মানুষ না বুঝে নিজে নিজেকে হত্যা করে থাকে। আত্মহত্যা করা মহাপাপ। মানুষ নিজের প্রাণের মালিক নন। প্রত্যেক প্রাণের মালিক মহান রাব্বুল আলমিন। তিনিই জীবন ও মৃত্যু দান করেন। আল্লাহ মানুষকে দুনিয়ায় নিজেকে হত্যা ও ধ্বংস করা থেকে নিষেধ করেছেন। একইভাবে পরকালীন শাস্তি ও ধ্বংস থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশও দিয়েছেন। আত্মহত্যা মানুষের জন্য পরকালীন শাস্তি ও জাহান্নামে যাওয়ার কারণ। যারা আত্মহত্যা করে, তারা নিজেকে জাহান্নামি বানাতে চায়। আর যারা তাকে বৈধ মনে করে, তারা স্থায়ী জাহান্নামি।
আত্মহত্যার বিধান: ইচ্ছাকৃতভাবে যদি আত্মহত্যা করে, তখন তা হারাম ও তার শাস্তি জাহান্নাম। পরকালে তাকে শাস্তি দেওয়া হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর যে কেউ স্বেচ্ছায় কোনো মুমিনকে হত্যা করবে, তার শাস্তি হবে জাহান্নাম, তন্মধ্যে সে সদা অবস্থান করবে এবং আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ ও তাকে অভিশপ্ত করেন। তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৯৩) কেননা অন্যকে হত্যা করলে আপসের মাধ্যমে তাওবা করার সুযোগ থাকে; কিন্তু আত্মহত্যাকারীর জন্য তাওবার কোনো পথ থাকে না।
আত্মহত্যার শাস্তি: আত্মহত্যাকারী নিজেকে যে উপায়ে হত্যা করবে, তাকে সেভাবে জাহান্নামে শাস্তি দেওয়া হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি পাহাড় থেকে লাফ দিয়ে নিজেকে হত্যা করবে, সে জাহান্নামে লাফ দিতে থাকবে স্থায়ীভাবে। আর যে ব্যক্তি বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ তার হাতে থাকবে, জাহান্নামে সে স্থায়ীভাবে থাকবে। আর যে ব্যক্তি নিজেকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করবে, তার ছুরি তার হাতে থাকবে। তা দিয়ে সে তার পেটে জাহান্নামে আঘাত করবে, তাতে সে স্থায়ীভাবে থাকবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৭৭৮)
আত্মহত্যাকারী কি স্থায়ী জাহান্নামি? আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের বিশ্বাস হলো, যারা ইমান নিয়ে দুনিয়া থেকে যাবে, তারা স্থায়ী জাহান্নামি হবে না। যে হাদিসে আত্মহত্যাকারীর জন্য স্থায়ী জাহান্নামের কথা আছে, তার ব্যাখ্যা হলো তা ওই লোকের জন্য যে তাকে হালাল মনে করেছে। তখন তো সে কাফির হয়ে যাবে। তাই আত্মহত্যাকারীকে যত দিন ইচ্ছা আল্লাহ শাস্তি দিয়ে পরে ঈমানের কারণে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
আত্মহত্যাকারীর জানাজা ও দাফন:যারা আত্মহত্যা করবে, তাদের জানাজা পড়া যাবে। তবে সম্ভ্রান্ত লোক ও আলিমরা তাতে শরিক না হওয়া উত্তম। প্রখ্যাত তাবেঈন ইবরাহিম নাখয়ি বলেন, ‘যারা আত্মহত্যা করবে, তাদের জন্য জানাজার নামাজ পড়া যাবে। তেমনি জিনার কারণে বাচ্চা প্রসব করতে গিয়ে যেসব নারী মারা যাবে, তাদেরও জানাজা পড়া যাবে। একইভাবে যে ব্যক্তি মদ পানের কারণে মারা যাবে, তারও জানাজা পড়া যাবে। ’ (ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ১১৯৮৪) অন্য হাদিসে এসেছে : জাবির ইবনে সামুরা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (সা.)-এর দরবারে এক লোককে হাজির করা হয়, তীরের ফলা দ্বারা যে নিজেকে হত্যা করেছে। তখন তিনি তার ওপর নামাজ পড়েননি। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৯৭৮) তাই আমির, আলিম ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গ ওই ব্যক্তির জানাজায় শরিক হবেন না।