করোনা মহামারিতে গত দুই বছর ফেব্রুয়ারি ছিল একেবারেই ফ্যাকাসে। পহেলা ফাল্গুন কিংবা ভালোবাসা দিবস কোনোটাই তেমন পূর্ণতা পায়নি। বিধিনিষেধে পথে মানুষ ছিল কম। উৎসব আয়োজনে ছিল নানা সীমাবদ্ধতা। এবছর তেমন বাধা না থাকলেও দিবসগুলো ঘিরে ব্যবসায়ীদের নেই বাড়তি প্রত্যাশা। একই দিন পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস হওয়ায় বিক্রির পরিমাণ কমে আসার আশঙ্কায় হতাশা প্রকাশ করেন ফুল ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে ফুলের দাম অনেক বেশি। তাছাড়া স্কুলে কলেজ বন্ধ থাকায় অধিক লাভ হবার আশাও দেখছেন না তারা। এমনকি কয়েক বছর বাজার চড়া হওয়ায় ক্রেতারা কিনতে এলেও ফেরত যান বেশি।
সরেজমিনে শাহাবাগ মোড়ের ফুলের দোকানগুলো দেখা যায়, অনান্য ফুলের তুলনায় গোলাপের চাহিদা বেশি। তবে বিক্রেতারা দাম হাঁকছেন ৪-৫ গুণ বেশি। সাধারণ খোলা গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা পিস, চায়না গোলাপের দাম উঠেছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ফুলের রিংগুলোর দাম বেড়ে হয়েছে ২০০ টাকা। গোলাপ ছাড়াও গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জিপসি, রডস্টিক, কেলেনডোলা, লিলিয়াম ফুলের দামও বেড়েছে। কয়েক শ’ টাকা ছাড়া হাতে ফুলের গোছা চিন্তাই করা যাচ্ছে না।
মাহামুদ পুষ্পালয়ের মালিক ইসলাম হোসেন জানান, গত ৩০-৪০ বছরে ফুলের দাম কখনও এত বাড়েনি। আগে যে ফুল ২৫ টাকা বিক্রি করতাম সেই ফুল এখন ৫০ টাকায় বিক্রি করছি। ক্রেতাদের কাছে এতো দামে বিক্রি করতে আমাদেরও ভালো লাগছে না। কিন্তু উপায় নাই, ফুলের সঙ্কট।
ফুলচাষিরা উৎপাদন কমিয়ে দেওয়ার কারণে দাম বেড়েছে মন্তব্য করে ইসলাম হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর চাষিদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ফুল বাগানেই নষ্ট হয়েছে। তাই এ বছর অনেকেই চাষ কমিয়ে দিয়েছে। আবার শীতের কারণে গাছে ফুল উৎপাদনও কম।
ভ্যালেন্টাইন ফ্লাওয়ার স্টোরের ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম বিশ্বাস বলেন, খুশি হবার মতো কিছু নেই। বিক্রি কম। এখনও তেমন কিছু আশা করি না। আগামীকাল দেখা যাক কী হয়। ফুলের দাম বৃদ্ধিতে আশাহত হচ্ছেন মৌসুম ফুল ব্যবসায়ীরা। ফরিদাবাদ থেকে আসা আরিফ বলেন, ভ্যালেন্টাইন এলেই এলাকায় বিক্রির জন্য দুই-তিনশ পিস গোলাপ নিয়ে যেতাম। কিন্তু এবার দাম অনেক বেশি। এই দামে এলাকায় কতটুকু ফুল বিক্রি হবে বলতে পারছি না। অপেক্ষায় আছি একটু কম পেলে নিয়ে যাবো কিছু ফুল। ক্রেতার হাতেও ফুল কমে গেছে। মুঠোভর্তি ফুলের বদলে হাতে শোভা পাচ্ছে বড়জোর দুই-তিনটি। কেউ কেউ দাম শুনে ফুল ছাড়াই দিবস উদযাপন করবেন বলে জানালেন।
পুরান ঢাকা থেকে শাহাবাগ ঘুরতে আসা এহসান বলেন, ফুলের দাম বেশি। তারপরও কিনতে হবে। ১০টা না পারি, দুটি তো কেনা লাগে। গার্লফ্রেন্ডের সামনে তো কিপটামি করা যায় না।
বর্তমান ফুলের বাজার এবং ব্যবসায়ীদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে দেশের ফুল ব্যবসায়ীদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, প্রতি বছর এসময় ফুলের দাম বেশি হয়। এবছর তুলনামূলক একটু বেশি। এর প্রধান কারণ কৃষকরা ফুল চাষ কমিয়ে দিয়েছে। আগে দুই একর জমিতে ফুল চাষ করলেও এখন এক একরে চাষ হচ্ছে। এছাড়া গ্লাডিওলাস ফুলের বীজ সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়েছে। যার কারণে কৃষকরাও আশানুরূপ উৎপাদন করতে পারেননি। ফুলের দাম বাড়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, চাহিদা থাকার কারণেই দাম বেড়েছে। এতে কৃষকরাও লাভবান হচ্ছেন। তবে খুচরা বিক্রেতারা সেই লাভটা পাচ্ছেন না।