রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ছাত্রজনতার দখলে রাজপথ, শ্রীমঙ্গলে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-সড়ক অবরোধ কবিরহাটে জমি সংক্রান্ত বিরোধে সন্ত্রাসী হামলা, আহত ৩ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসে আবারো হামলার শিকার টাকা না দেওয়ায় বাবাকে পিটিয়ে হত্যা, ছেলে গ্রেফতার কেশবপুরের টিটাবাজিতপুরে জমি জবরদখলকারী ও চক্রান্তকারীদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন অসুস্থ মাহমুদুর রহমান মান্না বিএসএমএমইউতে ভর্তি “বিএনপির নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করলে রুখে দেয়ার আহ্বান” নাজিরপুরে উপজেলা প্রকৌশলীর দুর্ণীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি নিয়ে কাজ করতে হবে: আবদুল হালিম জলঢাকায় ভোট চোর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ ও গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন ব্যস্ত সময় পার করছেন দুর্গাপুরের মৃৎশিল্পিরা

ভালো নেই সুন্দরবন

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অববাহিকায় গড়ে উঠেছে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবী চিত্রা হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল এই বন। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিজে ক্ষতবিক্ষত হয়ে উপকূলবাসীকে রক্ষা করেছে মায়ের মতো। উপকূলের কোটি-কোটি মানুষকে নিরাপদে রাখলেও নিজে ভালো নেই সুন্দরবন। জলবায়ু পরিবর্তন, পানির উচ্চতা বৃদ্ধি, পরিবেশ দূষণ, বন্যপ্রাণী শিকার ও কাঠপাচারকারীদের কারণে প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে পড়ছে সুন্দরবন।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, দেশের সংরক্ষিত বনভূমির ৫১ শতাংশ বনই হচ্ছে সুন্দরবন। প্রায় ৬ হাজার ১১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ বনে রয়েছে সুন্দরী, গেওয়া, গরান, পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছ। নদ-নদীতে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় তালিকায় থাকা ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন ও ২১০ প্রজাতির মাছ।
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বিষয়ে বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। ১৯৮২ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪২৫টি। ১৯৮৪ সালে সুন্দরবনের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়। ২০১৫ সালে ‘ক্যামেরা ট্র্যাকিং’ পদ্ধতিতে পরিচালিত জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয়েছে ১০৬টি। ২০১৮ সালে জরিপের ফলাফলে সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ১১৪টি।
২০০৪ সালের জরিপের তথ্য অনুযায়ী ৪৪০টি বাঘের মধ্যে খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় ৮৯টি পুরুষ, ১৭০টি স্ত্রী এবং ১২টি বাঘ শাবক, বাগেরহাটের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জ এলাকায় ৩২টি পুরুষ, ১২৮টি স্ত্রী এবং ৯টি বাঘ শাবকের অবস্থান জরিপে উল্লেখ করা হয়েছিল। অর্থ্যাৎ দেড় যুগেরও কম সময়ের ব্যবধানে ৩২৬টি বাঘ কমেছে সুন্দরবনে। আর কয়েক বছরে বেড়েছে মাত্র ৮টি বাঘ। তবে বর্তমানে সুন্দরবনের বাঘের আনাগোনা বাড়ছে। স¤প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের অবাধ বিচরণ ও প্রতিনিয়ত বাঘ শাবকের দেখা মিলছে বলে জানান সুন্দরবনের জেলে-বাওয়ালিরা।
