প্রথমবারের মতো গোপালগঞ্জে অনুষ্ঠিত হলো দুই দিন ব্যাপী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উৎসব। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শেষ হয়েছে এ উৎসব। খ্যাত নামা ১৪ জন জাতীয় পর্যায়ের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পীর অংশ গ্রহণের এতো বড় আয়োজন ঢাকার বাইরে এই প্রথম। মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন। জেলা শিল্পকলা একাডেমির সহযোগিতায় স্থানীয় শেখ ফজলুল হক মনি মিলনায়তনে শুক্র ও শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলেছে সঙ্গীত উৎসব। প্রথমবার নিজ শহরে এতো বড় আয়োজন উপভোগ করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন সংস্কৃতিমনারা। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পরিবেশনা হয় মূলত কণ্ঠে ও বাদ্য যন্ত্রে। দেশের খ্যাতনামা শিল্পীরা তাদের সঙ্গীত ও যন্ত্রে দুই দিন রাত দ্বিপ্রহর পর্যন্ত সুর ও তালের মোহে আচ্ছন্ন করে রাখেন ¯্রতাদের। রাগ যোগসহ সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী এবং ছায়ানট ও ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ এর শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিক্ষক ওস্তাদ অসিত কুমার দে, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের প্রভাষক ড. ঋতুপর্ণা চক্রবর্তী, ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যায়তনের সঙ্গীত শিক্ষক লতিফুন জুলিও, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী চন্দ্রা সাহা ও সাইফুল তানকার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ধ্রুপদ বিভাগের শিল্পী টিংকু শীল ও সুপ্রিয়া দাশ। বেহালায় সংগত করেন ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যায়তনের শুদ্ধসঙ্গীত বিভাগে বেহালা শিক্ষাগুরু শিউলী ভট্টাচার্যী। মনোমুগ্ধকর সেতারে পরিবেশ করেন দেশের বিখ্যাত সেতার বাদক নিশিত দে। তবলার লহড়ায় তাক লাগিয়ে দেন বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সঙ্গীত বিভাগের তবলা শিক্ষক বিশ^জিৎ কুমার নট্ট এবং ছায়ানট সঙ্গীত বিদ্যায়তনের সহযোগী শিক্ষক প্রশান্ত ভৌমিক। বাঁশিতে দর্শক ¯্রতার হৃদয় কেড়েছেন বাংলাদেশ বেতারের মৃত্যুঞ্জয় দাস। তানপুরায় ছিলেন বিদ্যুৎ বালা ও সম্পূর্ণা চক্রবর্তী। হারমোনিয়ামে ছিলেন বাংলাদেশ টেলিভিশনের চট্টগ্রাম কেন্দ্রে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের নিয়মিত শিল্পী অভিজিৎ কুন্ডু। করোনাকালীন সময়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ব্যাতিক্রমী এমন আয়োজনে প্রশংসায় ভাসছেন জেলা প্রশাসক সাহিদা সুলতানা। জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারাও অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন। জেলা প্রশাসকের সাথে শেষ পর্যন্ত উৎসব উপভোগ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ লুৎফর রহমান বাচ্চু ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সঙ্গীত প্রেমীরা। সে সঙ্গে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিত্বের সরব উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এ শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উৎসবে সবাই ছিলেন আন্তরিক। উৎসবে অংশ নেয়া শিল্পীরা তাদের মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, মন-মানসিকতার উৎকর্ষ সাধনে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে এধরণের আয়োজন অত্যন্ত প্রয়োজন। শুধু গোপালগঞ্জেই নয়, অন্যান্য জেলায়ও বছরে অন্তত একবার এ ধরণের উৎসব আয়োজন করে, তাহলে দেশের সঙ্গীত জগতেও উৎকর্ষ সাধন হবে। বেঁচে থাকবে সঙ্গীতের মূলধারা।