বরিশাল জেলা পরিষদের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং সু-দৃষ্টি নজরদারীর অভাবে বছরে প্রায় ৬ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। জেলা পরিষদের স্টল ব্যবহার করে যা ভোগ করছে লিজ গ্রহীতারা। এত বিপুল অংকের রাজস্ব হারালেও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বরিশাল জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষের। এছাড়া পরিষদের স্টল বরাদ্দ নিয়ে বিক্রি বা অন্যত্র হস্তান্তরের (শর্তসাপেক্ষে) কোন বিধান না থাকলেও অধিকাংশ লিজ গ্রহীতা হস্তান্তরের নাম করে মূলত স্টলগুলো অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর এতে সহযোগিতা করছে খোদ জেলা পরিষদের উচ্চমান সহকারী ও সার্ভেয়াররা। তবে খুব শীঘ্রই দৃশ্যমান অভিযানের কথা জানিয়ে বরিশাল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসানন হাবিব বলেন অভিযোগের সত্যতা পেলে বরাদ্দ বাতিল করা হবে। সূত্রমতে, বরিশাল জেলা পরিষদের নিজস্ব মালিকানাধীন ১৭টি মার্কেটে ৩’শত ৭৯টি স্টল রয়েছে। যা দরপত্রের মাধ্যমে শর্তসাপেক্ষে লিজ প্রদান করা হয়েছে। প্রতিটি স্টলের ভাড়া নিচতলা প্রতি স্কয়ার ফুট সাড়ে ১২টাকা আর দ্বোতলা প্রতি স্কয়ার ফুট সোয়া ৬ টাকা। সে হিসেবে গড়ে প্রত্যেকটি স্টলের ভাড়া দাড়ায় ১৫০০ টাকা। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন হিসাব। লিজ গ্রহীতারা প্রত্যেকটি স্টলের ভাড়া সর্বনিন্ম ৫০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকায় ভাড়া দিচ্ছেন। হিসাবমতে, বরিশাল জেলা পরিষদের অর্থাৎ সরকারি জমি/স্টল ব্যবহার করে মধ্যস্বত্বভোগী/লিজ গ্রহীতারা বছরে প্রায় ৭কোটি টাকা আয় করলেও সরকারিখাতে (ভাড়া হিসেবে) জমা দিচ্ছেন মাত্র ৬৮ লাখ ২২ হাজার টাকা। বিশাল অংকের এ শুভংকরের ফাঁকি দিয়ে মুনাফাভোগীরা রয়েছে বহাল তবিয়তে। আর বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছেন খোদ জেলা পরিষদের দায়িত্বরতরা। অভিযোগ রয়েছে বছরের পর বছর এমনটি চলতে থাকলেও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে নিশ্চুপ রয়েছে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ উচ্চমান সহকারীরা। এদিকে বরিশাল জেলা পরিষদের কতগুলো মার্কেট বা স্টল রয়েছে তারও সঠিক হিসাব দিতে অনীহা সংশ্লিষ্টদের কিন্তু তারা সঠিক হিসাব দিতে না পেরে অপর উচ্চমান সহকারী মোজাহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। অফিস চলাকালীন দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও তার দেখা পাওয়া যায়নি। পরে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। এব্যাপারে দ্বীতিয়বার যোগাযোগ করা হলে উচ্চমান সহকারী মোঃ মোজাহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে জানান, সম্ভবত ১৪টি মার্কেট আছে। তবে কতটি স্টল আছে তা তিনি জানাতে পারেননি। এক প্রশ্নের জবাবে তার যুক্তি, ১০ বছর পূর্বে যত টাকা দিয়ে লিজ গ্রহীতা স্টল বরাদ্দ নিয়েছেন ১০ বছরে সেই টাকার মান অনুযায়ী বেশি টাকা নিয়ে যে কেউ স্টল হস্তান্তর যে কোন লোকের কাছে হস্তান্তর করতে পারেন। তবে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন স্টল বরাদ্দ নিয়ে নিজে না চালাতে চাইলে পরিষদের নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে নিজ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে স্টলটি হস্তান্তর করতে পারেন। এদিকে সরেজমিনে জেলা পরিষদের বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে জানা গেছে, অধিকাংশ দোকানই ভাড়া হিসেবে চলছে। কোন লিজ গ্রহীতাই নিজে স্টল চালাচ্ছেন না। আরো জানা গেছে, একেকটি স্টল সর্বনিন্ম ১ লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত অগ্রীম নিয়ে মাসিক ৪ হাজার থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকায় ভাড়া দিচ্ছেন স্টল বরাদ্দ গ্রহীতারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চকবাজার এলাকার এক ব্যবসায়ী জানান, ৫ লাখ টাকা অগ্রীম ও মাসিক ভাড়া ২৫ হাজার টাকা দিয়ে তিনি স্টলটি ভাড়া নিয়েছেন। বটতলা এলাকার এক ভাড়াটিয়া জানান, ৩ লাখ অগ্রীম ও মাসিক ভাড়া ৮ হাজার হিসেবে তিনি স্টলটি ভাড়া নিয়েছেন। তারা আরো জানান প্রতি বছর অগ্রীম ও ভাড়া বাড়াচ্ছেন স্টল মালিক। করোনা পরিস্থিতিতেও কোন ধরণের ছাড় দিচ্ছেন না তারা। এদিকে তৎকালীন প্রধান নির্বাহী মানিক হার এবং ড. মোঃ গোলাম আজমের দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে গত বছরের ২২ জুন এক মাস সময় বেধে দিয়ে লীজ গ্রহীতাদের সতর্ক করা হলেও ১৫ জুলাইর মধ্যে কোন লীজ গ্রহীতাই তাদের সেই নোটিশে সাড়া দেয়নি বলে জানা গেছে। বরিশাল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিব জানান, স্টল বরাদ্দ নিয়ে বিক্রির কোন বিধান নেই, এটা সম্পূর্ণ আইন বহির্ভূত। এ ধরণের কোন অভিযোগ পেলে সত্যতা যাচাই করে বরাদ্দ বাতিল করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়টি জানানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানো হবে।