মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলো ৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস প্রধান উপদেষ্টাকে সংস্কার বিষয়ে অগ্রগতি জানালেন কমিশনপ্রধানেরা বৃটেনে অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন আপসানা হত্যা-গণহত্যাসহ গুমের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে ৮০টিরও বেশি অভিযোগ ৪ মহানগর ও ৬ জেলায় কমিটি অনুমোদন বিএনপির মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল জানা যাবে কখন? বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের নিপীড়িত ও নির্যাতিত জনগণের পাশে আছে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভারতীয় রাজনীতি তারাই তো নিজেরাই নিজেদের নিষিদ্ধ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে: গয়েশ্বর পাকিস্তানের ছোট লক্ষ্যেও হামাগুড়ি দিয়ে জয় অস্ট্রেলিয়ার

বিপিডিবি’র বছরে লোকসান ৮-১০ হাজার কোটি টাকা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

দেশের সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের একক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। সংস্থাটি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) নির্ধারিত মূল্যে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিদ্যুৎ কেনে। এ বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি করা হয় কম মূল্যে। শুধু এ বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ সংস্থাটির ইউনিটপ্রতি লোকসান হয় ৩-৪ টাকা করে। সব মিলিয়ে বছর শেষে মোট লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮-১০ হাজার কোটি টাকায়। পরিস্থিতিকে আরো সঙিন করে তুলছে অলস বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার চার্জ হিসেবে পরিশোধিত অর্থ। দেশে বর্তমানে ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এর বাইরে ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট। তবে এ সক্ষমতার মাত্র ৩৯ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। সে হিসাবে দেশে বিদ্যুতের দৈনিক ব্যবহার হচ্ছে সাড়ে ৯ থেকে ১০ হাজার মেগাওয়াটের মতো। বাকি সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই বিপিডিবির কাছ থেকে সক্ষমতা বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ নিচ্ছে। এ বিপুল পরিমাণ ব্যয়কে বিশেষজ্ঞরা দেখছেন অপচয় হিসেবে। বছরের পর বছর বিদ্যুৎ কেনাবেচায় বিপুল পরিমাণ লোকসানের পাশাপাশি এ নিষ্ফল ব্যয় প্রতিষ্ঠানটিকে আর্থিকভাবে নাজুক অবস্থানে এনে ফেলেছে। ঋণ পরিশোধ দূরের কথা, স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনাই সংস্থাটির জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এখন সরকারের ভর্তুকি ও ঋণের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ চাপ কমাতে গিয়েই আগের বছরগুলোর দেনাকে এখন ভর্তুকিতে রূপান্তর করতে চায় সংস্থাটি।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বেশ কিছুদিন আগে এ ঋণ অনুদানে পরিণত করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে সেটি যেকোনো কারণে ঝুলে রয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জনগণের সুবিধার্থে বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিক্রি করা হয়েছে। তাই এ বিশাল পরিমাণ ঋণ পিডিবির ওপর চাপ তৈরি করেছে। এটা পরিশোধ করা সংস্থাটির পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এ ঋণকে অনুদান বা ভর্তুকিতে রূপান্তরিত করতে হবে। এজন্য আমরা এ প্রস্তাব পাঠিয়েছি।
অন্যদিকে এ ঋণের অর্থকে ভর্তুকিতে রূপান্তরের কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করছে অর্থ বিভাগ। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, বিপিডিবি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এ বিষয়ে বৈঠকের মাধ্যমে যৌক্তিক কোনো সমাধানে আসা প্রয়োজন। কিন্তু বিপিডিবি কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের এ বিষয়ে তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। তাই এ বিষয়ে কোনো সমাধানও আসছে না। এমনকি অর্থ মন্ত্রণালয় বারবার তাদের প্রস্তাব নাকচ করলেও বিপিডিবি কিংবা বিদ্যুৎ বিভাগ এ বিষয়ে নতুন কোনো প্রস্তাব পাঠাতে পারছে না। তাই বিষয়টি বছরের পর বছর ঝুলে রয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বিপিডিপির ঋণ ভর্তুকিতে রূপান্তরিত করার জন্য কয়েকবার প্রস্তাব এসেছে। কিন্তু কোনোভাবেই এসব ঋণকে ভর্তুকিতে রূপান্তরিত করার সুযোগ নেই। তাই বিষয়টি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। এমনকি বিশ্বের কোনো দেশে এমন কিছুর প্রচলন নেই। তার পরও বারবার এ প্রস্তাব দিচ্ছে বিপিডিবি এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
