদরের বাংলাবাজার এলাকায় ফুটপাতে ভাপা পিঠা বিক্রেতা জাবেদ আলী জানান, অন্যান্য সময়ে তিনি ফুটপাতে চা-বিস্কিট বিক্রি করেন। কিন্তু শীতের সময় এলেই তিনি ভাপা পিঠা বিক্রি করেন। এ ব্যবসায় অল্প পুজি লাগে বলেই কোন সমস্যা হয়না। এছাড়া লাভ ভালোই হয়। কোন কোন দিন হাজার টাকাও লাভ হয় বলে জানান ভ্রাম্যমাণ এ পিঠা বিক্রেতা।
ব্যাংকের হাট বাজার এলাকার পিঠা বিক্রেতা নাদের মিয়া ও শহিদুল জানান, ভাপা পিঠার দাম অল্প হওয়াতে সব ধরনের মানুষই এখানে ভিড় করে পিঠা খেতে। কেউ কেউ আবার পিঠা কিনে নিয়ে যায় প্রিয়জনের জন্য। তারা ভাপা পিঠার সাথে চিতই পিঠাও বিক্রি করেন বলে জানান।
শহরের কালীবাড়ি মোড় এলাকায় ভাপা পিঠা খেতে আসা ভোলা সরকারি কলেজের ছাত্র আরিফুল, তানজিল, রোকন ও রাহাত বাসস’কে জানান, শীতের সময় ভাপা পিঠা খাওয়ার মজাই আলাদা। আমাদের শীতের সাথে পিঠার যে একটা সম্পর্ক তা ভাপা পিঠা খাওয়ার মধ্যেই বোঝা যায়। প্রায় দিনই তারা দল বেঁধে পিঠা খেতে আসেন বলে জানান।