সবাইকে করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘আপনারা যারা ভ্যাকসিন নেননি, তারা নিয়ে নিন। আপনারা সুরক্ষিত থাকবেন। হাসপাতালে যারা মারা গেছেন, তাদের ৮৫ ভাগই ভ্যাকসিন নেননি এবং যারা নিয়েছেন তাদের সংক্রমণের সংখ্যাও খুবই কম। তারা বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে গেছেন। আপনাদের পরিবারের সুরক্ষার জন্য ভ্যাকসিন নেবেন। আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু ভ্যাকসিন প্রিয়।’ গতকাল সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে রাজধানীর চারটি হাসপাতালে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান ডায়ালাইসিস সেবার স¤প্রসারণ ব্যবস্থার উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ দিন একসঙ্গে চারটি হাসপাতালে ১২৬টি নতুন বেড ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য উদ্বোধন করা হয়।
জাহিদ মালেক বলেন, ‘ছোটবেলায় আমাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয় ১০-১২টা করে। মায়েরা ভ্যাকসিন দেওয়ার জন্য বাচ্চাদের নিয়ে আসেন। প্রতিবছর আমরা দুই আড়াই কোটি বাচ্চাদের ভ্যাকসিন দিয়ে থাকি। আমরা যে ১০ কোটি মানুষকে টিকা দিয়েছি তারা সুন্দর করে লাইন ধরে নিয়েছেন। কোনও সমস্যা হয়নি। অথচ ইউরোপে দেখেন তাদের সব ট্রান্সপোর্ট বন্ধ হয়ে আছে ভ্যাকসিন নেবে না বলে। আজকে ফ্রান্সে, নেদারল্যান্ডসে, অস্ট্রেলিয়ায় পিটাপিটি হচ্ছে রাস্তাঘাটে। এত সভ্য জাতি হিসেবে দাবি করে তারা, তারা ভ্যাকসিন নেবে না। তারা গাড়ি ভাঙচুর করেছে, কিন্তু বাংলাদেশে এ রকম ঘটনা ঘটেনি। কাজেই আমি আমাদের দেশের মানুষকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমরা এই তুলনায় অনেক এগিয়ে আছি। আমরা তাদের থেকে অনেক বেশি সিভিলাইজড, সভ্য। সে জন্য বাংলাদেশ এখন অনেক ভালো আছে। ভ্যাকসিন নিয়েছে বলে আজকে বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা কম। আমাদের ২৮ হাজার মৃত্যু, ভারতেও ৫ লাখ , যুক্তরাষ্ট্রের ৯ লাখ। ইউরোপের প্রতিটি দেশের দুই তিন লাখ লোক মারা গেছে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে সারা বাংলাদেশের হাসপাতালে দেড় হাজার রোগী আছে। আমাদের ১৩-১৪ হাজার বেডের প্রায় সবই এখন খালি। আমাদের ইকোনোমিক গ্রোথ ৭ শতাংশে উঠে গেছে, তার কারণ হলো সবাই কাজ করতে পারছে। এ কারণে আজকে ৩০ শতাংশ রফতানি বেড়ে গেছে। মানুষ এখানে অর্ডার দিচ্ছে, কারণ বাংলাদেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে। আমি মনে করি, আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ চিকিৎসক-নার্সরা যে কাজ করেছে, তার ফল আজকে সারা বাংলাদেশ পাচ্ছে। দেশ সুস্থ আছে বিধায় আজকে স্কুল খুলে দেওয়ার কথা হয়েছে।’ ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই মাসের শেষে খুলে দেওয়া হতে পারে। কীভাবে এটা হচ্ছে, কারণ মনে সাহস চলে আসছে। এই সাহসটা আমরা জুগিয়েছি। ভ্যাকসিন ও চিকিৎসার মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, দেশে এই মুহূর্তে ১০ কোটি ভ্যাকসিন স্টকে আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা চারটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করছি। ২০টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল হচ্ছে। অনেকগুলো ইনস্টিটিউট হয়েছে। স্বাস্থ্য সেবাকে বিকেন্দ্রীকরণ করতে চাচ্ছি, যাতে ঢাকার ওপর চাপ কমে। আমি গত ৮ বছরে সরকারি হাসপাতালে এক হাজার সিট বাড়িয়েছি মেডিক্যাল শিক্ষার্থীদের জন্য। এর আগে গত ২০ বছরও সিট বাড়েনি। আইসিইউ ৬৫০টি নতুন হবে বাংলাদেশে। ৮টি বিভাগে বার্ন ইউনিট করছি।’
এ সময় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা আহমেদুল কবীর, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।