সংস্থাটির একটি সূত্র বলছে, সরকারের ভর্তুকিকে হিসাবে নিয়ে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে বিপিডিবির কেনা বিদ্যুতের গড় ক্রয়মূল্য ইউনিটপ্রতি ৫ টাকা ৬৪ পয়সা। তবে বছর শেষে এ ক্রয়মূল্য আরো বেড়ে দাঁড়াতে পারে সাড়ে ৮ টাকা করে। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিক্রি বাবদ লোকসানের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকায়। এর মধ্যে আবার যদি গ্যাসের মূল্য বাড়ানো হয়, তাহলে এ লোকসানের পরিমাণ আরো বাড়বে। চলতি অর্থবছরে শুধু সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এ দুই মাসেই প্রায় সোয়া ৪ হাজার কোটি টাকা ট্যারিফ ঘাটতিতে ছিল বিপিডিবি।
সরকারকে এখন সংস্থাটির এ বিপুল পরিমাণ লোকসান থেকে রক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, সরকারকে এখন সংস্থাটিকে রক্ষা করতে হবে। এক্ষেত্রে বিপুল অংকের এ ঋণ সরকার ভর্তুকি বা ইকুইটি হিসেবে দিতে পারে। এ টাকা থেকে সরকার এখন কোনো কিছু আশা করতে পারবে না। কারণ বিদ্যুৎ খাত পরিচালনা করতে গিয়ে এ অর্থ ব্যয় হয়েছে। একই সঙ্গে আগামীতে যাতে পিডিবি আর ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেজন্য সরকারকে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি, বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা এবং আইপিপি খাতের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) এ পর্যন্ত মোট লোকসানের পরিমাণ সাড়ে ৫১ হাজার কোটি টাকার বেশি। সংস্থাটিকে এর পুরোটাই ভর্তুকি বা ঋণ হিসেবে দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে শুধু ২০০৬-০৭ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যেই বিপিডিবিকে ঋণ হিসেবে ৪৩ হাজার কোটি টাকার বেশি দিয়েছে সরকার। পাহাড়সম এ ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না সংস্থাটি। আবার এ ঋণের কারণেই বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে পারছে না বিপিডিবি। বিপাকে পড়ে এ ঋণকে ভর্তুকিতে রূপান্তরের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। এ নিয়ে অর্থ বিভাগের কাছে কয়েক দফায় চিঠিও দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এ বিষয়ে বিপিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বহুজাতিক কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে গেলেই সংস্থাটির বিপুল পরিমাণ ঋণের বিষয়টি বড় ধরনের ইস্যু হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ঋণগ্রস্ত বিবেচনায় বিপিডিবির সঙ্গে যেকোনো চুক্তির প্রস্তাব থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে জ্বালানি খাতের আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো। ব্যাহত হচ্ছে বিপিডিবির অর্থনৈতিক অগ্রগতি। এ অবস্থায় ঋণের অর্থকে ভর্তুকিতে রূপান্তরের কোনো বিকল্প দেখতে পাচ্ছে না সংস্থাটি। যদিও এ বিষয়ে অর্থ বিভাগ বলছে, ঋণের টাকা ভর্তুকিতে রূপান্তরের কোনো সুযোগ নেই। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো বসে এ বিষয়ে সমাধান বের করতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে ২০১৭ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে বিদ্যুৎ খাতে কোনো ভর্তুকি দেয়া হয়নি। ওই সময়ে বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয়ে প্রয়োজনীয় অর্থের ঘাটতি পূরণ ও উন্নয়ন ব্যয় নির্বাহের জন্য বিপিডিবিকে ভর্তুকির পরিবর্তে ঋণ দিয়েছে সরকার। এ ঋণের মোট পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ১৬০ কোটি ১২ লাখ টাকায়।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সরকারের কাছে যে ঋণ রয়েছে, তা পরিশোধ করার সক্ষমতা বিপিডিবির নেই। তাই এ ঋণকে ভর্তুকিতে রূপান্তরের জন্য অর্থ বিভাগকে কয়েকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু অর্থ বিভাগ বিষয়টি তাদের নীতিমালায় নেই বলে জানিয়েছে। এ কারণে ঋণের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। এবারো আমরা অনুরোধ জানিয়েছি অর্থ বিভাগ থেকে যে টাকা দেয়া হবে, সেটি যাতে ভর্তুকি হিসেবে দেয়া হয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com