রবিউল ইসলাম। বয়স (৪৪) কোঠায়।বাড়ি কৈমারী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড বিন্যাকুড়ি গ্রামে। তার পিতা মৃত জহির উদ্দীন। বর্তমানে তিনি পৌর শহরের একটি দোকানে সেলস্ ম্যান হিসাবে মাসিক বেতনে কর্মরত আছেন।রবিউল ইসলাম ছোট কাল থেকে স্বপ্ন দেখতেন তিনি নিজ বাসায় গৃহপালিত পশু পালন করে নিজের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যের কর্মসংস্থান তৈরী করার।এ স্বপ্ন যেন রবিউলকে তারা করে সর্বক্ষন। তাই তো স্বপ্ন বাস্তবে রুপান্তরিত করতে নিরলশ প্রচেষ্টার মাধ্যমে এবং বৈবাহিক জীবনে অনেকটি কাঁঠখড় পুড়িয়ে নিজের উদ্দ্যোক্তায় নিজ বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন ক্ষুদ্র হাঁসের খামার।সেই স্বপ্নের খামারে ৫০টি হাঁসের ছানা দিয়ে শুরু করেন স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্নশিড়ি। গত ২ বছর ধরে নিজ প্রচেষ্টায় সেই স্বপ্ন চুড়ায় উত্তির্ন হতে পেরেছেন তিনি। নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি অন্যের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন খামারি রবিউল ইসলাম। সফল উদ্দ্যোগতা রবিউল ইসলাম বলেন, হাঁসের খামারে এ পর্যন্ত আড়াই লাখ টাকা খরচ করেছি এবং বাড়ির উঠানে পুকুর খনন করে সেই হাসের পর্যাপ্ত ভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ করে দিয়েছি। খামারের যাবতীয় কাজ নিজে করে থাকি। আমার এ হাঁসের খামারের পরিচর্যায় সহায়তা করেন স্ত্রী ফেন্সি বেগম। রবিউল ইসলাম জানান, ভোরের পর থেকে ১০টা পর্যন্ত হাঁস ছানাদের দেখভাল করে আমি কর্মস্থলে যাই। এর পর স্ত্রীই ছানাদের দেখভাল করেন। এতে অনেক পরিশ্রম হয়। তিনি জানান প্রতিদিন ১ হাজার টাকার খাদ্য লাগে পালিত হাঁসদের খাওয়াতে। হাঁস গুলোকে প্রত্যেহ দুই তিন বেলা দিতে হয় ধান, গম, কুড়া, ফিট, খৈল, ছোলার ভুষি, খেসারির ভাঙ্গা ভুষি ও ঝিনুকের চুনখাওয়ানো হয়। প্রথমে ৫০ টি হাঁসের ছানা দিয়ে শুরু করা হলেও বর্তমানে আমার খামারে রয়েছে প্রায় ৫ শত ৫০টি হাঁস। রবিউল ইসলাম বলেন, সর্বদা পরিচর্যার মধ্যে রাখতে হয় হাসদের। তা না হলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় হাঁস গুলো। গত কয়েক সপ্তাহ আগে শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১শতটি হাঁস মারা যায়। এতে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি সাধন হয়েছে। এখন ৩ শত ৫০টি মত হাঁস খামারে রয়েছে। বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন খামার থেকে ১শত ৯২টি ডিম পাচ্ছি। ডিমের হালি প্রতি ৫০/৫২ টাকা দরে প্রত্যহ প্রায় ২৫ শত টাকা ডিম বিক্রি করে পাচ্ছি। যা দিনে সংসারের দৈনদৈনিক চাহিদা মিটিয়ে হাঁসের পরিচর্যার ব্যায় মেটাতে সক্ষম হচ্ছি। খামারি রবিউল বলেন, আমার এই খামারের ডিম থেকে কিছুটা হলেও এলাকায় পুষ্টির অভাব পুরণ করে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চাহিদা মেটাতে পেরেছি । রবিউল ইসলাম আশাবাদী স্থানীয় প্রানীসম্পদ ও পশু হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন পরামর্শ সহ সার্বিক সহযোগিতা পেলে আমার ক্ষুদ্র খামারকে বৃহত্তর করার সুযোগ পেতাম। গত শনিবার বিকেলে সরজমিনে জলঢাকা পৌরশহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বিন্যাকুড়ি গ্রামের হাঁসচাষী রবিউল ইসলামের বাসায় গিয়ে দেখা যায়। শত শত হাঁসের কৌতহলি। শত শত হাঁসছানারা দল বেঁধে পুকুরে ছোটাছুটি করছেন। প্রানবন্ত ও উম্মুক্ত পরিবেশে হাঁসছানারা পুকুরের পানিতে সাঁতার কেটে খেলছেন। প্রয়োজনীয় খাদ্যের জন্য কিচির মিচির করছেন। আর হাঁসদের এমন কিচির মিটির শব্দে হাস্যরসে স্বপ্নসিড়িতে পৌছানোর হাতেঘড়ি চাবি খুজছেন রবিউল ইসলাম। বড় একটি বালতি করে হাঁসদের খাবার নিয়ে আসতে আসতে মৃদু হেসে রবিউল ইসলাম বলেন, এ সব হাঁস ছানা নয়। যেন আমার লালিত পালিন সন্তান। ক্ষুদ্র আকারে নিয়ে এসে নিজ যতেœ তাদের আমি বড় করি। এরাই আমার ভাগ্য উন্নয়নের স্বপ্নসিড়ি। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা জানায়, ডাঃ ফেরদৌসুর রহমান বলেন, রবিউল ইসলামের মত উদ্দ্যোগতাদের জন্য প্রানীসম্পদ বিভাগ সহযোগিতা করতে সব সময় প্রস্তূত। আমরা আমাদের অফিসের মাধ্যমে কারিগরি সহযোগিতা প্রদান করা এবং হাঁসের টিকা প্রদানের পরামর্শ সহ ফ্রী টিকা সরবরাহ করা হবে। এছাড়াও রবিউল ইসলাম সহ সকল হাঁস খামারিদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা সহ কারিগরি প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা এ দপ্তরে রয়েছে।