মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

ইসলামে পারিবারিক শিক্ষার গুরুত্ব

ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা
  • আপডেট সময় বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

পারিবারিক শিক্ষার প্রভাব মানুষ আজীবন বহন করে এবং তা দ্বারা পরিচালিত হয়। পরিবার থেকে সুশিক্ষা পেলে ভালো মানুষ হওয়া সহজ হয়। পক্ষান্তরে পরিবার থেকে সুশিক্ষা না পেলে বা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হলে ভালো মানুষ হওয়া কষ্টকর হয়। কাজেই পরিবার অনন্য এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। শৈশব, কৈশোরসহ জীবনের বড় অংশ নিজ পরিবারেই কাটাতে হয়। মানবজীবনে পরিবারের প্রভাব অপরিসীম। সে ক্ষেত্রে পরিবারে শিক্ষাদীক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে পরিবারের সদস্যরা সহজে সফল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। বিভিন্ন কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও যথাযথভাবে পারিবারিক শিক্ষার প্রভাবে সন্তানদের পড়ালেখার ধারাবাহিকতা এবং মন-মানসিকতা ঠিক থাকবে, ইনশাআল্লাহ।
পরিবার গঠনের আগে পরিবার প্রধানের শিক্ষা অর্জন : সন্তানরা সাধারণত মাতা-পিতার শিক্ষাকেই বড় করে দেখে। তারা মাতা-পিতার অভ্যাস এবং আচার-আচরণগুলোকে নিজের করে নেয়। প্রথমদিকে নিজের অজান্তে এবং পরবর্তী সময়ে অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। শুরুতেই মাতা-পিতা সচেতন না হলে সন্তানদের প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হয় না। তাই পরিবার গঠনের আগে পরিবার প্রধানের শিক্ষা অর্জন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মহান আল্লাহ আদম (আ.)-কে সৃষ্টির পর তাঁর পরিবার সৃষ্টির আগেই তাঁকে শিক্ষাদান করেন। আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনি আদমকে যাবতীয় নাম শিক্ষা দিলেন, তৎপর সে সমুদয় ফেরেশতার সামনে প্রকাশ করলেন এবং বলেন, এই সমুদয়ের নাম আমাকে বলে দাও, যদি তোমরা সত্যবাদী হও। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩১)
পারিবারিক শিক্ষা নিশ্চিত করার অপরিহার্যতা : মাতা-পিতা ও অভিভাবকদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো, তাঁদের সন্তানদের এমন আর্দশ সন্তান হিসেবে গড়ে তোলা, যেন তারা দুনিয়ায় সফল হয় এবং পরকালে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে পারে। এর জন্য পারিবারিক শিক্ষার বিকল্প নেই। পরিবার প্রধানদের পারিবারিক শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা, তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা করো আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। ’ (সুরা তাহরিম, আয়াত : ৬)
হাদিসে বলা হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, তাকে পরিবারের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর সংসার এবং সন্তানের দায়িত্বশীল। কিয়ামতের দিন তাকে এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৮৫৩; মুসলিম, হাদিস : ৪৮২৮)
পারিবারিক শিক্ষার প্রভাব : সন্তানের জীবনে পারিবারিক শিক্ষার অন্যতম প্রভাব আছে। পরিবারে যে শিশু সঠিক শিক্ষা পায়, সে বড় হয়েও সঠিক পথে অবিচল থাকে। অপরদিকে যে শিশু পরিবারে খারাপ শিক্ষা পায়, সে বড় হয়েও খারাপ পথেই চলতে থাকে। হাদিস থেকে পারিবারিক শিক্ষার প্রভাবের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। আবু হুরাইয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘প্রত্যেক সন্তান ফিতরাতের (ইসলাম) ওপর জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইহুদি বা খ্রিস্টান কিংবা অগ্নিপূজক বানায়। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৩১৯; মুসলিম, হাদিস : ৬৯২৬)
লুকমান (আ.) এর পারিবারিক শিক্ষা : লুকমান (আ.) স্বীয় পুত্রকে নানামুখী শিক্ষা দান করেন। তিনি সন্তানকে আল্লাহর প্রতি ঈমান, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা, নামাজ কায়েম করা, অহংকার পরিহার করে বিনয়ী হওয়া, সৎ কাজের আদেশ ও মন্দ কাজে নিষেধ করা, আপদে-বিপদে ধৈর্য ধারণ এবং সবক্ষেত্রে মধ্যপন্থা ও শালীনতা অবলম্বনের শিক্ষা দান করেন। এগুলোর বিস্তারিত বিবরণ পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হওয়ায় তা সবার জন্য একান্ত পালনীয়। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, যখন লুকমান উপদেশচ্ছলে তাঁর পুত্রকে বলেছিলেন, ‘হে বৎস, আল্লাহর কোনো শরিক করো না। নিশ্চয় শিরক চরম জুলুম। ’ (সুরা লুকমান, আয়াত : ১৩)
পরিবারে ইসলামচর্চা : পরিবারে দ্বীনি পরিবেশ বজায় রাখা ও দ্বিন পালনে সচেষ্ট হওয়া একান্ত জরুরি। পরিবারে দ্বীনি পরিবেশ বজায় থাকলে পরিবারের সদস্যদের জন্য ধর্মীয় বিধি-নিষেধ পালন করা সহজ হয়। সন্তানরাও দ্বীনি আবহে বেড়ে ওঠায় তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ, মাতা-পিতার প্রতি আনুগত্য ও শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয়। বাস্তবতার আলোকে দেখা যায়, এমন পরিবারের প্রবীণ সদস্যদের বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হয় না। সন্তানরা নেশা ও মাদকে জড়ায় না। আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যেও আত্মিক সুখ-শান্তি বিরাজ করে। আল্লাহ বলেন, ‘এবং তোমার পরিবারবর্গকে নামাজের আদেশ দাও ও তাতে অবিচলিত থাকো। ’ (সুরা তা-হা, আয়াত : ১৩২) হাদিসে বলা হয়েছে, আমর ইবনে শুয়াইব তাঁর বাবা থেকে এবং তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও। ১০ বছর হলে প্রয়োজনে নামাজের জন্য প্রহার করো। আর তাদের শোয়ার জায়গা পৃথক করে দাও। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৫)
পরিশেষে বলা যায়, পরিবার এক অনন্য শিক্ষাগার। পারিবারিক স্কুলেই সন্তানের শিক্ষার হাতেখড়ি হয়। এখানে মাতা-পিতা ও মুরব্বিদের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে সন্তান সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠে। কাজেই মাতা-পিতা সন্তানদের আল্লাহভীতি, পরকালীন জবাবদিহিতা, মুসলমানদের দায়িত্ব-কর্তব্য, আল্লাহর হক, বান্দার হক, পারস্পরিক সহমর্মিতা ইত্যাদি শেখানোর চেষ্টা করবেন। সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দেবেন। সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখার পাশাপাশি তাদের সঙ্গী-সাথি ও বন্ধু-বান্ধবদের সম্পর্কেও নজর রাখবেন। লেখক : সহযোগী অধ্যাপক,আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com