হরিণ শিকারের বিষয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুন্দরবনে আবারও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে হরিণ শিকারিরা। তারা বনের মধ্যে ফাঁদ পেতে ও গুলি করে চিত্রা ও মায়া হরিণ শিকার করছে। পরবর্তীতে সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকায় মাংস, মাথা, শিং বিক্রি করে। এভাবে হরিণ শিকার করে বিক্রি করতে গিয়ে অনেকে ধরাও পড়েন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। সবশেষ ৯ ফেব্রুয়ারি মোংলা উপজেলার ডাংমারি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪২ কেজি হরিণের মাংস জব্দ করে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন। অপরদিকে সুন্দরবনের আশপাশের নদী-খালে বিষ দিয়ে মাছ শিকার বন্ধ করতে না পারায় মৎস্য ভা-ার খ্যাত নদী-খাল ক্রমশ মাছ শূন্য হয়ে পড়ছে। বিষ দেওয়ার ফলে শুধু মাছ-ই নয় মারা যাচ্ছে অন্যান্য জলজ প্রাণীও। বিরূপ প্রভাব পড়ছে বনজ সম্পদসহ পরিবেশের ওপর, স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দাদের। এই অবস্থায় জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ সুরক্ষায় দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান বনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
তবে সুন্দরবনজুড়ে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণের জন্য বন বিভাগ, কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এতেও দৌরাত্ম্য কমছে না অসাধু জেলে-ব্যবসায়ীদের।
এছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়, জলবায়ুর পরিবর্তন ও লবণাক্ততা বাড়াসহ আরও কিছু কারণে দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে কমছে সুন্দরীর সংখ্যা। অন্যদিকে বেশি লবণসহিষ্ণু গাছ বাড়ছে। এ অবস্থায় সুন্দরবনের পুরাতন জীববৈচিত্র্যে পরিবর্তন ঘটছে। সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের সৌন্দর্য হলো বন্যপ্রাণী। সেই বন্যপ্রাণী যারা নিধন করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কঠোর আইন না থাকায় প্রচলিত আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে তারা পুনরায় সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী নিধনে লিপ্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, বন্যপ্রাণী রক্ষায় সরকার সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ বনভূমিকে অভয়াশ্রম ও সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা করেছে। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের যে শর্ত, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে বাঘের প্রজনন বাড়বে। প্রজনন বাড়লে বাঘও বাড়বে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি পানি ও মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি। এর ফলে অপেক্ষাকৃত কম লবণসহিষ্ণু সুন্দরী, পশুর, গোলপাতা ও খলিসা গাছ কমছে। অন্যদিকে বেশি লবণসহিষ্ণু গরান, গেওয়া, কেওড়া, বাইন গাছ, কালিয়ালতা, গিলালতাসহ লতাগুল্ম বাড়ছে। এছাড়া বিষ দিয়ে মাছ ধরার ফলে খাদ্যচক্রেও ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।
র‌্যাব-৬ খুলনার অধিনায়ক (সিইও) লে. কর্নেল মুহাম্মদ মোসতাক আহমদ বলেন, দস্যুমুক্ত সুন্দরবন গড়তে র‌্যাবের ভূমিকা ছিল অনন্য। এছাড়া বন্যপ্রাণী রক্ষা ও পাচার প্রতিরোধ করতে র‌্যাব বদ্ধপরিকর। বন্যপ্রাণী রক্ষা ও অপরাধ দমনে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া লোকালয়ের যেখানে বন্যপ্রাণীর খবর পাওয়া যায় আমরা সেখান থেকে উদ্ধার করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, সুন্দরবন সুরক্ষা করতে বন সংলগ্ন এলাকার মানুষদের আমরা বিভিন্নভাবে সচেতন করছি। যাতে সুন্দরবনের ওপরে কোনো বিরূপ প্রভাব না পড়ে। এছাড়া বনের মধ্যে যেকোনো অপরাধ আমরা কঠোরভাবে দমন করি।
সুন্দরবন দিবস উদযাপন উপলক্ষে তিনি বলেন, এ বছর সুন্দরবন দিবসের প্রতিপাদ্যে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুন্দরবনকে ভালোবাসুন। প্রতি বছরই বিভিন্ন আয়োজন করা হয়। তবে করোনার কারনে দুই বছর ধরে কার্যক্রম অনলাইন আলোচনার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। -ঢাকা পোস্ট.কম




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com