কৃষি ও সবজির ভান্ডার খ্যাত শেরপুরে এবার প্রথমবারের মতো বিদেশি সবজি ব্রুকোলির চাষ শুরু হয়েছে। শ্রীবরদী উপজেলার তাতিহাটি এলাকায় কলেজ শিক্ষার্থী ছোবাহান আলীর করা ব্রুকলি সবজির আবাদও হয়েছে ভালো। আর তা দেখে স্থানীয় কৃষকসহ অনেকেই অবাক। স্বল্প খরচে স্বাস্থ্যসম্মত এ সবজি আবাদে লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনায় এলাকার কৃষকদের মাঝে বাড়ছে আগ্রহ।
সবুজ রঙের বিদেশি শীতকালীন সবজি ব্রুকোলি দেখতে অনেকটা ফুলকপির মতো। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ব্রুকোলি সিদ্ধ করে যেমন খাওয়া যায়, তেমনি স্যুপ, ভাজি, পাকোড়ায় দিলে খাদ্যের পুষ্টিমানও অনেক বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে স্বাদেও বৈচিত্র্য আসে। এতে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফোলেট ও আঁশ আছে। প্রথম দিকে ব্রুকোলি দেশের বড় বড় দোকানে পাওয়া গেলেও এখন এটি প্রায় সব বাজারেই মেলে। দিন দিন জনপ্রিয় হওয়া এ সবজির রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণও।
ব্যতিক্রমী ওই সবজি চাষ দেশে নতুন না হলেও শেরপুর অঞ্চলে তা প্রথমবারের মতোই হচ্ছে। আর তার চাষ শুরু করেছেন শ্রীবরদী উপজেলার শ্রীবরদী সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছোবাহান আলী। তিনি তার এক খ- জমিতে ব্রুকোলির পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে ক্যাপসিকামও চাষ করছেন।
সরেজমিনে গেলে কথা হয় ব্রুকোলির নতুন চাষি ছোবাহান আলীর সাথে। তিনি জানান, ইউটিউবে ভিডিও দেখে ব্রুকোলি সবজি চাষে আগ্রহী হন। প্রথমে তরমুজ চাষ করি। কিন্তু বীজ নষ্ট হওয়ায় ফসল হয়নি। পরে ইন্টারনেটে দেখে শখ জাগে ব্রুকোলি চাষ করার। তাই নিজের ১৩ শতাংশ জমিতে এ সবজি চাষ শুরু করি। এ জন্য খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। প্রথমবার ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। আশা করছি, খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকবে অন্তত ২০ হাজার টাকা। তবে ৪ দিনেই আয় হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। তিনি জানান, প্রতি ব্রুকোলি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে।
এদিকে ছোবাহানকে দেখে ব্রুকোলি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এলাকার অন্য চাষিরাও। স্থানীয় চাষি খলিলুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকায় এ বিদেশি ফসল হবে, আমরা আগে কখনও চিন্তা করি নাই। কিন্তু ছোবাহান চাষ করেছে। আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে। তাই সামনের বার আমিও ছোবাহানের মতো ওই ফসল চাষ করে আর্থিকভাবে সফলতার স্বপ্ন দেখছি।
কৃষক হাবিবুল্লাহ বলেন, সবজিটি দেখতে ভালো। প্রথমে আমি মনে করছি এটা ফুলকপি। কিন্তু এখন জানলাম এ সবজির অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। আর অন্য ফসলের চেয়ে লাভও ভালো। যদি কৃষি অফিস আমাদের চারা দেয়, তাহলে আগামীতে আমি একাই চাষ করবো।
শ্রীবরদী সদরের মামদামারী এলাকা থেকে ব্রুকোলি দেখতে আসা সরোয়ার বলেন, আমাদের এলাকায় এ ফসল আগে কখনও দেখা যায়নি। কিন্তু শুনলাম নতুন ফসল চাষ হয়েছে, তাই দেখতে আসলাম। এর আগে ব্রুকোলি কিনে খাই নাই। আজ একটা কিনে খেয়ে দেখব কেমন লাগে।
এ ব্যাপারে শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, এ অঞ্চলে প্রথমবারের মতো বিদেশি সবজি ব্রুকোলি চাষে এগিয়ে আসায় উপজেলা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তরুণ সবজি চাষি ছোবাহান আলীকে নানাভাবে সহায়তা করা হচ্ছে। আবাদ ভালো হওয়ায় সাফল্যও পাচ্ছেন তিনি। তার ওই সাফল্যে এখন এলাকার অন্যরাও আগ্রহী হয়ে উঠছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, অন্য সবজির চেয়ে পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ব্রুকোলি চাষে ব্যয়ের তুলনায় লাভের সম্ভাবনা বেশি থাকায় আগামীতে এ অঞ্চলে তার আবাদ অনেকটাই বাড়বে।
শেরপুর কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ড. মুহিত কুমার দে জানান, শেরপুরে ব্রুকোলি চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। ব্রুকোলি চাষ করে অল্প দিনে কৃষক সাবলম্বী হতে পারে। (বাসস)