বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

বাংলাভাষা খোদার সেরা দান

॥মুহাম্মদ ছফিউল্লাহ হাশেমী॥
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এ ভাষা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দান। কবি ফররুখ আহমদ গানে গানে বলেছেন,‘ও আমার মাতৃভাষা বাংলাভাষা/ খোদার সেরা দান/ বিশ্বভাষার সবই তোমার/রূপ যে অনির্বাণ।’ প্রত্যেক জাতিরই কোনো না কোনো বৈশিষ্ট্য আছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের যে এক বৈশিষ্ট্যম-িত করেছেন, তা হল আমাদের নিখাদ মাতৃভাষা প্রীতি। ভাষার জন্য বুকের রক্ত ঢেলে দেয়া, এভাবে রক্ত দিয়ে ভাষার প্রেমকে কালজয়ী করা যেন মাতৃপ্রেমেরই জ্বলন্ত প্রকাশ। মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে- আমি কোনো নবীই এমন পাঠাইনি, যে তাঁর জাতির মাতৃভাষায় আমার বাণী তাদের কাছে পৌঁছায়নি, যাতে করে সে তাদের কাছে আমার আয়াতগুলো পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলতে পারে (সূরা ইবরাহিম, আয়াত নং-৪)। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনের অর্জন যে বিশ্বের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন এটি আজ আন্তর্জাতিকভাবেই স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত। জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গসংগঠন ইউনেস্কো আমাদের ভাষা আন্দোলনকে স্বীকৃতি দিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ফলে ২১ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর সব দেশেই উদযাপিত হচ্ছে মাতৃভাষা দিবস। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলা দাবি করায় তৎকালীন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যাদের শহীদ করল তারা হলেন- রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত প্রমুখ। আমাদের জানামতে, তারা সবাই ছিলেন মুসলিম, যাদের নাম আমরা অত্যন্ত গৌরবের সঙ্গে উচ্চারণ করে থাকি, এরা মুসলিম ও মজলুম হওয়ার কারণে আমরা তাদের শহীদ হিসেবে অভিহিত করে থাকি। শুধু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে সন্তুষ্ট করার জন্য জীবন দিলে বা মজলুম অবস্থায় ঘাতকের হাতে কোনো মুসলিম জীবন দিলেই কেবল তাকে ইসলামী পরিভাষায় শহীদ বলা হয়। এ দৃষ্টিকোণ থেকে আমাদের ভাষা আন্দোলনের এ কৃতী সন্তানরা শহীদ, আর তাই তাদের স্মরণে যে স্মৃতিস্তম্ভ বানানো হল তাকে ‘শহীদ মিনার’ বলে থাকি।
গোটা বাংলাদেশে আনুমানিক হাজার দশেক শহীদ মিনার আছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে দু-একটা শহীদ মিনার গড়ে ওঠেনি। ভাষাকে নিয়ে এ ধরনের নজির পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই, কখনই ছিল না। কিন্তু নবীর সবচেয়ে বড় ওয়ারিশ আমাদের দেশের জনসাধারণের শ্রদ্ধার পাত্র ওলামায়ে কিরাম এ ভাষা দিবস উদযাপনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছেন না, এটি একটি অস্বস্তির বিষয়। কত সাধারণ কারণে ও তুচ্ছ ঘটনায় নিহতদের স্মরণে আমাদের ওলামায়ে কিরাম কোরআনখানি, মিলাদ মাহফিল, দোয়া-মোনাজাত করে থাকেন। কিন্তু ভাষা শহীদদের জন্য কি আমাদের ওলামায়ে কেরাম এমনটি করতে পারেন না? এ শহীদদের ত্যাগ আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। তাই ওলামায়ে কেরামদের উচিত কোরআনখানি, আলোচনা সভা, দোয়া ও মোনাজাত করে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করা। আমাদের ভাষা শহীদরা তাদের টগবগে যৌবনকে বিসর্জন দিয়ে, ইহকালীন সব ভোগ-বিলাসকে তুচ্ছ জ্ঞান করে আমাদের প্রিয় বাংলাভাষার জন্য তাজা জীবনকে বিলিয়ে দিয়েছেন। তাই তারা আমাদের ওলামায়ে কেরামের এবং মুসলমানের দোয়া পাওয়ার যোগ্য।
