বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশ জাতি ও রাষ্ট্র গঠনে সবচেয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে যুব সমাজ। অথচ আমাদের দেশে তারাই সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। তাদের মেধার বিকাশে রাষ্ট্রের কোন অবদান নেই। বরঞ্চ যুবকদের মেধা ধ্বংসের যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন হয়ে আছে। বহু কষ্টে কিছু যুবক তাদের নিজ মেধাকে বিকশিত করার জন্য সংগ্রাম করছেন। পরবর্তী পর্যায়ে তাদের মেধা বিকাশের ক্ষেত্রগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। দলীয় অন্ধ আনুগত্য না থাকলে ব্যক্তির মেধা ও যোগ্যতা যত বেশিই হোক না কেন তাকে রাষ্ট্রীয় কোন ভালো স্থানে দায়িত্ব দেয়া হয় না। একটা মানুষের সবচেয়ে বড় অধিকার তার কথা বলার অধিকার। ন্যায়ের পক্ষ নেয়া এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। আজকে সেসব অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। মিথ্যা মামলা ঠুকে দিয়ে অনেক সম্মানিত ব্যক্তিকে অপমানিত করা হচ্ছে। আর যুবসমাজ তারা তাদের নেতৃত্ব সৃষ্টির উন্মুক্ত পরিবেশ পাচ্ছে না। তাদের উপর জোর করে সবকিছু চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব যুবক গত তিন বারের নির্বাচনে নিজের ভোট সমর্থন দেয়ার সুযোগ পায়নি। এখনই সময় সকল জুলুমের অবসান ঘটিয়ে দেশ এবং জাতির কল্যাণে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ময়দানে ভূমিকা রাখার। গত ২৭ ডিসেম্বর সোমবার রাতে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে “সীরাতুন্নবী (সা) উপলক্ষে সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ ও আলোচনা সভায়” প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মজিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মোঃ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক আব্দুর রব, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা লুৎফুর রহমান, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী। বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে মুহা. দেলাওয়ার হোসেন ও মু. আবদুল জব্বার। এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য কামাল হোসাইনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জামায়াত নেতৃবৃন্দ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কার্যত আজ বাংলাদেশে যুব সমাজের অধিকার হাইজ্যাক হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় দেশের যুব সমাজকে জাগতেই হবে। তারা দুপুরের সূর্য হয়ে জুলুমবাজদের মোকাবেলায় জ্বলতে থাকবে। অন্যায় শাসকের বিরুদ্ধে নিজের ন্যায্য সকল অধিকার আদায়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। রাসূল সা. যুবকদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। মাত্র দশ বছরে একটি দেশে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত করেছিলেন। রাসূল সা. এর সঙ্গি সাথীরা অধিকাংশই তরুণ ও যুবক ছিলেন। অতএব মানবতার মুক্তির জন্য একটি ঐতিহাসিক বিপ্লব সৃষ্টি করতে আমি যুব সমাজের প্রতি আহ্বান রাখছি।
অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে মুহাম্মদ সা. এর নীতি আদর্শ সবার ঊর্ধ্বে। তার জীবনী পড়ে আমরা বুঝতে পারি যখন মানুষের কোন অধিকার ছিলো না, সেই আইয়ামে জাহিলিয়াতের যুগে আল্লাহ তায়া’লা মুহাম্মাদ সা. কে পাঠিয়ে মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জমিনে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, মানুষের মধ্যে ইনসাফ, সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, নবী মুহাম্মাদ সা. মানবাধিকারের নজির স্থাপন করেছেন প্রথমে নিজের সঙ্গী সাথী এবং পরবর্তীতে অধীনস্থ সকল মানুষের প্রতি। তিনি দেখিয়ে গেছেন কিভাবে একটি ন্যায় ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ কায়েম করতে হয়। আজকের দুনিয়ায় আমরা যেসব বঞ্চনার শিকার হচ্ছি তার মূল কারণ হচ্ছে আল্লাহর রাসূলের দেখানো ন্যায়ভিত্তিক সমাজ আজকের দুনিয়ায় প্রতিষ্ঠিত নেই।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, মহানবী সা. আমাদেরকে বিয়ে ও পরিবারিক বন্ধন সম্পর্কে যে নিয়ম শিখিয়েছেন সেখানেই মূলত নৈতিকতার মৌলিক ধারণা পাওয়া যায়। সেখানে আত্মীয়তার বন্ধনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে মানব সমাজ গড়ে ওঠে। পরিবারে প্রাপ্ত ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ শিক্ষায় সমাজ গঠনে নিয়ামকে রূপান্তরিত হয়। তাই আমাদের সকলের পরিবারকে একটি আদর্শ পরিবারে পরিণত করতে হবে।
মু. সেলিম উদ্দিন বলেন, আজকের যুবকদেরকে রাসূল সা. এর জীবন চরিত সম্পর্কে জানতে হবে। তার জীবন চরিত থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি কোন যুবক চলতে পারে তাহলে অবশ্যই সে সফলকাম হবে। মানুষের অধিকারের প্রশ্নে সবাইকে সচেতন করতে রাসূল সা. এর জীবন আদর্শ জানা অপরিহার্য। তাঁকে অনুকরণ ও অনুসরণ করার মাঝেই মানবতার কল্যাণ নিহিত রয়েছে।
মোবারক হোসেন বলেন, একজন সামান্য শ্রমিক ও কর্মচারীর প্রতিও মুহাম্মাদ সা. সর্বদা নিষ্ঠাবান থাকতেন। শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বেই তার মজুরি পরিশোধ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
অধ্যাপক আব্দুর রব বলেন, আজকের দিনেও যারা পৃথিবীর শেষ্ঠ মনীষীদের নিয়ে বই লেখেন তারাও প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সা. এর নামটি সবার প্রথমে লিখতে বাধ্য হন। কারণ মানুষের প্রয়োজনের যত গুলো শাখা রয়েছে সবখানেই সর্বোত্তম আদর্শ হলেন মুহাম্মাদ সা.।
মাওলানা লুৎফুর রহমান বলেন, সভ্যতার নামে সব জাতির কাছে নারী ছিলো দলিত, অপমানিত ও লাঞ্ছিত। সেবাদাসী হিসেবে মন্দিরে নারী ছিলো একটা উপঢৌকন মাত্র। অন্যদিকে ইসলাম এসে নারী জাতির মর্যাদা দিয়েছে। নর-নারীকে একে অপরের পরিপূরক করেছে।
ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সা. এর উদারতা দেখে অন্যরা মুসলমান হতে প্রেরণা পেয়েছেন। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি কারো প্রতি জোর করেননি। তার দেখানো পথে আমাদের সমাজে উদারতা প্রদর্শন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমরা ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের পক্ষ হতে সীরাতুন্নবী (সা) উপলক্ষে সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, হামদ-নাতসহ বেশকিছু কর্মসূচীর আয়োজন করেছিলাম। সেখানে সাধারণ মানুষের ব্যাপক উৎসাহ ও অংশগ্রহণ আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। এজন্য অংশগ্রহণকারী সবাইকে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সা. এর নীতি ও আদর্শ সম্পর্কে সবার জানার আগ্রহকে আরও ত্বরান্বিত করা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিশ্ববাসীর জন্য মুহাম্মাদ সা. কে রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছেন। সুতরাং এই অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে নবী মুহাম্মাদ সা. এর নীতি আদর্শ অনুসরণের কোন বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে “সীরাতুন্নবী (সা) উপলক্ষে ৩ টি গ্রুপে অনুষ্ঠিত সিরাত পাঠ প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে নগদ অর্থ, ক্রেস্ট ও বইসহ বিভিন্ন পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।