বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

তিন দেশে ৭৮ লাখ টাকা পাচার করেছেন ক্যাসিনো সাঈদ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আলোচিত কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা এ কে এম মমিনুল হক সাঈদ ওরফে ক্যাসিনো সাঈদ সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ওমানে ৭৮ লাখ টাকার বেশি অর্থ পাচার করেছেন। অনুসন্ধানে টাকা পাচারের সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে সংস্থাটি।
দুদক বলছে, ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে দেশের টাকা বাইরে পাচার করেন সাঈদ। অবৈধ কর্মকা-ের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ পাচার করে মজতেন জুয়া বা ক্যাসিনোর নেশায়। অবৈধভাবে বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরতের চেষ্টা করছে দুদক। তিন দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরে পেতে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে কয়েক দফায় মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠায় দুদক। যদিও এখন পর্যন্ত ওই তিন দেশ থেকে কাঙ্ক্ষিত জবাব পাওয়া যায়নি।
এদিকে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় ৭৮ লাখ ১১ হাজার ৯৭৪ টাকা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ওমানে পাচার করে অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার অভিযোগে আসামি এ কে এম মমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় ১৩ ফেব্রুয়ারি চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুদক। সম্প্রতি এ চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অনুমোদিত চার্জশিটে মূল অভিযোগ ছিল পাঁচ কোটি ৬০ লাখ ৩৩ হাজার ২২৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের। দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় শিগগিরই আদালতে চার্জশিট জমা দেবেন দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা ও সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান সরকার।
চার্জশিটের বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তার সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন থেকে চার্জশিট দাখিলের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা ও সংস্থাটির সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের অভিযোগে সাবেক কাউন্সিলর সাঈদের বিরুদ্ধে কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়টি স্বীকার করলেও কোনো বক্তব্য দেননি তিনি।
দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মাধ্যমে দুদক নিশ্চিত হয়েছে যে মমিনুল হক সাঈদ অবৈধভাবে অর্জিত টাকা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও ওমানে পাচার এবং ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তদন্তে বেরিয়ে এসেছে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ক্যাসিনোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের বিভিন্ন সময় পর্যন্ত ৭২ হাজার ৭১৯ সিঙ্গাপুর ডলার ও ৬৮ হাজার ৫০০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত পাচার করেন। বাকি অর্থ ওমানে পাচার করা হয়।
এর আগে ২০১৯ সালের ২০ নভেম্বর ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বরখাস্ত হওয়া কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা এ কে এম মমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে চার কোটি ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৬১ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে মামলা করে দুদক। দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ মামলাটি দায়ের করা হয়। যদিও চার্জশিটে অবৈধ সম্পদের অর্থ বেড়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামি সাঈদ ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনাসহ বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা এবং অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ চার কোটি ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার ২৬১ টাকার সম্পদ অর্জন করে নিজের দখলে রেখেছেন।
এজাহারে বলা হয়, মমিনুল হক সাঈদ ২০১৮-১৯ করবর্ষে আয়কর নথিতে নিজের নামে এক কোটি ৫৪ লাখ ৫৬ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য দিয়েছেন। যার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে সাঈদের নামে দুই কোটি ৯৩ লাখ ১০ হাজার টাকা জমার তথ্য পাওয়া গেছে। সবমিলিয়ে চার কোটি ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয় মামলায়। এছাড়া স্ত্রী, সন্তান বা অন্য কারও নামে সম্পদ অর্জন করেছেন কি না- সে বিষয়েও তথ্য পাওয়া গেলে আমলে নেওয়া হবে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সাঈদের উত্থান হয় রাজধানীর মতিঝিলে। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ডিএসসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে প্রথমবারের মতো কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হন তিনি। বঙ্গভবন কলোনিতে বেড়ে ওঠা সাঈদ ২০১৫ সালে ওই এলাকার কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ঢাকার ক্যাসিনো বাণিজ্যের হোতাদের অন্যতম তিনি। ওই সময়েই ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসা চালু করেন তিনি।
সাঈদের ক্লাবে নিয়মিত ক্যাসিনো, জুয়া, মাদকের আসর বসত। ফকিরাপুল, আরামবাগ এলাকা নিয়ে ডিএসসিসির ৯ নম্বর ওয়ার্ড। তিন বছরের বেশি সময় ধরে এলাকার বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মাসওয়ারি চাঁদা তুলতেন। প্রভাব খাটিয়ে কমলাপুর স্টেডিয়াম ও গোপীবাগ বালুর মাঠে দুটি কোরবানির পশুর হাট বসাতেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ক্যাসিনো সাঈদ বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। ফেরার পার্ক এলাকার অভিজাত সিটি স্কয়ার রেসিডেন্সে বসবাস করছেন তিনি। ক্যাসিনো সম্রাট ইসমাইল হোসেন সম্রাটের শিষ্য বলা হতো তাকে। দুদক থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর এখন পর্যন্ত ক্যাসিনোকা-ের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও জি কে শামীমসহ শীর্ষ ২৪ জনের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা দায়ের করে সংস্থাটি।-ঢাকা পোস্ট




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com