বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশ থেকে বিরোধী শক্তি নিশ্চিহ্ন করাই সরকারের লক্ষ্য। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ গুম কর্মসূচির বৃত্তের মধ্যে ভয়ঙ্কর পন্থায় অপশাসন চালিয়ে যাচ্ছে। এদের অন্তর্নিহিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশ থেকে বিরোধী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করা।’ রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘দুইদিন আগে ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অভিশপ্ত ভয়ংকর কালো দিবসের পনের বছরপূর্তি। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি অসাংবিধানিক তথাকথিত এক সরকার ক্ষমতা দখল করে বাংলাদেশের সমস্ত কিছু ল-ভ- করে দিয়েছিলো। গণতন্ত্র হত্যা, মানুষের অধিকার হরণ করে দেশকে নিক্ষেপ করেছিল একটা অন্ধকার গহ্বরে।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক শক্তিকে নির্মূল করার জন্য দীর্ঘদিনের দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন গং এর সরকার। বাংলাদেশকে বিরাজনীতিকরণের লক্ষ্যে সংবিধানসম্মত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে উৎখাত করে বেআইনী সেনা সমর্থিত সরকার গঠন করা হয়।’
তিনি বলেন,’গণতন্ত্রের চিরকালীন পথরেখায় চলমান নন্দিত একজন নেত্রী ও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমানসহ বহুসংখ্যক রাজনৈতিক নেতাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারারুদ্ধ করা হয়। এক-এগারোর যে তা-ব, বিরাজনীতিকরণের যে তা-ব তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ তার পরিবার।’ তিনি আরো বলেন, ‘তাদের মূল লক্ষ্য ছিলো দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নির্মূল করা। দুই বছর দেশকে ছিন্নভিন্ন করে ১/১১ এর বেআইনি সরকার পরিকল্পিতভাবে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে ভেঙ্গে দিয়ে একটি পাতানো ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে তাদেরই বশংবদ আরেক দুর্বৃত্ত লুটেরা গোষ্ঠী-আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই জানি যে, তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে সম্পূর্ণভাবে দলবিহীন, ভোটারবিহীন বিনা ভোটের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা দখলে রাখে। অতপর ২০১৮ সালে বিশ্বে ভোট ডাকাতির অভিনব ইতিহাস রচনা করে এই অপশক্তিটি। রাতের অন্ধকারে ভোটের বাক্স ভরে ‘নিশিরাতের ভোট ডাকাত’ হিসাবে সারা পৃথিবীতে নিজেদের কলঙ্কিত পরিচিতি তৈরি করেছে।’
রিজভী বলেন, ‘গত এক যুগের বেশি সময় ধরে এই আওয়ামী দস্যুরা ওয়ান-ইলেভেনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এদেশের মানুষের কাঙ্খিত গণতন্ত্রকে হত্যা করে একদলীয় ফ্যাসীবাদী শাসন জনগণের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করেছে। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক সকল প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে। বিনা নির্বাচনে পার্লামেন্ট, বিচার বিভাগ ও প্রশাসনকে দলীয়করণ করেছে। মানবাধিকার, আইনের শাসন, ন্যায়বিচার ভূলুণ্ঠিত করেছে। দেশকে গুম, খুন, অপহরণ, বন্দুকযুদ্ধ, অবিচার, অনাচার, লুটপাট, টাকাপাচার, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের অন্ধকার রাজত্বে ডুবিয়ে রেখেছে।’ রিজভী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ এই অনির্বাচিত স্বৈরাচার সরকারের প্রতি অতিষ্ঠ ও বিক্ষুব্ধ। এই সরকারের হাত থেকে জনগন মুক্তি চায়। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ফিরে পেতে চায়। একাত্তরের মত বর্তমানে আওয়ামী হানাদারদের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে সারাদেশের মানুষ আজ মুক্তি পাগল হয়ে উঠেছে। আমাদের সভা সমাবেশগুলোকে মানুষের উর্মিমুখর ঢল নামছে। ১৪৪ ভেঙ্গে জনস্রোত নেমে আসছে রাজপথে। জনগনের এখন সংশপ্তক অঙ্গীকার-জীবন দিয়ে হলেও এ মাফিয়াদের হটিয়ে দেশের মানুষকে মুক্ত করতে হবে।’ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আফরোজা আব্বাস, মীর সরাফৎ আলী সপু, মো. মুনির হোসেন, আবেদ রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।