রাজধানীতে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কতৃক ভ্রাম্যমান দোকানে ন্যায্যমূল্যের ডাল, চিনি, তেল, পেঁয়াজ কিনতে গেলেও লাগে লবিং। ধরতে হয় দালালের হাত। না হলে দুই দিন সিরিয়ালে দাঁড়িয়েও পণ্য পান না অনেক ক্রেতা। গতকাল বুধবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলের বক চত্তরে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) কতৃক পরিচালিত ভ্রাম্যমান দোকানে ন্যায্যমূল্যের ডাল, চিনি, তেল, পেয়াইজসহ নিত্যপণ্য কিনতে এসে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পরে নারী ক্রেতারা। এসময় ক্রেতাদের কাছ থেকে এই তথ্য জানা যায়।
আছিয়া খাতুন (৬০) নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘এখানে মাল কিনতে হইলেও লোক লাগে। নাইলে দুই দিন সিরিয়ালে দাঁড়াইয়াও অনেক সময় মাল পাই আবার অনেক সময় পাই না।’
তিনি বলেন, ‘সাড়ে ৮টায় আইছি। ৭ নম্বর সিরিয়ালে ছিলাম। এহন জোহর আজান দিয়া দিছে। সিরিয়াল শেষ হয় না। আর সাত নম্বর সিরিয়ালও আহে না। এগো বিচার আল্লাহ করবো।’
এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, ‘সকাল ৮টায় আমি সিরিয়ালে দাঁড়িয়েছি। গাড়ি আসছে ১টার একটু আগে। সিরিয়ালের সর্বপ্রথম আমিই ছিলাম। কিন্তু এখানে দালাল সর্দারা তাদের লোক ঢুকায়। ফলে তিন চার ঘণ্টায়ও আমরা পণ্য কিনতে পারি না।’
তিনি আরো বলেন, ‘এখানে কেয়া, কেয়ার মা ও শান্তির মা নামে তিন দালালের একটি চক্র আছে। তারা এখানে ও খোকা সেন্টারের সামনে টিসিবি’র চাল বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা সিরিয়াল নিয়ে এলেও বলে যারা সিরিয়াল দিয়েছে তারা চাল পাবে না। আমরা যাদের দিব তারাই পাবে। আর সাধারণ ক্রেতারা কিছু বললে তারা আমাদের মারধর করেন। ফলে ভয়ে কেউ কিছু বলেন না।’
দালাল চক্রের বিষয় জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বৃদ্ধ বলেন, ‘বাবা মোগো বয়স হইয়া গেছে। শরীরে শক্তি নাই। এহন যদি কারো নাম কই তাইলে মোরে মাইরধর করব। সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকলে মাল পামু।’ অবশ্য পুরুষ ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের সিরিয়ালে কোনো দালাল নেই। তবে পুরুষ ক্রেতা বেশি হওয়ায় তাদের দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য নিতে হয়। তাদের দাবি তিনজন পুরুষ ক্রেতার সাথে একজন নারী ক্রেতাকে পণ্য দেয়া হোক। এ বিষয় জানতে চেয়ে ফোন করা হলে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে অবগত ছিলাম না। আমি এখনি আমাদের আঞ্চলিক অফিসের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবিরের সাথে কথা বলবো। এরকম যদি কোনো দালাল চক্র তৈরি হয়ে থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে এখনি কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিচ্ছি।’