বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৯:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
কালীগঞ্জে থামছে না কৃষি জমির মাটি কাটা কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় বাদাম চাষে আশার আলো দেখছেন কৃষকরা কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ সারেংকাঠী ও গুয়ারেখা ইউনিয়নে ঢল নেমেছে স্বচ্ছ মনের প্রার্থী আলহাজ্ব আঃ হকের পক্ষে শেরপুর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র খোকনের দায়িত্ব গ্রহণ অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা বশির আহমদ উপজেলার পর এবার সিলেট বিভাগেরও শ্রেষ্ঠ মাদ্রাসা প্রধান কালীগঞ্জের আল-জাছির হলেন দেশ সেরা কালিয়ায় মক্কীনগর কবরস্থানের উদ্বোধন ও দোয়া মাহফিল ঈশ্বরগঞ্জে প্রতীক পেয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় প্রার্থীরা আরমান হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধন

শীতের জেলায় দৃষ্টিনন্দন টিউলিপ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২২

শীতপ্রধান দেশের নজর কাড়া ফুল টিউলিপ। সেই ফুল ফুঁটেছে শীতের জেলা পঞ্চগড়ে। জেলার তেঁতুলিয়ায় প্রথমবারের মতো ফার্ম আকারে চাষ করছেন প্রান্তিক ক্ষুদ্র চাষিরা। উত্তরাঞ্চলে শীত মৌসুমে তাপমাত্রা বেশ কম থাকায় টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পরীক্ষামূলকভাবে এই ফুল উৎপাদনে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভলেভমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। প্রকল্পটিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)।
তেঁতুলিয়া উপজেলার দর্জিপাড়া এবং শারিয়াল জোত গ্রামের ৮ জন ক্ষুদ্র চাষি পরীক্ষামূলকভাবে ৪০ শতক জমিতে ৬ প্রজাতির প্রায় ৪০ হাজার টিউলিপের চাষ করছেন। জানুয়ারির ১ তারিখে লাগিয়েছিলেন বীজ। সাধারণত ২৫-২৮ দিনের মধ্যে ফুল ফোঁটার কথা থাকলেও ২৩ দিনের মধ্যে ধরেছে ফুল। টিউলিপের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য ও হাসি দেখে চাষিরা অভিভূত। ইএসডিওর নারী সদস্য ও উদ্যোক্তারা এই টিউলিপ চাষ করছেন।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সঠিকভাবে বাজারজাত করতে পারলে যেমন অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে, তেমনি পর্যটনে নতুন মাত্রা তৈরি করবে। শারিয়াল জোত ও দর্জিপাড়া গ্রামে টিউলিপ বাগান ঘুরে দেখা যায়, বাগানগুলোতে বেগুনি (পারপল) রঙের টিউলিপ ফোটা শুরু করেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকদের এই টিউলিপ ফুল ঘুরে দেখতে দেখা গেছে।
উদ্যোক্তা মনোয়ারা ও মোর্শেদা খাতুনের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ইএসডিও’র সহযোগিতায় ২০ শতক জমিতে টিউলিপ লাগিয়েছি। লাগানোর ২৩ দিনেই ফুল ধরতে শুরু করেছে। এরকম জায়গায় নেদারল্যান্ডের ফুল চাষ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। আশা করছি ভালো দাম পাবো।
আরেক উদ্যোক্তা আয়শা আক্তার বলেন, আমি ৫ শতক জমিতে টিউলিপ লাগিয়েছি। ফুল ফোটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ছিলাম। ফুল ফোটায় খুব খুশি হয়েছি। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এই ফুল দেখতে আসছেন। এবার বাজারজাত করতে পারলে পরের বছর আরও বেশি জমিতে চাষ করবো।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহ আল আমিন ও অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা তামান্না ফেরদৌস বলেন, শুনেই ছুটে এসেছি দেখতে। নেদারল্যান্ডের শীতাঞ্চলের ফুল এখন তেঁতুলিয়ায় ফুটেছে। সরাসরি টিউলিপ দেখবো, কখনো ভাবিনি। এর আগে ইন্টারনেটে টিউলিপের ছবি এবং ভিডিও দেখে মুগ্ধ হয়েছি। এখন বাস্তবে দেখতে পাচ্ছি, এই অনুভূতিটাই অন্যরকম।
