দাম্পত্য জীবন মানুষের একটি গুরুত্বপূর্ণ অথচ স্পর্শকাতর বিষয়। দাম্পত্য জীবনের সঠিক সিদ্ধান্তগুলো যেমন জীবনকে সুখময় করে তুলতে পারে, তেমনি সামান্য ভুল জীবনকে বিষাদময় করে তুলতে পারে। মানুষের দাম্পত্য জীবনকে সুন্দর ও সুখময় করে তুলতে কোরআনে এসেছে গুরুত্বপূর্ণ সব নির্দেশনা। নিম্নে এমন কিছু আয়াত তুলে ধরা হলো: ১. দাম্পত্য জীবন আল্লাহর অনুগ্রহ : কোরআনে দাম্পত্য জীবনকে আল্লাহর অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুতরাং মুমিনের উচিত দাম্পত্য জীবনের ব্যাপারে সতর্ক ও যত্নবান হওয়া। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে আছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের স্ত্রীদের, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল স¤প্রদায়ের জন্য তাতে অবশ্যই বহু নিদর্শন আছে। ’ (সুরা রুম, আয়াত : ২১)
২. মুমিনদের বিয়ে করা : মুমিন নারী ও পুরুষ পরস্পরকে বিয়ে করবে এটাই ইসলামের নির্দেশ। যদিও শর্তসাপেক্ষে আহলে কিতাব নারীদের বিয়ে করার অবকাশ শরিয়তে আছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুশরিক নারীকে ঈমান না আনা পর্যন্ত তোমরা বিয়ে কোরো না, মুশরিক নারী তোমাদের মুগ্ধ করলেও। নিশ্চয়ই মুমিন ক্রীতদাসী তাদের থেকে উত্তম। ঈমান না আনা পর্যন্ত মুশরিক পুরুষের সঙ্গে তোমরা বিয়ে কোরো না, মুশরিক পুরুষ তোমাদের মুগ্ধ করলেও মুমিন ক্রীতদাস তাদের চেয়ে উত্তম। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২২১)
৩. পছন্দের নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া বৈধ : পছন্দের নারী-পুরুষকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া বৈধ। ইরশাদ হয়েছে, ‘নারীদের কাছে তোমরা ইংগিতে বিয়ের প্রস্তাব করলে বা তোমাদের অন্তরে গোপন রাখলে তোমাদের কোনো পাপ নেই। আল্লাহ জানেন যে তোমরা তাদের সম্বন্ধে অবশ্যই আলোচনা করবে; কিন্তু বিধিমতো কথাবার্তা ছাড়া গোপনে তাদের কাছে কোনো অঙ্গীকার কোরো না; নির্দিষ্টকাল পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে সম্পন্ন করার সংকল্প কোরো না। জেনে রাখো যে নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের মনোভাব জানেন। সুতরাং তাঁকে ভয় কোরো এবং জেনে রাখো যে নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাপরায়ণ, পরম সহনশীল। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৩৫)
৪. বিয়ে প্রাচুর্য আনে : বিয়ে মানুষের জীবনে প্রাচুর্য আনে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ‘আইয়িম’ (সঙ্গীহীন নারী-পুরুষ) তাদের বিয়ে সম্পাদন কোরো এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরও তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। ’ (সুরা নুর, আয়াত : ৩২)
৫. স্ত্রীর মহর প্রদান : ইসলাম পুরুষকে স্ত্রীর প্রাপ্য ও নির্ধারিত মহর যথাযথভাবে প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা নারীদের তাদের মহর স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে প্রদান করবে; সন্তুষ্টচিত্তে তারা মহরের কিছু অংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বচ্ছন্দে ভোগ করবে। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৪)
৬. স্ত্রীর সঙ্গে সদাচারের নির্দেশ : ইসলাম স্ত্রীর সঙ্গে যাচ্ছে-তাই আচরণের পরিবর্তে সর্বাবস্থায় সদাচারের নির্দেশ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, নারীদের যবরদস্তি উত্তরাধিকার গণ্য করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। তোমরা তাদের যা দিয়েছ তা থেকে কিছু আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাদের অবরুদ্ধ করে রেখো না, যদি না তারা স্পষ্ট ব্যভিচার করে। তাদের সঙ্গে সৎভাবে জীবন যাপন করবে; তোমরা যদি তাদের অপছন্দ কোরো, তবে এমন হতে পারে যে আল্লাহ যাতে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন তোমরা তাকেই অপছন্দ করছ। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৯)
৭. ১৪ শ্রেণির নারীকে বিয়ে নয় : ইসলাম পুরুষের জন্য ১৪ শ্রেণির নারীকে বিয়ে নিষিদ্ধ করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মা, কন্যা, বোন, ফুফু, খালা, ভাইয়ের মেয়ে, বোনের মেয়ে, দুধ মা, দুধ-ভাগনি, শাশুড়ি ও তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সঙ্গে সংগত হয়েছে তার পূর্ব স্বামীর ঔরসে তার গর্ভজাত কন্যা, যারা তোমাদের অভিভাবকত্বে আছে। যদি তাদের সঙ্গে সংগত না হয়ে থাকো, তাতে তোমাদের কোনো অপরাধ নেই। এবং তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ তোমাদের ঔরসজাত ছেলের স্ত্রী ও দুই বোনকে একত্র করা, আগে যা হয়েছে, হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। এবং নারীদের মধ্যে তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী ছাড়া সব সধবা তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ, তোমাদের জন্য এটা আল্লাহর বিধান। উল্লিখিত নারীরা ছাড়া অন্য নারীকে অর্থব্যয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাওয়া তোমাদের জন্য বৈধ করা হলো, অবৈধ যৌন সম্পর্কের জন্য নয়। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ২৩-২৪)
৮. বেইনসাফির ভয় থাকলে একাধিক বিয়ে নয় : ইসলাম ইনসাফ ও সুবিচারের শর্তে পুরুষকে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছে। আর যে সুবিচার নিশ্চিত করতে পারবে না, তার জন্য একাধিক স্ত্রী গ্রহণের অনুমতি নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা যদি আশঙ্কা করো যে এতিম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিয়ে করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই, তিন বা চার; আর যদি আশঙ্কা করো সুবিচার করতে পারবে না, তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীকে। এতে পক্ষপাতিত্ব না করার অধিকতর সম্ভাবনা। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৩)
৯. স্বামী-স্ত্রীর গভীরতম সম্পর্ক : স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। যে সম্পর্কের মধ্যে কোনো পর্দা থাকে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা (স্ত্রীরা) তোমাদের জন্য পোশাকস্বরূপ এবং তোমরা তাদের জন্য পর্দাস্বরূপ। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১০)
১০. স্ত্রীও বিবাহবিচ্ছেদ চাইতে পারে : কোনো স্ত্রী চাইলে স্বামীর কাছে বা আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করতে পারে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো স্ত্রী যদি তার স্বামীর দুর্ব্যবহার কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তবে তারা আপস-নিষ্পত্তি করতে চাইলে তাদের কোনো গুনাহ নেই এবং আপস-নিষ্পত্তিই শ্রেয়। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১২৮)