রংপুরে আলুর বাম্পার ফলন। বাজারে দাম না থাকায় আগাম আলু নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন চাষিরা। আলু উৎপাদনের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঞ্চল রংপুরে এবার আলুর বাম্পার ফলন হলেও হাসি নেই কৃষকের মুখে। পানির দামে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ তো উঠছেই না বরং ক্রেতার পেছনে ঘুরতেই দিন শেষ কৃষকদের। ফলে এবারও লোকসানের পাল্লা ভারী হওয়ায় চাষিদের চোখে মুখে দেখা দিয়েছে আতঙ্কের ছাপ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার রংপুর জেলায় ৫১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর আগাম জাতের আলু চাষাবাদ হয়েছে। এসব আলু উত্তোলন করে কৃষকরা অন্য ফসল রোপণের জন্য জমি প্রস্তুত করতে শুরু করেছেন। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষকরা কোমর বেঁধে আলু চাষে নেমে পড়েন। তবে পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের তিস্তা নদীর চরাঞ্চল ও বিভিন্ন ইউনিয়নসহ মিঠাপুকুর, কাউনিয়া, গঙ্গাচড়া, বদরগঞ্জের অধিকাংশ উঁচু জমিগুলোতে আগাম জাতের আলু চাষ করা হয়। এসব জমিতে আলুর ফলন বাম্পার হলেও বাজার দামে কৃষককের মুখে হাসি নেই। প্রথম দিকে আগাম জাতের আলু প্রতি বস্তা (৯০ কেজি) দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকা দরে বিক্রি করা হলেও গত দুই সপ্তাহ থেকে বাজারে ধস নেমেছে। বর্তমান বাজারে আলু প্রতি বস্তা ইস্ট্রিক, ডায়মন্ড, কার্ডনাল জাতের (৯০ কেজি) ৫শ টাকা থেকে ৬শ টাকা এবং গ্রানুলা জাতের আলু ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। যা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে পাইকারি কেজি দরে ৫ থেকে ৭ টাকা করে। এসব আলুতে উৎপাদন খরচ হয়েছে কেজি প্রতি ১০ থেকে ১১ টাকা করে। কেজিতে কৃষকের উৎপাদন খরচ অনুযায়ী ৩ থেকে ৪ টাকা করে লোকসান হবে বলে সরেজমিনে অনেক কৃষক জানান। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব চর গ্রামের আলু চাষি সুরুজ মিয়া বলেন, ধার-দেনা করে আগাম জাতের আলু চাষাবাদ করেছি। যাতে আলু তুলে অন্য ফসল চাষাবাদ করতে পারি। এখন দেখি বাজারে দাম নেই। আমরা মাঠে মারা যাচ্ছি। কারণ উৎপাদন খরচই উঠছে না। তবুও বাকিতে আলু বিক্রি করে দিলাম। নয়ারহাট এলাকার কৃষক আলামিন মিয়া বলেন, এবছর আলুর ফলন বাম্পার হলেও বাজারে তেমন দাম নেই। আগাম আলু সংরক্ষণ ও বাইরে রপ্তানির কোনো সুযোগ না থাকায় আমরা দাম পাচ্ছি না। ফলে আলু চাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। পীরগাছা বাজারের আলু ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আলুর উৎপাদন বেশি হওয়া ও একসঙ্গে কৃষকরা আলু উত্তোলন করায় বাজারে চাহিদা কম। তাই দামটাও কমে গেছে। রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বিগত মৌসুমে রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট এবং নীলফামারী জেলায় ৯৭ হাজার ২৯০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষাবাদ এখন শেষ সময়ে রয়েছে আর এক মাসের মধ্যেই সব আলু উত্তোলন পুরোদমে শুরু হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রংপুর জেলায় ৫১ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। যা গতবারের চাষাবাদের তুলনায় এবার প্রায় ২ হাজার হেক্টর বেশি। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান জানান, এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। তবে আগাম জাতের আলু সংরক্ষণের কোনো সুযোগ এই অঞ্চলে নেই। আর সব জায়গায় বোরো চাষাবাদের জন্য কৃষকরা আলু উত্তোলণ করছেন। ফলে বাজারে এখন দাম তুলনামূলক কম। তবে পর্যায়ক্রমে আলু তোলা হলে তেমন লোকসান হতো না।