ইএসডিও’র এভিসিএফ আসাদুর রহমান বলেন, বড় পরিসরে এই প্রথম টিউলিপ চাষ শুরু হয়েছে। টিউলিপের ৬ প্রজাতির ১২টি রঙ রয়েছে। অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডাচ সানরাইজ (হলুদ), স্ট্রং গোল্ড (হলুদ), বেগুনি প্রিন্স (বেগুনি), ডেনমার্ক (কমলা), রিপে (কমলা), অ্যাড রেম (কমলা), টাইমলেস (লাল সাদা শেড), ইলে দে ফ্রান্স (লাল), লালিবেলা (লাল), বার্সেলোনা (গাঢ় গোলাপী), মিল্কশেক (হালকা গোলাপী)। ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক ড. মুহম্মদ শহীদ উজ জামান বলেন, বাংলাদেশে ফার্ম আকারে টিউলিপের চাষ এটাই প্রথম। বিদেশি ফুলটি দেশে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে দিতে দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়াকে বেঁছে নিয়েছি। আমরা ৮ জন প্রান্তিক চাষি নিয়ে ৪০ হাজার টিউলিপের বীজ লাগিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এ ফুলের চাষ শুরু করেছি।
ফুলও আসতে শুরু করেছে। এ ফুলের চাষের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের অন্যতম অঞ্চল এখন তেঁতুলিয়া। ইতোমধ্যে টিউলিপ ফুলের বাগান দেখতে বিভিন্ন পর্যটকের সমাগম ঘটতে শুরু করেছে। আশা করছি এ ফুলের চাষের মাধ্যমে চা শিল্পের মতো টিউলিপ চাষের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। অর্থনীতি, শৈল্পিক ও পর্যটনে নতুনমাত্রা তৈরি করতেই আমাদের এই উদ্যোগ। এছাড়াও ইকো ট্যুরিজম গড়তে বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দেশে এখনো সেভাবে টিউলিপ ফুলের চাষ শুরু হয়নি। বড় পরিসরে টিউলিপ চাষ উত্তরবঙ্গের তেঁতুলিয়ায় প্রথম। ফুলটি চাষ করতে হলে তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে উত্তরের এ উপজেলায় বরফের পর্বতযুগল হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা কাছে থাকায় এখানে বেশ সময় শীত থাকে। এরকম শীতে টিউলিপ চাষে সুবিধা রয়েছে। বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এদেশে ফুল ফুটলেও পরবর্তীকালে রোপণের জন্য টিউলিপ গাছের বীজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেই। একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বাল্ব সংরক্ষণ করতে হয়। তাই এটা টিউলিপ চাষের বড় সীমাবদ্ধতা। বাণিজ্যিক চাষের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের জলবায়ুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে টিউলিপ ফুলের জাত উদ্ভাবন করতে গবেষণা চলছে। আশা করছি পরীক্ষামূলকভাবে এ চাষ সাফল্যের মুখ দেখবে এবং পর্যটন শিল্পে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
টিউলিপ শীত প্রধান অঞ্চলের ফুল। যার বৈজ্ঞানিক নাম ‘টিউলিপা’। এটি নেদারল্যান্ডস’র ফুল। যা অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুত্বপূর্ণ উদ্ভিদ। এটি বাগানে কিংবা কাট ফ্লাওয়ার হিসেবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করা হয়। ফুলদানীতে সাজিয়ে রাখার জন্য এর আবেদন অনন্য। বর্ষজীবী ও কন্দযুক্ত প্রজাতির এ গাছটি লিলিয়াসিয়ে পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ। টিউলিপের প্রায় ১৫০ প্রজাতি এবং এদের অসংখ্য সংকর রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের হাইব্রিডসহ এর সব প্রজাতিকেই সাধারণভাবে টিউলিপ নামে ডাকা হয়। শীতপ্রধান দেশের বসন্তকালীন ফুল হিসেবে পরিচিত।- রাইজিংবিডি.কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com