যদি ওলামায়ে কেরাম ভাষা দিবস উদযাপনের প্রতীকী দিকগুলোকে শরিয়ত গর্হিত কাজ বলে এর প্রতি অনাগ্রহ দেখান, তাহলে বলব এর জন্যও সম্মানিত ওলামায়ে কেরামই দায়ী। কেননা ভাষা শহীদদের প্রাপ্য পরিশোধে ওলামায়ে কেরামের অমনোযোগী হওয়ার সুযোগে শূন্য ময়দানে শরিয়ত গর্হিত কাজগুলো স্থান করে নিয়েছে। অথচ আমরা আমাদের মৃত পূর্ব পুরুষদের জন্য ঠিকই কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত, দোয়া ইত্যাদি করে থাকি। পক্ষান্তরে ভাষা শহীদদের প্রতি জুলুম করেই যাচ্ছি; যা তাদের সঙ্গে এক রকম বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। আমাদের ভাবতে হবে পূর্ববর্তী ওলামায়ে কেরাম মাতৃভাষার জন্য কী অবদান রেখে গেছেন। এ ব্যাপারে মরহুম মাওলানা আকরাম খাঁর কথা গর্বভরে উচ্চারণ করা যায়।
তিনি সংবাদপত্রের মাধ্যমে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনকে সফল করার জন্য ডাক দিয়েছিলেন। তা ছাড়া হজরত মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরীও (রহ.) ভাষা আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। সুতরাং আমাদের ওলামায়ে কেরাম ভাষা শহীদদের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে নব চেতনায় উদ্বুদ্ধ হবেন এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা। পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশের সব শহীদ মিনারে কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া ও মোনাজাত ইত্যাদি অনুষ্ঠানের জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেয়া উচিত। আমাদের দেশের সব সরকারপ্রধান তাদের আপনজনদের জন্য কোরআন তিলাওয়াত, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া-মোনাজাত ইত্যাদির মাধ্যমে মাগফিরাত কামনা করে থাকেন। তবে ভাষা শহীদদের মাগফিরাতের জন্য অবশ্যই এসব কাজে সরকারপ্রধান সহযোগিতা করবেন। কিন্তু এ ব্যাপারে সর্বপ্রথম এ দেশের ওলামায়ে কেরামকেই এগিয়ে আসতে হবে।আমাদের বিশ্বাস দেশের শহীদ মিনারগুলোতে একবার পবিত্র কোরআনুল কারিমের আওয়াজ তুলতে পারলে তা প্রতি বছরই চলতে থাকবে এবং তা আস্তে আস্তে ব্যাপকতা লাভ করবে। সমর্থন বাড়বে সাধারণ মানুষের এবং তারাও এ মহৎ কাজে শরিক হবেন। গোটা দেশ একসঙ্গে পবিত্র কোরআন মাজিদের সুর তুলবে। এভাবেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সত্যিকার চেতনা চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে।
এ ছাড়াও আমাদের ওলামায়ে কিরাম ভাষা শহীদদের জন্য সাওয়াব রেসানিমূলক অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারেন। মাতৃভাষা দিবসে দেশের প্রতিটি মাদ্রাসায় মাতৃভাষার ওপর আলোচনা সভা, রচনা প্রতিযোগিতা ও ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করা যেতে পারে। বস্তুত মহান ভাষা আন্দোলন ও মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার পেছনে যে সত্যিকার চেতনা তার বাস্তবায়নের মধ্যেই রয়েছে বাংলাদেশ ও তার ১৮ কোটি মানুষের নাজাতের মহামন্ত্র। ভাষা দিবসকে নিয়ে বাড়াবাড়ি বা অপসংস্কৃতি যেমন কাম্য নয়, তেমনি কাম্য নয় গণমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগকে প্রতিহত করাও। পরিশেষে এ দেশের ওলামায়ে কিরামের প্রতি আমাদের অনুরোধ, আসুন না এ দেশের জনগণের ভালোবাসার প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে দেশের সব শহীদ মিনারে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শহীদদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে মাগফিরাত কামনা করি। তবে সাধারণ মুসলমান বিভিন্ন ইসলাম গর্হিত কাজ থেকে বিরত থাকতে উৎসাহ বোধ করবেন এবং সর্বক্ষেত্রে ওলামায়ে কেরামের নেতৃত্ব মেনে নিতে আগ্রহ দেখাবেন। লেখক : প্রাবন্ধিক, সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, মাইলস্টোন কলেজ, উত্তরা, ঢাকা




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com