আইসিসি ওয়ানডে নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেললে তাদের সকলের বহু কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা। বাংলাদেশ নারী দল তিনটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছে কিন্তু কখনো ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলেনি। তাই সুলতানার মতে, এটি নিয়ে তারা খুবই রোমাঞ্চিত এবং সবচেয়ে বড় মঞ্চে পারফর্ম করতে মুখিয়ে আছে। আইসিসির ওয়েবসাইটে একটি কলামে সুলতানা লিখেছেন, ‘আমরা এই সুযোগটি ভালোভাবে কাজে লাগাতে চাই এবং এটিকে গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি।’
বাংলাদেশ কখনোই ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডেতে খেলেনি। তাই এবার নতুন অভিজ্ঞতা হবে বলে জানান সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আমরা টিভি এবং ইন্টারনেটে তাদের অনুসরণ বা খেলা দেখে আসছি। কারণ আমরা জানতাম, একদিন আমরা তাদের বিপক্ষে খেলবো এবং আমাদের বিশ্লেষকরা আমাদের প্রস্তুতিতে সহায়তা করার জন্য তাদের শক্তি এবং দুর্বলতা সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন।’ মূলত ২০১৮ সালে এশিয়া কাপ জয়ের পর বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের চিত্র পাল্টে গেছে। ক্রিকেটপ্রেমিরা এখন আরো বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে, কারণ তারা জানে বাংলাদেশ নারী দলের ক্রিকেট খেলার সক্ষমতা আছে। এর আগে অনেকেরই বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ ছিল বা অজানা ছিল। তিনি বলেন, ‘এখন, মানুষরা আগ্রহ দেখাচ্ছে এবং তারা জানতে চায় আমরা কোথায় এবং কিভাবে খেলতে যাচ্ছি।’ সুলতানা আরো বলেন, ‘গণমাধ্যম এখন আগ্রহী হয়ে উঠেছে এবং আমাদের বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জনে পুরো জাতিই খুশি হয়েছে। আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সংবর্ধনার ছবি দেখতে পাচ্ছেন।’ সুলতানার মতে, বাংলাদেশ একটি ক্রিকেটপ্রেমী দেশ এবং তারা এখন নারী দলের সাথেও আছে। এটি কিছুটা চাপ বাড়ায়, তবে এটি ভালো চাপ। কারণ আমরা তাদের জন্যও ভালো করার ইচ্ছা অনুভব করি।
তিনি বলেন, ‘এই বিশ্বকাপটি আমাদের জন্য একটি বিশাল সুযোগ। কারণ আমরা দেখাতে পারবো আমাদেরও সম্ভাবনা রয়েছে এবং আমরা একটি দল হিসেবে উন্নতি করছি। আমরা এখানে ভালো করতে পারলে আরো দল আমাদের বিপক্ষে খেলতে আগ্রহী হবে, দেশে আরো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আসবে এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ঘরোয়া ম্যাচ বাড়ানোর চেষ্টা করবে।’ সুলতানার মতে, সেখান থেকে বোর্ড আরো তরুণ ও প্রতিভাবান ক্রিকেটার খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে। কেননা নতুন খেলোয়াড় বাড়াতে একটি পাইপলাইন প্রয়োজন রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেট বোর্ড অনূর্ধ্ব-১৯, অনূর্ধ্ব-১৭ এবং উদীয়মান দল নিয়ে কাজ করছে। তাই সেখানে অনেক ক্রিকেটার আছে, যারা আমাদের এখানে ভালো করতে আগ্রহী। কারণ তারা জানে আমরা ভালো করলে তাদের ভবিষ্যত আরো ভালো হবে।’ বর্তমান স্কোয়াডের মধ্যে ওপেনার মুর্শিদা খাতুন ও শারমিন আক্তার সুপ্তা কোয়ালিফাইয়ারে ভালো খেলেছে এবং তারা খুব ভালো ছন্দে আছে। যখনই আমাদের দলের প্রয়োজন ছিল তখনই রুমানা আহমেদ সবসময় আমাদের পাশে ছিলেন।
সালমা খাতুনকে বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে অভিহিত করে বাংলাদেশ অধিনায়ক আরো বলেন, ‘বোলিং আক্রমণে, আমরা একজন তরুণ পেস বোলার সুরাইয়া আজমিনকে যুক্ত করেছি। যাকে ক্রিকেট বিশ্ব এখনো খুব বেশি দেখেনি এবং বাঁ-হাতি বিকল্প হিসেবে আছেন ফারিহা তৃষ্ণা।’ আমাদের দলে তিনজন সাবেক অধিনায়ক আছেন- সালমা, রুমানা ও জাহানারা আলম। যারা আমাকে অনেক সাহায্য করছেন এবং আমি তাদের সব পরামর্শ গ্রহণ করছি।’ ক্রিকেটের উন্মাদনায় দেশকে নেতৃত্ব দিতে পেরে নিজে আনন্দিত নিগার সুলতানা। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রথম বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেয়া আমার জন্য ‘ব্যক্তিগতভাবে একটি দুর্দান্ত সুযোগ। এটা আমাদের সবার জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত হতে চলেছে।’ নিউজিল্যান্ডে আগামী মার্চ-এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় আসরটি হবে আইসিসি নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বাদশ টুর্নামেন্ট। এটি মূলত ২০২১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এক বছরের জন্য তা পিছিয়ে দেয়া হয়েছিল। সূত্র : বাসস