রমজান মাসের আর বেশি দেরি নেই। এ মাসকে সামনে রেখে দেশে তেল চিনি ছোলা ডালসহ কয়েকটি পণ্যের চাহিদা বাড়ে। ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরই এ সময় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ান। এবার যোগ হয়েছে বৈশ্বিক মহামারির প্রভাব। বিশ্ব বাজারের দোহাই দিয়ে দেশে সব পণ্যের দাম পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। টিসিবির ন্যায্যমূল্যের ট্রাকের সামনে বড় হচ্ছে মানুষের লাইন। এর মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম আরেক দফা লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়ানোর তোড়জোড় চলছে। পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে (বিটিটিসি) জমা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সচিব নূরুল ইসলাম মোল্লা স্বাক্ষরিত প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গত ১৮ নভেম্বর সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান লিটারপ্রতি ১৭২ টাকা মূল্য পুনর্র্নিধারণের প্রস্তাব করা হয়। ওই প্রস্তাবের আলোকে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ১৬৮ টাকা পুনর্র্নিধারণ করে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববাজারে দাম বিবেচনায় প্রতি লিটারের দাম ১৮৬ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। ওই প্রস্তাব অনুযায়ী ১৯ ফেব্রুয়ারি তা কার্যকর করার কথা ছিল। ভোক্তা সাধারণের কথা বিবেচনায় নিয়ে তা কার্যকর করা হয়নি। কিন্তু বর্তমানে দেশের ভেতরে পণ্যের দাম বিবেচনায় গত ৩ ফেব্রুয়ারির প্রস্তাব বিবেচনার বিকল্প নেই। বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং ভোক্তার কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রস্তাবিত দাম থেকে ৬ টাকা ছাড় দিয়ে লিটারপ্রতি ১৮০ টাকা নির্ধারণ করে ১ মার্চ থেকে কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন।
উৎপাদন ও পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৫৭ টাকা, এক লিটারের বোতল ১৮০ টাকা, ৫ লিটারের বোতল ৮৭০ টাকা ও এক লিটার পাম তেল ১৫০ টাকা নির্ধারণের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে। তাঁরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপ্রত্যাশিতভাবে ভোজ্যতেলের দাম বাড়ায় দেশের বাজারেও দাম বাড়বে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেলের দাম ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৭২৫ মার্কিন ডলার এবং পাম তেল ১ হাজার ৬৯০ থেকে ১ হাজার ৭১০ মার্কিন ডলারে বিক্রি হচ্ছে। এই মুহূর্তে তেল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলা না হলে ভবিষ্যতে ভোজ্যতেলের সরবরাহ সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর।
এদিকে দুই দিন আগে পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে প্রতিমণ খোলা সয়াবিন তেলের দাম উঠেছিল ৬ হাজার ২০০ টাকা, যা আজ রোববার বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ২০ টাকায়। সুপার পাম আগে বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ১০০ টাকা। যা আজ বিক্রি হতে দেখা গেছে ৫ হাজার ৯২০ টাকা। পাম তেল বিক্রি হয়েছিল ৬ হাজার টাকা, যা আজ বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৭৯০ টাকা। মৌলভীবাজারের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুই-তিন দিন আগে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছিল। বিশেষ করে গত বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ দামে বিক্রি হয়। তবে পরদিন দাম কমে যায়। তিন-চার দিন ধরে বাজার ওঠানামার মধ্যে রয়েছে। তবে মিলগুলো দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিলে বাজারে প্রভাব পড়বে বলেই মনে করেন তিনি। আন্তর্জাতিক পণ্যবাজার সম্পর্কিত পোর্টাল ইনডেক্স মুন্ডি ডটকম সূত্রে জানা গেছে, গত অক্টোবরে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৪৮৩ ডলার। তবে নভেম্বরে কিছুটা কমে বিক্রি হয় ১ হাজার ৪৩৯ ডলার। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারে টনপ্রতি দাম কমেছে ৪৪ ডলার। ডিসেম্বরে প্রতি টন বিক্রি হয়েছিল ১ হাজার ৪১৯ ডলার এবং জানুয়ারিতে ১ হাজার ৪৬৯ ডলার। বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মাওলা বলেন, ‘সয়াবিন তেল মূলত আমদানির ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে দেশের বাজারেও প্রভাব পড়বে।’ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, আগে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১৪৩ টাকা, যা বর্তমানে ১৫৭ টাকা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব অনুযায়ী এক লিটারের বোতলের দাম ১৮০ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৬৮ টাকায়।