রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
বিজয় ছিনিয়ে নিতে ষড়যন্ত্র চলছে: নজরুল ইসলাম খান পতিত আ’লীগ সরকারের কবল থেকে ভিক্ষুকরাও রেহাই পায় নাই : ডা. শফিকুর রহমান জাতির মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই : তারেক রহমান ব্যবসায়ী ওয়াদুদ হত্যা: সাবেক ডিসি মশিউর সাত দিনের রিমান্ডে ভারতে ‘অবৈধ’ শেখ হাসিনা, এখন কী পদক্ষেপ নেবে ভারত দেশবাসী তারেক রহমানের নেতৃত্বে নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছে ফোন নম্বর মুখস্থ থাকাই কাল হলো তোফাজ্জলের? আরও কিছু সংস্কার কমিশন করার পরিকল্পনা আছে : নাহিদ মুসল্লিদের প্রতিরোধের মুখে স্বৈরাচারী হাসিনার নিযুক্ত খতিব রুহুল আমিনের পলায়ন আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া দেশের জন্য অশনিসংকেত: অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার

নিরাপদ সবজির বাজার ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

খাপুর গ্রামের কৃষক মোতালেব হোসেন গত রবি মৌসুমে সবজি আবাদে সম্পূর্ণ রাসায়নিক সারের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। কিন্তু এবার তিনি সবজি আবাদে জৈব ও গোবর সারের সঙ্গে পরিমিত রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছেন। বিশ্বনাথপুর পশ্চিম পাড়ার কৃষক মো. আবুল কাশেম সবজি আবাদে এবার কীটপতঙ্গ দমনে ফেরোমন ফাঁদ এবং রঙিন আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করেছেন। অথচ গত রবি মৌসুমে কীটনাশক ছিল তার অন্যতম অবলম্বন। এছাড়া দীর্ঘদিনের কৃষিকাজে এবারই প্রথম সবজিখেতে মালচিং শিট ব্যবহার করে বেশ উপকৃত হয়েছেন। শুধু মোতালেব ও আবুল কাশেম নন, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের ২০টি গ্রামে পাঁচ শতাধিক কৃষক জৈব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে রবি মৌসুমে পরিবেশবান্ধব নিরাপদ সবজি উৎপাদন শুরু করেছেন। কৃষি বিভাগের উদ্যোগে ইন্টিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্ট (আইপিএম) পদ্ধতিতে উপজেলায় এক বছরের জন্য শুরু হওয়া পাইলট প্রোগ্রাম চলবে তিন মৌসুম পর্যন্ত। জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মোট ১০০ একর জমিতে ৫০০ জন কৃষক এ সুবিধার আওতায় রয়েছেন। কৃষকের অভিযোগ, নিরাপদ সবজি উৎপাদন করতে খরচ ও সময় বেশি লাগলেও আলাদা বাজার ব্যবস্থা না থাকায় আগের পদ্ধতিতেই ফসল বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে কষ্টার্জিত এসব সবজি।
পায়রাবন্দ ইউনিয়নের নিরাপদ সবজি চাষাবাদের অন্তর্গত তকেয়া কেশবপুর, খাপুর, চুহড়, বিশ্বনাথপুর, আঠারোকোঠা, সালাইপুর, শালমাড়াটারীসহ একাধিক গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক তাদের সবজিখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করছেন। কথা হয় তকেয়া কেশবপুর কালীগঞ্জ গ্রামের কৃষক মো. রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, সাড়ে তিন একর জমিতে কীটনাশক ব্যবহার না করে রাসায়নিক সার সীমিত রেখে জৈব বালাই ও জৈব সার এবং গোবর ব্যবহার করে সবজি আবাদ করছেন। আগাম ফুলকপি বাজারে বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছেন। প্রতি ভ্যান বিক্রি করেছেন সাড়ে ৫-৭ হাজার টাকা। একটি ভ্যানে ফুলকপি উঠেছে ১৭০-২০০টি পর্যন্ত। প্রতি একরে খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। একরপ্রতি পেয়েছেন প্রায় ১ লাখ টাকা। বর্তমানে ওই জমিতে তিনি করলার আবাদ করেছেন।
