বলিউডের কিংবদন্তি গীতিকার ও চিত্রনাট্যকার জাভেদ আখতার। ষাটের দশকে তিনি মুম্বাইয়ে পা রাখেছিলেন। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুটা মোটেই সহজ ছিল না তার। সারাদিন কাজের সন্ধানে মায়ানগরীর রাজপথে ঘুরতেন। রাত হলে কখনও কোনও বারান্দা, কখনও বা কোনো করিডোর, মাঝে মাঝে আবার গাছতলায় ঘুমিয়ে পড়তেন।
আজ সেই লড়াকু মানুষটির ৭৭তম জন্মদিন। বিশেষ এ দিনে ফিরে দেখা যাক তার অতীত। জানা যাক, কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কীভাবে তিনি বলিউডের মতো এত বড় একটি ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের জায়গা পাকা করে নিয়েছিলেন। ২০০৬ সালে হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া পুরনো এক সাক্ষাৎকারে জাভেদ আখতার জানিয়ে ছিলেন, কখনও কোনও বারান্দা, কখনও বা কোনো করিডোর, মাঝে মাঝে আবার গাছের তলায় ভিড়ের মধ্যে রাত কাটিয়েছেন তিনি। তার মতো আরও অনেক বেকার মানুষ রাত কাটাতো সেখানে। এরপর ১৯৬৯ সালে জাবেদ আখতার এমন একটি কাজ পান, যার ফলে তার জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল। মুম্বাইতে শুরুর পাঁচটা বছর খুবই কষ্টে কাটিয়েছেন তিনি। এরপর ১৯৬৯ সালে অভিনেতা সালমান খানের বাবা সেলিম খানের সঙ্গে জুটি বাঁধেন। লিখতে শুরু করেন একের পর এক সুপারহিট ছবির সংলাপ। সেলিম-জাভেদ নামে পরিচিতিও পেতে শুরু করেন। ১৯৭০ থেকে আশির দশক জুড়ে বলিউডে একে পর এক হিট ছবিতে কাজ করেন জাবেদ আখতার। ‘সীতা অউর গীতা’, ‘শোলে’, ‘দিওয়ার’, ‘ডন’, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’র ছবির চিত্রনাট্য নিয়ে কাজ করেছেন তিনি। বহু পুরস্কারও জিতেছেন। ১৯৮২ সালে ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে আলাদা হয়ে যায় সেলিম এবং জাভেদ জুটি। এতো গেল চিত্রনাট্যকার জাবেদ আখতারের কথা। তিনি যে হিন্দি সিনেমার অসংখ্য কালজয়ী এবং সুপারহিট গানের গীতিকার, তা সারা বিশ্বের মানুষ জানে। বলতে গেলে, গীতিকার হিসেবেই তিনি বেশি নাম করেছেন।
গীতিকার হিসেবে তিন বছর পরপর জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন জাভেদ আখতার। ১৯৯৭ সালে ‘সাজ’, ১৯৯৮ সালে ‘বর্ডার’ এবং ১৯৯৯ সালে ‘গডমাদার’-এর জন্য সেরা গীতিকারের পুরস্কার উঠেছে তার হাতে। এছাড়া ভারত সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন পদ্মভূষণ এবং পদ্মশ্রী পুরস্কারও। একসময় যে জাবেদ আখতার অন্যের বারান্দায় বা গাছতলায় রাত কাটিয়েছেন, এখন তিনি থাকেন মুম্বাইয়ে আলিশান ফ্ল্যাটে। তার মালিকানায় আছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। কঠিন অধ্যাবসায় ও পরিশ্রমের মাধ্যমে আজকের এই জায়গায় পৌঁছেছেন তিনি।
তবে শুধু জাবেদ আখতার একা নন। তার স্ত্রী সাবানা আজমি বলিউডের নামকরা অভিনেত্রী। ছেলে ফারহান আখতার জনপ্রিয় একজন অভিনেতা, গায়ক এবং প্রযোজক। মেয়ে জোয়া আখতারও একজন নামকরা প্রযোজক। বাবা-মায়ের মতো নিজ নিজ গুণে তারাও খ্যাতিমান হয়েছেন।