রাখার ভাড়া বেশি হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ি আমদানি প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে। সমুদ্র পথে দেশে আমদানি করা গাড়ির বড় অংশ এখন খালাস হচ্ছে খুলনার মোংলা বন্দর দিয়ে। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে গাড়ি খালাসের পর ফ্রি টাইম (শেড বা ইয়ার্ডে ভাড়া ছাড়াই গাড়ি রাখার সময়) থাকে চার দিন। এই চার দিন ভাড়া গুণতে হয় না আমদানিকারকদের, এর পর থেকে ভাড়া গোনা শুরু হয়। ভাড়া নির্ধারণ হয় গাড়ির ওজন ও সিসি ভেদে। গাড়ি রাখার ভাড়া অন্তত ছয় গুণ বেশি ভাড়া দিতে হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। মোংলা বন্দরে যা অনেক কম।
আমদানিকারকরা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে যে ভাড়ায় গাড়ি দুই দিন রাখা যায় একই ভাড়ায় মোংলা বন্দরে গাড়ি ৬ থেকে ৭ দিন রাখা যায়। আর একারণে আমদানিকারকরা মোংলা বন্দরে গাড়ি খালাস করতে বেশি আগ্রহী। চট্টগ্রাম বন্দরে জাপানের বন্দর থেকে আসা গাড়িবাহী রো রো ভ্যাসেল ভিড়লে খালাস করা হয় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। বাকি ৭০ শতাংশ গাড়ি নিয়ে একই জাহাজ চলে যায় মোংলা বন্দরে। এসব জাহাজে দেশের অন্যান্য এলাকার আমদানিকারকদের গাড়ির পাশাপাশি চট্টগ্রামের আমদানিকারকদেরও গাড়ি থাকে। গাড়ি খালাস কম হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ির শেড-ইয়ার্ড বছরের প্রায় পুরো সময় থাকছে ফাঁকা। অথচ চট্টগ্রাম বন্দরে ইয়ার্ডগুলোতে প্রায় সময় বাড়তি কনটেইনার থাকে, ফাঁকা থাকে গাড়ি রাখার জন্য নির্মিত পৃথক শেড ইয়ার্ড। গেল এক মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৪ হাজার ইউনিট ধারণ ক্ষমতা থাকলেও গাড়ি ছিল ৯০০ ইউনিট কিংবা ১ হাজার ইউনিটের মতো। মাসজুড়ে বাকি ৩ হাজার ইউনিট গাড়ি রাখার জায়গা ফাঁকাই ছিল। মঙ্গলবার (২১ ডিসেম্বর) বন্দরে গাড়ি ছিল ৯০৩টি।
চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাব বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, ফ্রি টাইমের পর প্রথম সাত দিনের জন্য প্রতিটি গাড়ি রাখতে মোট ভাড়া দিতে হচ্ছে ৭৯৩ টাকা। এই ভাড়ার সাথে ৫০৩ টাকা নানা ধরনের চার্জ যুক্ত হয়ে ৭ দিনের ভাড়া দাঁড়ায় ১ হাজার ২৯৩ টাকা। পরবর্তী সাত দিন একই গাড়ির জন্য নানা ধরনের চার্জসহ ভাড়া দাঁড়ায় ২ হাজার ৪৮৩ টাকা। ১৪ দিন পরেও খালাস না নিলে প্রতিদিনের জন্য ভাড়া গোনা শুরু হয়। প্রতিদিনই প্রতিটি গাড়ির জন্য দিতে হয় ৭০০ টাকা করে। অর্থাৎ আগে প্রথম ৭ দিন মিলে ১ হাজার ২৯৩ টাকা করে ভাড়া গুণতে হতো আমদানিকারকদের। ১৪ দিন পর প্রতিদিনই গাড়ির ভাড়া গুণতে হয় ৭০০ টাকা করে। ১৪ দিন পর সপ্তাহ ভিত্তিক ভাড়ার পরিবর্তে দৈনিক ভিত্তিক ভাড়া গোনা শুরু হয়। অপরদিকে মোংলা বন্দরে জাহাজ থেকে গাড়ি খালাসের পর প্রথম চারদিন ফ্রি টাইম। এরপর সাত দিন প্রতিটি গাড়ি রাখার জন্য ভাড়া গুণতে হয় ৪০০ টাকা। পরের সাত দিন ভাড়া গুণতে হয় ৭৬৭ টাকা। এরপর বন্দর থেকে গাড়ি ছাড় না করলে অর্থাৎ ১৪ দিন পার হলে প্রতিদিন ১২৯ টাকা করে চার্জ গুণতে হয় আমদানিকারকদের। যা চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে অন্তত ছয় গুণ কম।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, এই বন্দরে ফ্রি টাইমের চার দিন পর আমদানি করা গাড়ি রাখার রেন্ট বা ভাড়া বেশি, মোংলা বন্দরে কম। তাই বেশিরভাগ আমদানিকারক খুলনার মোংলা বন্দরে আমদানি করা গাড়ি খালাস করেন।
৪ হাজার ইউনিট ধারণ ক্ষমতার চট্টগ্রাম বন্দরের শেড ইয়ার্ডে গাড়ি কম থাকায় ফাঁকা যাচ্ছে কিনা এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ধারণ ক্ষমতার তুলনায় গাড়ি কমই আছে। তবে আমরা ফাঁকা জায়গাগুলো ঠিক ফাঁকা রাখি না। অন্য আইটেমের পণ্যবাহী কনটেইনারও গাড়ির শেড-ইয়ার্ডের ফাঁকা জায়গায় রাখা হচ্ছে।
গাড়ি আমদানিকারকের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকলস ইম্পোটার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। সংগঠনটির সভাপতি আবদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ি রাখার ভাড়া অত্যাধিক বেশি। এটা কোনও মতে ব্যবসাবান্ধব নয়। খুলনার মোংলা বন্দরে ফ্রি টাইমের পর প্রতিদিনের গাড়ি রাখার ভাড়া অনেক কম। আর চট্টগ্রাম বন্দরে প্রতিদিন গাড়ি রাখার ভাড়া ফ্রি টাইমের পর ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। আমদানিকারকরা চট্টগ্রাম বন্দরেই গাড়ি খালাস করতে চান। কিন্তু বাড়তি ভাড়া এড়াতে বাধ্য হয়ে মোংলা বন্দরকে বেছে নেন। কারণ বাড়তি ভাড়া দিয়ে গাড়ি খালাস করতে বেশি অর্থ ব্যয় হয়। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের রাজস্ব আয় কম হচ্ছে। ভাড়া কমাতে বারভিডার পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে বহুবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। মিটিং হয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি।
বারভিডার সাবেক সভাপতি এবং এফবিসিসিআই এর বর্তমান কমিটির সহসভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে গাড়ি আমদানি ৭০ শতাংশ কমে গেছে। একটাই কারণ ফ্রি টাইমের পর গাড়ি রাখার বাড়তি ভাড়া। ব্যবসায়ীরা চান চট্টগ্রাম বন্দরেই আমদানি করা জাহাজ থেকে গাড়ি খালাস হোক। কিন্তু বাড়তি ভাড়ার কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। মোংলা বন্দরে গাড়ি রাখার ভাড়ার চেয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের ভাড়া অন্তত ৮ থেকে ৯ গুণ বেশি। এক দেশের দুই বন্দরে গাড়ি রাখার ভাড়া দুই ধরনের হতে পারে না।