আঠারকোঠা গ্রামের কৃষক মোতাহার হোসেন জানান, বর্তমানে ২৫ শতক জমিতে শিম আবাদ করেছেন। কিছুদিন আগে আগাম ফুলকপি বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছেন। গত রবি মৌসুমে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার ছিল একটা নিয়মের মতো। কিন্তু এবার জৈব কৃষি ও জৈবিক বালাই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সবজি আবাদ করায় গোবর এবং জৈব সার ছিল প্রধান ব্যবস্থা। গত মৌসুমের চেয়ে এবার তার আবাদ করা শিম গাছ বেশ মোটাতাজা ও সতেজ হয়ে উঠেছে এবং কপির দানাও বেশ মোটা হয়েছে। মোতাহার হোসেন ও রাশেদুল ইসলামসহ একাধিক কৃষক অভিযোগ করেন, এতো পরিশ্রম এবং যতœ নিয়ে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করেও আলাদা বাজার ব্যবস্থা না থাকায় আগের পদ্ধতিতেই উৎপাদিত সবজি স্বল্পমূল্যে বিক্রি করছি। তাই নিরাপদ সবজি বিক্রির আলাদা ব্যবস্থাসহ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর দাবি জানান তারা।
পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যম নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ে পায়রাবন্দ ইউনিয়নে কৃষকদের পরামর্শ প্রদানকারী উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পরিমল চন্দ্র সরকার বলেন, প্রকল্পের আওতায় পায়রাবন্দ ইউনিয়নে ২০টি গ্রামে পাঁচ একর জমিতে নিরাপদ সবজি লাউ, ফুলকপি, শসা, করলা এবং শিম আবাদ করা হচ্ছে। প্রতি দলে ২৫ জন করে মোট ৫০০ জন কৃষক রয়েছেন। তিনি বলেন, প্রত্যেক কৃষককে রবি মৌসুমের কীটপতঙ্গ দমনে ফেরোমন ও রঙিন আঠালো ফাঁদ এবং জৈব সারসহ অন্যান্য উপকরণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এবারই প্রথম প্রতি গ্রুপের একজন করে মোট ১০ জনকে ২০ শতক জমির জন্য মালচিং শিট দেয়া হয়েছে। এটি ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মালচিং শিট মাটিতে আর্দ্রতা ধরে রাখে, আগাছা হতে দেয় না, মাটিবাহিত রোগ নষ্ট করে এবং গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য তৈরি করে। বিশ্বের উন্নত দেশের আধুনিক কৃষিকাজে এর ব্যবহার হচ্ছে।
সমাজ পরিবর্তন ও উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম বাবলু বলেন, নিরাপদ সবজি উৎপাদন স্বাস্থ্যসচেতন ভোক্তাদের জন্য একটি সুখবর। নিরাপদ সবজি বিক্রির ব্যবস্থা না নিলে কৃষক লাভবান হবেন না। পরবর্তী সময়ে কৃষক এ ধরনের সবজি আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। তাই কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কৃষি বিভাগের প্রতি আহ্বান জানান। পরিবেশবান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের উপপ্রকল্প পরিচালক মো. সালাহ্ উদ্দীন সরদার বলেন, প্রতি উপজেলায় নিরাপদ সবজি বিক্রির একটি কেন্দ্র করার চিন্তা করা হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় নিরাপদ সবজি বিক্রি করা হবে। এতে কৃষক তাদের উৎপাদিত সবজির ভালো মূল্য পাবেন। আগামীতে এ প্রকল্প যাতে আরো ব্যাপক আকারে করা যায় এজন্য পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নসহ দেশের আটটি ইউনিয়নে নিরাপদ সবজির প্রকল্প চলমান।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com